Tuesday 13 December 2011

আমার আমি - ০৭

ভরা এক বর্ষার ঢলে আমি মুক্তি পেয়ে ভেষে আসি, সাথে নিয়ে অভিযোগের পাহাড়। আমার বাবা ঠিক নিতে পারছিলেন না, সমাজে সম্মানিত, ওরাছাতুল আম্বিয়াদের অবিস্বাস করবেন না আমাকে বিশ্বাস করবেন... আমার তাতে কিছু যায় আসে না, আমি মুক্তি পাচ্ছি, এটিই আমার কাচ্ছে স্বপ্ন মনে হচ্ছিল। আমাদের সাথে বাবার এক বন্ধুও ছিলেন। ক্ষোভে কাতর আমার বাবা আমায় বকছিলেন, পড়াবেন না, আজে লাগিয়ে দেবেন, আমি বেয়ারা, বলে নিজের রাগ ঝারছিলেন। আবার এখন কি করতে চাই তা ওনার বন্ধুর মাধ্যমে জানতে চাইছিলেন। অবশেষে বাবার সেই বন্ধুর পরামর্শে ঠিক হলো আমায় এবারও মাদ্রাসায় ভর্তি করা হবে, আমায় জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো কোথায় পড়তে চাই, আমি সাহস করে বলতে পারিনি, আমি আর মাদ্রাসায় যেতে চাইনা। আমায় মুক্তি দাও ! না, আমার মনের কথা শূনেনি সর্বজ্ঞাতা,পরম শ্রোতা কিংবা আমার বাবা...সেই সময় ভাবতাম এই আমার নিয়তি। এবার আমি আরেক নতুন জগতে, নতুন ধারায়, আমি ভর্তি হবো আলিয়া মাদ্রাসায়।
সিলেট শহরে সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা থাকলেও আমায় ভর্তি করা হলো শহরের বাইরে অজপাড়া এক গায়ের মাদ্রাসায়। এর বিশেষত্ব এখানে ছাত্র রাজনীতি নেই বিশেষত শিবির নামের আতঙ্ক সেখানে নেই, এক পীর সাহেব এর প্রতিষ্ঠাতা, পড়াশুনার মান ভালো।
বাস চড়ে,টেম্পু করে, চলে এলাম এক নদীর ঘাটে। আমি গাছ বাইতে জানিনা, সাইকেল চালাতে জানিনা আর জানিনা কিভাবে সাতার কাটতে হয়। ডুবে মরার ভঁয় নিয়েই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সাহেবের অফিসে এসে পৌঁছলাম। প্রিন্সিপাল সাহেব আমায় দাড়ি কাটতে পারবোনা ( আমার দাড়ি তখনো উঠেনি ), চুল ছেটে রাখতে হবে ( কওমি মাদ্রাসায় ন্যাড়া করে রাখতে হতো ), তাবলীগে নিয়মিত যেতে হবে জানালেন। অতপর একজন শিক্ষক আমার যোগ্যতা যাচাই করে ক্লাস সেভেনে ভর্তি করালেন। বছর শেষ হতে মাস তিনেক বাকি, আমায় প্রমান করতে হবে অনেক কিছু। আমার থাকার ব্যাপারে ঠিক হলো আমি লজিং থাকবো মাদ্রাসার কাছেই এক বাড়ীতে। সেদিন সন্ধ্যায় আমি এলাম আমার নতুন ঠিকানাতে। সেখানে আমি এক ক্ষুদিরাম আমার আবার তিন মেয়ে শিষ্য। পড়ার টেবিলে আমরা চারজন। আমাদের পরিচয় পর্ব শেষ হলে, ওরা আমায় জানালো আমার ক্লাসের এক মেয়ে থাকে ( সেই মাদ্রাসাতে কো এডুকেশন ছিলো )।
ক্লাস রুটিন আনতে পাঠালে সেই সহ পাঠিনি রুটিনের নিচে লাভ সিম্বল একে তাতে এ + আর লিখে পাঠান। আমি তাকে আমার সময়ে কখনো সরাসরি দেখিনি।
রাত পোহালে হলো শুরু এক নতুন দিনের, নতুন যাত্রার।

