আমাদের
এক পড়শির বাসাতে একজন মানুষ বছরে প্রায় দু-তিনবার আসতেন , বিশেষত কোন এক বৃহস্পতিবার অথবা শাহজালালের দরগাতে উরুসের সময়কালে । নাম
তার মন পীর , লম্বা দাড়ী , লম্বা চুল , ফতুয়ার অনাধুনিক ভার্সন ছিলো তার পোষাক , পায়ে সু এর মতো প্লাস্টিকের জুতা । কথা
কম বলতেন , নিয়মিত বিড়ি ফুকতেন আর ভাব জমিয়ে কল্কিতে দম নিতেন । উনার
ছিলো কিছু সেবায়েত , পুরুষ আর মহিলা না'ইবা আলাদা করলাম । উচা
লম্বা এই মানুষটাকে ঘিরে আমার ছিলো কৌতহল , কিছু ভয়ও ছিলো ! উনার থেকে জানা গেলো , শয়তান সমস্ত পৃথিবীতে মুত্র বিসর্জন করায় তিনি আর নামাজ কর্ম এই জমিনে সারেন না । ঠাটানো
এই যুক্তির পর কি আর বলার থাকে ? অফ গেলাম ...
আরো
অনেক কে দেখেছি এই জীবনে , যত সামান্য পড়েছি , কতো বাবা দেখেছি ! জীবন আমার ধন্য !
হাল
আমলের সেক্যুলার বাবাদের দেখছি , বিশাল বিশাল পদবীর পীর সাহেবদের দেখেছি , জীবন আমার ধন্য গো ...
আমাদের
পাড়ার পশ্চিম-উত্তর কোণের হিন্দু বাড়ীর গণেশ ভাইকে দেখেছি যিনি মানষিক বিকারগ্রস্থ হয়ে আমাদের সাথে জুমার নামাজে দাড়িয়ে যেতেন । জানিনা
উনি কাকে খুজতে ম্লেচ্ছদের মসজিদে আসতেন ?
রাণু
কাকার পরিবারের সাথে আমাদের খুব ভাব , আমরা তার পাক ঘরে অচ্ছুত কিন্তু আমাদের ভালোবাসাতে , শ্রদ্ধাতে কিংবা উতসবে অথবা বাহারী খাবার থেকে দু-পক্ষের কেউই বঞ্চিত নই । পাড়ার
এক দুস্টছেলে রাণু কাকার শালীর প্রেমে পড়তে চাইলে আর তা উনাদের পছন্দ না হওয়াতে আমরা ( এলাকার মুরুব্বী গ্ণ ) ছেলেটিকে সামাজিক শাষণ করে দেই । আমাদের
মনে কোন দিনও আসেনি যে তারা হিন্দু তাই তাদের সাথে বৈরী ভাব করতে হবে । আমাদের
সেই রাণু কাকা চমতকার নজরুল গীতি করতেন । মিন্টু
ভাই লীগের রাজনীতি করতেন , খেলায় বা আলোচনায় জালিয়াতি করতেন , আমাদের সাথে জমিয়ে আড্ডাও দিতেন , শান্ত ছিলো জলি বয় আর আমাদের স্পিনার , সাধন কে নিয়ে নির্দোষ আনন্দ করতে কেউ ছাড়তো না , ওর একটি ছোট বোন ছিলো আমরা সবাই স্নেহ করে আলাপ করতাম , আমার বোনের পাশের বাসার ছোট মেয়ে পূজা , সারাদিন আমাদের বাসা নতুবা আপার বাসায় থাকতো । কাঠের
কাজ করতেন এক ভদ্রলোক , নাম ভুলে গেছি , আব্বা তার ব্যাবহারের প্রশংসা করতেন , আমি ছোট বেলায় চুল কাটতে এক ভদ্র লোকের কাছে যেতাম , আব্বার প্রিয়ভাজন ছিলেন তিনি , আমার চুল ছোট করে ছেটে দিতেন আর চেয়ারে কাঠের পিস দিয়ে আমায় বসতে দিতেন তাই আমার কাছে প্রিয় ছিলেন না । অসুস্থ
হলে আব্বা এক হোমিও ডাক্তারের কাছে নিতেন যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন তিনি । আমি
দিন রাত খেটে ক্যাম্পাসের সিনিয়োর বিশ্বজিত দাশ কে ছাত্র লীগের নেতা করেছি , সে এর বদলা সাইকেল চুরি করে আমাদের মুখ উজ্জল করেছে । আমার
বোনকে এক সময় পড়াতেন দিলেশ নামের খুবই ভদ্র একজন মানুষ । আমি
নিজেও পুলিশ লাইন স্কুলের অঞ্জন কুমার কর স্যারের কাছে পড়েছি ... আমার প্রাণী বিদ্যার প্রেফেসর রঞ্চিত কুমার বণিক স্যার আজো আমার স্মৃতিতে প্রিয় হয়ে আছেন । এই
হলো আমাদের সাম্প্রদায়িক সমপ্রীতি । আরো
কতো জনের নাম যে করা যাবে তাতে এই লিখা বিরক্তিকর দীর্ঘতা পেয়ে যাবে । এই
লিখার সকল চরিত্র বিশ্বাসের দিক থেকে হিন্দু । হিন্দু
বলে ভালোবাসা যেমন বাড়েনি তেমনি কখনো কোনদিনও ঘৃনা আসেনি । আমরা
মানুষ আর সতীর্থ হিসেবে বেচে ছিলাম । আমার
রাজনীতিক জ্ঞান বিকাশ হবার পর পআওয়ামীলীগের প্রচারনাতে প্রথম জেনেছি হিন্দুদের কেউ হিন্দু হবার কারনে নির্যাতন করছে । এরপর
ইন্টেলেকচুয়ালের ভেকদারী কিছু ইসলামোফোবিক কে এই প্রচারণায় হাওয়া দিতে দেখেছি । খুজতে
গিয়ে দেখেছি , এটি খুবই রেয়ার কেইস ছাড়া ব্যাক্তির প্রতি ব্যাক্তির বিদ্বেষ বা লোভ-লালসা কিংবা পলিটিক্যাল স্টান্ট ছাড়া কিছুই না , যা মুসলমানের বেলাতেও ঘটে । সারমর্ম
করলে দাড়ায় দরীদ্র কিংবা দুর্বলের প্রতি ক্ষমতার দ্বন্দের নোংরামো ছাড়া কিছুই নয় ।
No comments:
Post a Comment