বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুনের দশেরার রাবণ আমাদের ছাত্র সমাজ।
রাবণ তো মারা যায় ফি বছর কিন্তু রাবণ এর কারখানা যেমন ছিলো তেমনি থাকে। সেই মায়া
নগরীর নাম কেউ মুখে নেয়না, তাই এর নাম-ঠিকানা কেউ জানেনা, এট লিষ্ট কেউ বলেনা।
১৯৭১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে
১৫৪ ছাত্র খুন হয়েছেন। গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭.১১ জন খুন হয়েছেন। এর মাধ্যে,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
৭৪ জন খুন হয়েছেন,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে
খুন হয়েছেন ২৯ জন,
বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছেন
১৯ জন,
জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছেন
৭ জন,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
খুন হয়েছেন ২জন,
বাংলাদেশ প্রকৌশল
বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) খুন হয়েছেন
২ জন,
মাওলানা ভাসানী
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছেন ১ জন, এবং
হজরত
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছেন ১ জন।
আওয়ামী
লীগের টানা গত ১০
বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ জন শিক্ষার্থী
খুন হয়েছেন। আমার এই
কথা বলার সাহস নেই যে সরকার বাহাদূর ব্যার্থ কিন্তু এই কথাও মানতে পারিনা তামাদি
হয়ে যাওয়া বিএনপি বা গর্তে হারিয়ে যাওয়া জামায়াত এই দুই ডর্জন তাদের আমলনামা।
এককালে খ্যাতিমান ক্রিকেটার আশরাফুলও মনে হয় এখন আর ২৪ রান করতে পারেনা। আর
আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ হাতেম তাই বা দানবীর মুহসিনও নয় তাই এই ২৪ এর বেশীর ভাগই তাদের
নিজের অর্জন হিসেবে কুক্ষিগত করে রেখেছেন।
প্রশ্ন হলো, খুনিরা কি আগে থেকেই জানেন রাষ্ট্রপতি তাদের কে
ফাঁসি থেকে মাফ করে দেয়া ৩০ জনের মতো করে ছেড়ে দেবেন?! কেন এমন তরো কথা বলছি? চলুন
দেখে আসি কিছু খুনের বিচারের হালহকীকত ...
১৯৭৪ সাল, ৪ এপ্রিল...
ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীরা সূর্য সেন হলের
৬৩৫ নম্বর কক্ষ থেকে
ছাত্রলীগের নেতা কোহিনুরসহ চারজনকে এবং অস্ত্রধারীদের আরেকটি
দল ৬৪৮ নম্বর কক্ষ
থেকে আরও তিনজনকে ‘হ্যান্ডস
আপ’ করিয়ে নিয়ে আসেন
মুহসীন হলের টিভিরুমের সামনে। রাত
২টা ১১ মিনিটে ওই
সাতজন ছাত্রকে লক্ষ্য করে ‘ব্রাশফায়ার’
করেন তাঁরা। বংগবন্ধুর পুত্র জনাব শেখ ফজলুল হক মনির সমর্থকদের হত্যার বিচার হলেও এর প্রধান একিউজড শফিউল
আলম প্রধান কে
১৯৭৮ সালে মুক্তি দিয়ে
অবিচারের নতুন যাত্রা শুরু করেন জিয়াউর
রহমান।
বিচার পাওয়া যায়নি,
আজও !
১৯৮৭ সালে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ
কোন্দলে খুন হন বাবলুসহ
আরও অনেকে।
বিচার পাওয়া যায়নি,
আজও !
১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের
সময় সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল করছিলেন ছাত্র
ইউনিয়ন নেতা মঈন হোসাইন
ওরফে রাজু ও তাঁর
বন্ধুরা।
বিচার পাওয়া যায়নি,
আজও !
২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি
আওয়ামী লীগ আমলে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে
ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন আবুবকর
নামের এক শিক্ষার্থী।
বিচার পাওয়া যায়নি,
আজও !
২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
এস এম হলে শিবির
কর্মীদের হাতে খুন হন
ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক এবং লতিফ হলের লিপু
নামের ছাত্রলীগের আরেক কর্মী।
বিচার পাওয়া যায়নি,
আজও !
২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছাত্রলীগের কর্মীদের নির্যাতনে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মী অনার্স শেষ
বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ নিহত হন।
বিচার পাওয়া যায়নি,
আজও !
২০১৬ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়
কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী
হত্যা। খুনের আসামি সেই
ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা।
বিচার পাওয়া যায়নি, আজও !
এই চিত্রে আওয়ামীলীগ- বিএনপি নির্বিশেষে যেই
ক্ষমতায় থাকুক না কেন বাস্তবতায় বা বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে কোন ফারাক আসবেনা।
জামায়াত আসলে হবে কি? তার উত্তরও না। ক্ষমতার অতি উচ্চ আসনে সমাসীন ঐ মহামানবেরা
ছোটলোক, ছোটজাত, আমপাব্লিকের ঘামে, রক্তে স্নান করে, তৃষ্ণা মিটিয়ে বেচে থাকেন।
তারা বড় মুখে, কিতাবি ভাষায় এই ছোটলোক, ছোটজাত, আমপাব্লিকের ছাত্র সন্তানগুলোকে
রাজনীতির পাশা খেলায় ব্যাবহার করেন কিন্তু স্বীকার করেন না তারা তাদের রাজনীতির
মোহরা, কখনো কখনো লাঠিয়াল বা কখনো কখনো শীল্ড। উনারা এদের পোষেন কুরবানি করতে, বলি
চড়াতে। এই গুণ্ডামির রাজনীতির সিড়ি বেয়েই এসেছেন পিতা, এই গুণ্ডামিতে ভর করে বেচে
ছিলেন পতি। স্ত্রী বা কন্যা ছেড়েছেন চোখের
লজ্জাও যা অন্তত তাদের ছিলো। রাবণ জ্বালাতে জ্বালাতে যদি কোন একদিন কোন এক হায়দার ছোটলোক,
ছোটজাত, আমপাব্লিকের ঘাড়ের উপর যে নেক্সাস ফাঁস হয়ে আছে তাতে একটু আগুন লাগিয়ে দেয়
তবেই হয়তো এই অভাগা জাতীর রাবণেরা মুক্তি পাবে।
জয় রাবণের জয়।
No comments:
Post a Comment