Sunday 11 December 2011

আমার আমি - ০৬

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কখনো পানির নিচে, বায়ুহীন ঘরে কিংবা দুঃস্বপ্নের ঝড়ে অথবা অদ্ভুত কোন দর্শকদের ভীরে পড়েছেন ? যদি না পড়ে থাকেন তবে আসুন আমার সাথে, ঘুরে আসি এমনি কিছু সময়ে,যেখানে বসত করছেন কিংবা করেছেন এমন কিছু মানুষ !
ঐ জীবনে আমাদের ছিলো না উরে যাবার কোন আকাশ, ছুটে চলার জমিন, দৃষ্টি খুলে দেবার আলো। সেই অন্ধকারেও মাঝে মাঝে আমরা আনন্দিত হতাম । প্রতি বৎসর হেফজ ও দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করা উপলক্ষ্যে সম্মাননা প্রদান ও ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন করা হতো। এই অনুষ্ঠানে ভারত,পাকিস্তান,আফগানিস্তান,লন্ডন থেকে বিশেষ বক্তাগণ আসতেন। চারিদিকে উৎসব ভাব বিরাজ করে, আমরা এই আয়োজন ও এতো মানুষের সমাগম দেখে অভিভুত হই। সেবার ভোরে, খুব ভোরে আমাদের ডেকে তোলা হলো। নির্দেশ হলো সবাইকে মাদ্রাসা মাঠে জমায়েত হতে, এরপর যা আমি গত এক দেড় বছরে দেখিনি তাই হলো। আমাদের লাইন করে দাড় করিয়ে দেয়া হলো , শুরু হলো লেফট-রাইট, সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজ। আমরা ঘন্টা খানেক ট্রেনিং নিয়ে সিলেট স্টেশনের দিকে চললাম। যেতে যেতে জানলাম একজন সম্মানিত অতিথি আসবেন, তিনি মোজাহিদ তাই তাকে সামরিক কায়দায় স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসা হবে। স্টেশনের নিয়ম ভেঙ্গে আমরা সবাই হুরমুর করে প্লাটফর্মে ডুকে গেলাম।
মাহফিলে আসা শ্রোতাদের কে বিভিন্ন ডিস্প্লে দেখানো হতো, যেমন দাফন-কাফন প্রক্রিয়া,ঈদের নামাজ, ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্ক এবং আরবী ও ইংরেজীতে কথোপকথন। সেবার আমি ও জামিল ছিলাম ইংরেজী কনভারসেশন প্লে 'তে। মানুষ কখনই জানবেনা যে আমরা একটি স্ক্রিপ্ট মুখস্ত করে শুধুই অভিনয় করছিলাম। খোদার ঘরের সামনে,নবীর বাগানে বসে এতো মানুষকে ধোকা দিতে তাদের না বাধলেও আজ আমার লজ্জা লাগে, অপরাধ বোধ হয়। ধর্মের কলকব্জা নাড়াচাড়া করা এই লোকগুলিকে সন্দেহ করার যথেস্ট কারন সৃষ্টি হয়।
প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রাহমান প্রতি বছরই ধর্ম বিষয়ক একদুইটা চটি বই বের করতেন। তেমনি একটি বই ছিলো '' আফগান রণাঙ্গনে আমি আল্লাহকে দেখেছি '' ।
দেখতে দেখতে বছর ফুরিয়ে গেলে আমার বাবা তার এক বন্ধুর প্রভাবে আরো ভালো মাদ্রাসার খোজে আমায় ভর্তি করলেন বিয়ানীবাজার অঞ্চলের আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর মাদ্রাসায়। প্রত্যন্ত অঞ্চল, বন্যা,চরম লোড শেডিং, রুচিহীন খাওয়া দাওয়া। কাজির বাজার মাদ্রাসার হোস্টেলের মতোই হোস্টেল। বাড়তি শুধু খাঁটি গ্রাম। আমি ভর্তি হলাম ছাফেলা দুওমে, আবারো একই ক্লাসে দ্বিতীয়বার পড়ছি।
আমাদের একটি সাবজেক্ট ছিলো ''মালাবুদ্দা মিনহু'' , ফারসী ভাষায় ইসলামী আইন বিষয়ক বই। আমি এর ক্লাস ওয়ার্ক ও পরীক্ষা বাংলাতে দেয়ায় যে হয়রানি ও ঠাট্রার শিকার হয়েছি তাতে মনে হয়েছিলো লজ্জা বোধ হয় বাংলাতেই। সেই ঘটনার সুত্র ধরে জ্বলঢুপের হুজুর নামে এক হুজুর আমায় ক্লাসে জানতে চান আমি কোন দল করি,আমি জবাবে না জানালে তিনি আমায় বেত্রাঘাত করতে করতে ,আমায় বলতে বলেন জমিয়ত করি। বস্তুত তাদের ধারনা হয়েছিলো আমি কাজির বাজার মাদ্রাসা থেকে এসেছি,সুতরাং আমি মজলিস করি। ক্লাসে এই নির্যাতনের পর তিনি আমায় তার রুমে নিয়ে গিয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়্যার দিয়ে পেটান ! এরপর দিন চলতে থাকে...
আমি আবিষ্কার করি আমাদের ব্লকের সুপার মাওলানা ফখরুল ইসলাম আমাদের পাশের রুমে থাকতেন। প্রায়শই তার রুম থেকে তার সেবায়েত আলী আকবর ও তার ফিসফাস কথা বার্তা ও হাসাহাসির শব্দ পেতাম !
ক্লাসের শেষে বিকেলে আমি মাদ্রাসার নতুন ক্যাম্পাসে বেড়াতে যেতাম। একদিন দেখি সেখানে কিছু সিনিয়র ভাই ও আমার সাথের দুজন ছেলে হাতে বাশের শুকনো লম্বা টুকরা নিয়ে সোর্ড ফাইট করছে। দুজন তাদের কে বিভিন্ন ভাবে দেখাচ্ছে। এরপর থেকে আমিও নিয়মিত যেতে থাকলাম। প্রতিরক্ষা, আক্রমণ, হাইকিং,লাফ দেয়া শিখলাম।কিছুদিন পর কেন জানি আমি আর যাইনি।
একদিন সন্ধ্যায় আমাদের সবাইকে নিচে ডেকে পাঠানো হলো, বাইরে থেকে কে একজন এসেছেন,তিনি আমাদের উদ্দ্যেশে ভাষণ দেবেন এরপর গ্রুপ ট্রেনিং হবে।
ইতিমধ্যে বর্ষা চলে এসেছে,চারদিকে পানি আর পানি...আমি বাসায় ফিরে আমায় রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে পেটানোর ঘটনা জানালে,আমার মা বাবাকে বাধ্য করেন আমায় ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু অবাক ব্যাপার ধর্মের এই পণ্ডিতেরা আমার নামে কাল্পনিক অভিযোগ তুলে সব অস্বীকার করেন ! আমি শুধুই অবাক হই...

Saturday 10 December 2011

আমার আমি - ০৫

তার নাম মোতালেব। বাড়ি কোথায় মনে করতে পারছিনা। তার যে কথাটি আজো কানে বাঝে '' আরে হুচ্চুত কইচ্চে ''।
এটা গুরুত্বপুর্ণ নয় যে মোতালেবরা কোথা থেকে এসেছে, আমার আপনার চারপাশে mr / miss মোতালেবরা রয়ে যাচ্ছে, সয়ে যাচ্ছে অভিশপ্ত জীবন।
আমরা যারা পরিশোধ করে খেতাম, তারা ব্যাতিত বাকি সবাই ( শিশু ও কিশোর গণ সহ )দু বেলা ( সকাল ৯ এবং বিকাল ৫ ) খেতে পেতো। ক্ষুধার তাড়নায় কিছু ছাত্র শিক্ষকদের খাবার ডাইনিং থেকে তোলার কাজ করতো। সেই সাথে তারা সেই শিক্ষকের কাপড় কাচা, ফুট ফরমায়েশ খাটা, শরীর ম্যাসাজ করা ছিলো তাদের কাজের অংশ। বিনিময়ে তারা সেই শিক্ষকের খাবার অবশিষ্টাংশ পেতো। এ ছাড়াও কিছু ছাত্র পুণ্য ভেবে এসব সেবা ( ! ) দিয়ে থাকতো। আমার সাবজেক্ট মোতালেব তাদেরই একজন।
একদিন আছরের নামাজের পর আমরা মসজিদের সামনে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরছিলাম, কেউবা নির্মাণ সামগ্রী হিসাবে আনা পাথরের উপর চড়ছিল। আমাদের সাথে মোতালেবও ছিলো, হঠাত তাকে মাওলানা লুতফুর রহমান ডেকে নিলেন। মোতালেব ছিলো তার সেবায়েত। আমরা যে যার মতো ছিলাম কিন্তু হঠাত করে জকিগঞ্জের কালিম আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয়। আমাদের রুমে ফিরে এলে দেখি ইতিমধ্যে মোতালেবকে ঘিরে কয়েক জন কথা বলছে, এদের কেউ আবার মোতালেব কে ধমকাচ্ছে। আমাদের কয়েক জন কে রুম থেকে বের করে দিয়ে তারা নিজেদের মাঝে কথা বলছিলো, আমরা রুমের বাইরে থেকে মোতালেবকে ধমকানোর শব্দ শুনছিলাম। এরপর আর কারো কাছে বিষয়টি অজানা ছিলোনা। মোতালেবকে দুষ্ট ছেলেরা '' হুচ্চুত '' বলে ক্ষেপাত। প্রকাশ্যে কেউ কেউ তাকে গাল,বুক টিপে দিতো। এ রকম প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য আরো কয়েকজন সখি টাইপ ছেলে ও যুবা ছিলো, তন্মধ্যে শায়খুল হাদীস ইসহাক সাহেবের ছেলে ( নাম সম্ভবত ইয়াহিয়া ), লাইব্রেরীতে বসবাসকারী মুফতি শফিক, মাওলানা মমশাদ, মাওলানা রিয়াজ, মাওলানা যাইনুল সহ আরো কিছু ছাত্র ছিলো যাদের পেছনে বাকি ছাত্ররা হাসতো !
এধরনের আলোচনা সব সময় নীরবে আর পেছনেই হতো। সবখানেই ছিলো ভয়ের বসবাস।
পড়েছি দেশ বিভাগের কিছু আগে কলকাতার মুসলমানগণ শ্লোগাণ দিতেন,
কানপে বিড়ি, মু মে পান...লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান আর আমার মাদ্রাসার সহপাঠিরা ভাবতো মাদ্রাসা বেহেস্তের গুলিস্তান, তাদের মুখে থাকতো পান, বাংলাকে করবে আফগান ! নবীর বাগানে এ কোন লীলা খেলা ? হাজার হাজার ফেরেশতারা তখন কোথায় থাকেন আর কি করেন ?
এই ঘটনার প্রায় দশ বছর পর আমি হঠাত করে মোতালেব কে নিয়ে ভাবতে শুরু করি, আমি কোথাও ছেলে/পুরুষ ধর্ষনের কোন শাস্তি,আইন এমনকি কোন পরিসংখ্যান খুজে পাইনি। যদি কোন ছেলে/মেয়ে তার শৈশবে কোন ভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় তবে এর প্রভাব তার জীবনে কি হতে পারে ? সে কি পারবে আর কাউকে শারীরিক ভাবে ভালবাসতে ? ভালবাসার রঙিন সেই মুহুর্তে কি বিভিষিকাময় সেই স্মৃতির ভয়ংকর সে মুখটি কি বারবার ভেসে আসবে না ? ধর্মকারীগণ তাদের সবখানে বিরাজ করা খোদা কে কেন সেই সময়ে কেন তার প্রেম ও শক্তি নিয়ে সামনে আসতে দেখে না ? এটা তার কোন খেয়ালি পরীক্ষা ? খবরের কাগজে পড়েছিলাম ভারতে বিভিন্ন পেশাজিবি পুরুষ নির্যাতন রোধ আইন প্রবর্তন করতে রেলী করছেন। সময় এসেছে মানুষ রুপি এই দানবদের বিচারের মুখোমুখি করার। ধর্মের হাসিস পান করা ধার্মিকদের মুখোশ খুলে দেয়ার। সেই যুগে ব্রাক্ষণ, পুরোহিত এরপর মাদ্রাসা, মসজিদ এরপর চার্চ ধর্মের আবরনে নস্টাচারের এই খেলা দুর্বল মানুষের খেলা খেলে চলেছে আদি কাল থেকে...কখনো মেয়েদের সাথে কখনো ছেলেদের সাথে, তাই এখনি সময় ঘুরে দাড়ানোর।

Tuesday 6 December 2011

আমার আমি - ০৪

জননেত্রী শেখ হাসিনা তখন আওয়ামী লীগের প্রধান মন্ত্রী,মাথায় পট্রি,হাতে তসবি আর মুখে জাতির পিতার হত্যা শোধ ভুলে যাবার যপ নিয়ে দেশের নতুন ত্রাতা তিনি। দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠণ করে আওয়ামী লীগ। কিছুদিন না যেতেই দেশ থেকে ইসলাম বিনাশের অভিযোগে হাহাকার করে উঠে ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা, ঠিক একই সময় দেশ ভারতের কাছে বিক্রি করে দেয়ার অযুহাতে হাত গুটাচ্ছে বি এন পি। এই মহা যজ্ঞের প্লাটফর্ম সিলেট অঞ্চলে গড়ে তুলতে ইমানী দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা মজুদুদ্দিন ( মুহতামিম/ প্রিন্সিপাল, ভার্থখলা মাদ্রাসা), মাওলানা আলি আকবর ( ইমাম ও মুহতামিম, দরগা মাদ্রাসা), শায়খে কাতিয়া, রেঙ্গা, ও গহরপুরি পীর সাহেবগণ ( স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার নেতৃত্ব বৃন্দ ) এবং তাদের সাথে তাদের অনুসারী ও তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রগণ। সেই উত্তাল সময়ে আমি তখন ছাফেলা দুওমে পড়ি। প্রায় প্রতি সপ্তাহে মিছিল থাকতো। উপরের ক্লাসের বড় ভাইরা মিছিলের দিন ক্লাসে ক্লাসে এসে সবাইকে মিছিলে অংশ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়ে যেতেন। উপরন্তু বের হবার সম্ভাব্য সব পথে পাহারা দিতেন। আমি অতি উৎ সাহ নিয়ে সেই সব মিছিলে যেতাম। ছন্দে ছন্দে বিভিন্ন শ্লোগান দিতাম যা সেই সময় আমায় আমোদ দিতো। কিছু শ্লোগান বলার লোভ সামলাতে পারছিনা...
নারায়ে তাকবির, আল্লাহ হু আকবর।
আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান।
রুশ ভারত মার্কিন ফুরিয়ে গেছে তোদের দিন।
মরলে শহীদ বাঁচলে গাজি, আমরা সবাই মরতে রাজি।
মাওলানা সাইদী বাংলার ইহুদি।
একটা দুইটা মুর্তাদ ধরো , সকাল বিকাল নাস্তা করো।
জেলের তালা ভাঙবো , ...কে আনবো।
জাহানারা ইমাম ( শহীদ জননী ), জাহান্নামের ইমাম। ইত্যাদি...
রাজনৈতিক এই সকল কর্মকান্ডে আমার মতো শিশুদের অংশ গ্রহণ সামান্য ছিলোনা কিংবা কালে ভদ্রে হঠাৎ ছিলোনা ! এই সবের পেছনে ছিলো সাহাবা পরিষদ বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট বাংলাদেশ, নাস্তিক মুর্তাদ বিরোধী আন্দোলন নামক সংগঠন। অবাক ব্যাপার হলো এই সব গুলো সংগঠনের প্রথম সারির নেতা ছিলেন প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশের্‌, সভ্য নাগরিক কোন শিশুকে কিংবা কোন ছাত্রকে, নিজ রাজনৈতিক লক্ষ্য বা লিপ্সার জন্য ব্যাবহার করবেনা। এই সেই মাওলানা যিনি ব্রিটেন থেকে মদ বিক্রির টাকা অনুদান হিসেবে আনতেন আর শুক্রুবার তার মসজিদে মদ বিক্রি,মদ পান কে হারাম বলে বলে হয়রান হতেন। খালেদা কে লেদা ( গো মল ), হাসিনা কে চেনা (গো মুত্র ) সম্বোধন করে, নারী নেতৃত্ব হারাম, দেশে নারী নেতৃত্ব আসলে দেশ তসবীর দানার মতো ধংষ হয়ে যাবে প্রচার করে মসজিদে ওয়াজ করতেন। তার ওয়াজ করার , মানুষকে মোহিত করার ক্ষমতা ছিলো অসাধারণ। প্রতি সপ্তাহে মানুষের ঢল নামতো। সেই একই ব্যাক্তি মাত্র এক দশক পর একবার খালেদা-সাঈদীর সাথে এবং এর পাঁচ বছর পর আওয়ামীলীগের হয়ে নমিনেশন নিয়ে নির্বাচন করতে নামেন।
আমাদের শৈশব কে নষ্ট করে, আমাদের মতো হাজারো বাংলাদেশের বভিষ্যত কে দিকভ্রান্ত করে, নিজের দেশের কাছে পরদেশী করে দিয়ে তারা আমাদের জাতীয় পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান !
যে মিছিলে মিছিলে মানুষ তার অধিকার, তার মতামত প্রকাশের জন্য মুষ্টি কে শূন্যে ছুড়ে দেয়,দীপ্ত তেজে শ্লোগান বলে তা ছিলো আমার বাহির হবার বাহানা ! আমার জন্য যা ছিলো শুধুই না জানা অংশ গ্রহণ তা আর সব মানুষের জন্য ছিলো আতঙ্ক। আপনারা যারা শৈশব কে চোখ বন্ধ করে দেখেই বারবার ফিরে যেতে চান, আমি সেই শৈশবে আর ফিরে যেতে চাইনা ! এমন নিরস, প্রতিবন্ধকতাময় সময়ে কোন সুস্থ মানুষ ফিরে যেতে পারেনা। আমার মতো হাজার হাজার ছেলে তার দুরন্ত শৈশব কৈশর কখন যে হারায় তা তারা নিজেও জানেনা। আমি ঘুড়ী উড়িয়ে দেখিনি,কাদাময় মাঠে বলের পেছনে ছুটিনি, তপ্ত রোদে রান করার জন্য মাঠে নামিনি, কার্টুন দেখার জন্য দাড়াতে পারিনি, আমের গাছে চড়ে বেড়াইনি...আমার সাথে ট্যাগ লাগানো ছিলো আমি খোদার খাশির মতো উৎসর্গক্রিত। আমায় এসবে আসতে মানা !
প্রতি শুক্রুবারে বিটিভি তে আলিফ লায়লা প্রচার করা হতো। বাসায় থাকতে এক-দুই বার দেখার সুযোগ পেয়েছি কিন্তু এই বন্দিখানায় তা অকল্পনীয়। আমাদের মাদ্রাসার পাশেই ছিলো নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল । সেখানের রিসিপশনে টি ভি রাখা ছিলো, একবার এশার নামাজ ফাঁকি দিয়ে আলিফ লায়লা দেখতে সেখানে গেলে, ধরা পরে যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার আমরা হয়ে ছিলাম তা মনে হলে আজও আমি শিউরে উঠি ! হোস্টেল সুপার মাওঃ আব্দুস সোবহান সাহেব ও মাওঃ আব্দুল খালেক সাহেব, মাওঃ বাহুবলী হুজুর গণ আমাদের র‍্যাবের মতো পেটানোতে বিশেষ পারদর্শি ছিলেন। তারা এ ধরনের অপরাধের বিচার করতেন। আমি ভেবে পাইনি আলিফ লায়লা তে কি ছিলো যা আমায় খারাপ ছেলে হবার কারন হতে পারে। ঐ সিরিয়ালটির বেশির ভাগ ছিলো মুসলমানদের নিয়ে গল্প ভিত্তিক। আমি কি জানতে চাইতে পারি মৌলোভী সাহেবরা এসব না দেখে কিভাবে জানলেন এসবের সব কিছু খারাপ ? কোন জিনিসই যে অতিরিক্ত ভালো নয় তার প্রমান কিছু ছেলে পাশের সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যেতো ! পড়নের পাঞ্জাবীকে ভাজ করে পাজামার ভেতর দিয়ে কিংবা টি শার্ট চাপিয়ে সিনেমা দেখতে যেতো। দিলশাদ সিনেমা হলে ২x গল্পের সিনেমা প্রদর্শন করা হতো, কিছু ছেলে গোপনে তা দেখতে যেতো। সন্ধ্যায় লোড শেডিং এর সময় কিছু ছেলে অত্যন্ত নোংরা গল্প করতো। মানুষের জীবনে বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। স্বাভাবিক বিনোদনের অভাব থেকেই মাদ্রাসা গুলোতে সবচেয়ে বেশি সমকাম কিংবা শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে !
সেই সময়ে একটি ঘটনা আমায় বহুপরে এতো বেশি ভাবিয়েছে যে তার প্রতিকারের ভাবনা আজ আমায় এই লিখায় অন্যান্য সমস্যার সাথে সব কিছুকে আর সবার সামনে আনতে উতসাহ যুগিয়েছে

Saturday 22 October 2011

আমার আনি - ০৩

বয়ে গেছে সময়, কেটে গেছে ঘোর। যা শুনতাম তাই বিশ্বাস করতাম, আমার ভেতর বিচারিক ক্ষমতা তখনো বেড়ে উঠেনি। কি করে বেড়ে উঠবে, যে পর্যন্ত আমার আমি কে জ্ঞান ও বাস্তবতার মিরর ভিউয়ে না দেখতে পাব ?
মাদার তেরেসার বন্দনা করলো ইনকিলাব, আমার চারপাশে আলোচিত হতে থাকলো, সে এনজিও করে ,সেবার নামে হত দরীদ্র মানুষকে খ্রিষ্টান বানায় !
এ বিষয়ে সেই সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় প্রচার ছিলো, আমাদের দেশে এনজিওরা বিদেশ থেকে টাকা এনে শিক্ষার নামে হত-দরীদ্র, প্রান্তিক মানুষের ছেলে-মেয়েদের জন্য স্কুল খুলে, নাস্তিক বানানোর কাজ করে থাকে। ইনকিলাবে সচিত্র প্রতিবেদনে পড়েছিলাম, পার্বত্য অঞ্চলের সাজেক নামে দুর্গম এলাকাতে এনজিওরা আদিবাসী মানুষকে ধর্মান্তরিত করছে । তাদের কে শিক্ষার নামে, সেবার নামে প্রভাবিত করে, মোহিত করে তাদের জীবনাচার পরিবর্তন করে চলেছে। রাষ্ট্র ও ধর্মপ্রেমি দেশজ পন্ডিতগণ যদি তাদের হাত, ঐ সব মানুষদের দিকে বাড়িয়ে দিতেন তবে কি আজ তাদের এমন কোন এজেন্ডা তারা পেতে্‌ন, যা তারা বেঁচে খাচ্ছেন।
মাওলানা সাঈদী, প্রিন্সিপাল হাবিবুর রাহমান,ওলীপুরী সাহেবদের ওয়াজ-নসিহত সভাতে শুনেছি...
স্কুলে বাচ্চাদের বলা হতো,চোখ বন্ধ করো,আল্লাহর কাছে চকলেট চাও। স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চারা চকলেট পেতোনা। এরপর বলা হতো এবার আপার কাছে চকলেট চাও, আপার ব্যাগে চকলেট থাকতো, তাই বাচ্চারা পেতো। তাদের শেখানো হতো আল্লাহ কিছু দিতে পারে না, তার কোন ক্ষমতা নেই,বাস্তবে আল্লাহ নেই।
আমার তখন মনে হয়েছিলো,কি গভীর ষড়যন্ত্র ! আমি বড় হয়ে এদের বিরুদ্ধে লড়ব। আজ বুঝতে পারি গল্প তৈরীতে কতো কাঁচা ছিলো ওরা ! ওদের আতরের সুবাস, গাঁজার মাদকতা কাঁটাতে পারেনি।
বাংলার হুজুর ফজলুল করীম সাহেব থেকে শুনে ও ইনকিলাব পড়ে জেনেছিলাম, দেশে শান্তি চুক্তি হয়েছে,যা দেশকে বেঁচে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র ! এসবের পেছনে নাকি ভারতের হাত রয়েছে ! আমাদের স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ! তখন বুঝিনি স্বার্বভৌমত্ব কি ?
যদি স্বার্বভৌম বা রাষ্ট্রের মৌলিক একক হয় জনগণ ও ভুখন্ড,যখন তা র‍্যাবের হাতে বিনা বিচারে মারা যায় কিংবা নদী ভাঙ্গনের টাকা মন্ত্রী-আমলারা লুটেপুটে খায় তখন স্বার্বভৌমত্ব কি হুমকির মুখে পড়েনা ? আর যখন এই ধর্মকারীরা আওয়ামী লীগে বা বি এন পির সাথে থাকে তখন তাদের এই স্বার্বভৌম প্রেম কোথায় থাকে ? আমি উত্তর খুঁজতে থাকি...
- See more at: http://classic.nagorikblog.com/node/6369#sthash.GAtUNBiA.dpuf

Wednesday 19 October 2011

আমার আমি - ০২

কাজলশাহ মাদ্রাসা থেকে ক্লাস ফাইভ পাশ করে জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম। তারা আমায় জামাত পাঞ্জাম এ ক্লাস শুরু করার জন্য মনোনিত করলেন। এখানে আমি উর্দু, ফারসি, আরবি ভাষার ব্যাকরণ ও সাহিত্য পড়েছি। এছাড়াও বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস,ভুগোল পড়েছি। এখানে বলা অত্যন্ত জরুরী যে, এই বিষয় গুলি বাংলাদেশ বেফাকুল মাদারিস শিক্ষা বোর্ড (কওমী,সরকারী নয়।) কতৃক প্রকাশিত। যখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম কতো মান্দাতা আমলের সিলেবাস আমি পড়েছি, আমি শুধু অবাক হয়েছি। আজ যখন আমি সেই সিলেবাস নিয়ে ভাবি, আমি খুজে পাই প্রচণ্ড সাম্রদায়িক এক শিক্ষা ব্যাবস্থা। সেই বইয়ে কোন হিন্দু, খ্রিস্টান কিংবা অন্য কোন লেখকের লেখা নেই, এমন কি ইতিহাস বইয়ে মুসলমানদের অর্জন, তাদের বিজয় কিংবা তাদের প্রতি নির্যাতনের গল্প ছাড়া আর কিছু ছিলনা। অথচ মুসলমানগণ ছিলো বঙ্গ জনপদের সর্বশেষ অভিবাসী কিংবা দখলদার।
আমি যখন ছাফেলা দুওমে উত্তীর্ণ হলাম (কাজির বাজারে ছাফেলা আওয়াল নেই), তখন আগের বিষয় গুলির সাথে মা-লা-বুদ্দা মিনহু নামে ইসলামী আইন বিষয়ক এক বই যোগ হয়। এই বইয়ের কিছু অধ্যায়ের পাঠদান পদ্ধতি অত্যান্ত অশ্লীল, কিছু অধ্যায়ের হিসাব নিকাশ অমানবিক (সাক্ষি সংক্রান্ত নারী-পুরুষ বিভেদ,তালাক,গোলামের মাধ্যমে বিনিময়,গোলাম বিনিময়), কিছু অধ্যায় উদ্ভট এবং হাস্যকর ( মধ্যপ্রাচের মুদ্রা,এককের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত)।
আমরা সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ক্লাস করতাম। মধ্যখানে যোহ্ররের নামাযের বিরতী দেয়া হতো। যে বিষয়টি ভেবে আমি আজও শিউরে উঠি,কিছু কিছু শিক্ষক ছাত্রদেরকে ক্লাসের পড়া না পারলে কিংবা কোন অপরাধ করলে, মধ্যযুগের গোলাম পেটানোর মতো করে পেটাতেন। এখানে ছাত্ররা প্রচুর পড়াশুনা করে তবে তাদের পাঠদান ও মুল্যায়ন পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক। একটি ব্যাপার অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক যে এরা সেই সময়ে নকল করতোনা। বছরে তিনটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। সমস্ত বিষয় আরবী মাসের হিসাবে পরিচালিত হতো। ছাত্রদের কো-কারিকুলাম একটিভিটি প্রায় ছিলো না। মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে কোন ধরনের খেলাধুলার অনুমতি ছিলোনা।
মাদ্রাসায় আল ইসলাহ নামে ছাত্র সংসদ ছিলো। এরা প্রতি বৃহস্পতিবার যোহরের নামাজের পর ছাত্র সভার আয়োজন করতেন। সেখানে পুর্বনির্ধারিত বিষয়ে ছাত্রগণ বক্তৃতা দিতেন। পালাক্রমে সব ছাত্রকে প্রতি সপ্তাহে অংশগ্রহন করতে হতো। মাঝে মাঝে এরা মোনাযারা (বিতর্ক), উর্দু-ফারসী ভাষায় পালাক্রমে ছন্দ বলা আয়োজন করতেন। ছাত্র সংসদে শুধু ইনকিলাব ও সিলেটের ডাক পত্রিকা আসতো। সেখানে পত্রিকা পড়তে পড়তে আমার পত্রিকা পড়ার নেশা হয়ে গেলো। ক্লাস শেষে কিছু করার থাকতোনা, বাইরে যাবার অনুমতি ছিলোনা তাই সেই সময়ে আমি সমস্ত পত্রিকা খুটিয়ে খুটিয়ে পড়তাম। আর এই পত্রিকার হাত ধরে আমি বাহিরকে দেখতাম, জানতাম।
পত্রিকা পড়েই একদিন জানলাম মাদার তেরেসা নামে ইন্ডিয়ার কেউ একজন মারা গেছে। তার সম্পর্কে পত্রিকার ফিচারে অনেক কিছু লিখলেও বড় ভাইদের বলতে শুনেছি সে ছিলো খ্রিস্টান্দের এজেন্ট !

Monday 17 October 2011

আমার আমি- ০১

আপনারা যারা হিন্দি মুভি 'তারে যামিন পর' দেখেছেন, তারা হয়তো অনুমান করতে পারবেন কেমন লেগেছিলো দারশির সাফারির, যখন তার মা বাবা তাকে বোর্ডিং স্কুলে রেখে আসছিলে্ন, তখনকার সেই দৃশ্য যা আমার সাথে মিলে গিয়েছিলো, আজ থেকে ১৫/১৬ বছর আগে। ফিরে আসার বিশাল গেট পাড়ি দেয়ার সাহস আমার ছিলোনা। কিছু করার ক্ষমতাও আমার ছিলোনা। তাতে কি ? আশ্রয় ছিলো আমার বিছানা ও বালিশ,আর মুখ গুজে কান্না ছিলো আমার ভাবের সেই সময়কার প্রকাশ।
সামাজিক রীতি আনুযায়ী বিদায়ের সময় আমার বাবা আমার সহবাসীদের কিছু বলতে চাইছিলেন,কিন্তু তাদের দৃস্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছিলোনা,তখন আমার নাবালক বুদ্ধি দিয়ে তাদের একজনের টি-শার্টের লিখা WONDERFUL শব্দটি উচ্চারণ করে সেই ছেলেটিকে ডাকার চেস্টা করেছিলাম, এ নিয়ে তারা আমায় বাকি সময়কাল ইংলিশম্যান বলে ক্ষেপাত। অনেক পরে বুঝে ছিলাম নিরীহ এই শব্দটি কেনো তাদের কাছে অদ্ভুত ঠেকেছিলো।
(আমার চারপাশের এখনকার বর্ণনা যাদের কাছে অতিরিক্ত ঠেকবে , তাদের জন্য বলছি এরপর যা আমি বলবো তার জন্য এই বর্ণনা অতি জরুরী হয়ে আসবে।)
আমি ও আমরা ১০'x১৫' একটা রুমে মোট ১৪ জন মানুষ(!) বসবাস করতাম। সকাল হলে বিছানা গুটিয়ে সেখানে ক্লাস শুরু হতো। মাদ্রাসাটি ছিলো u প্যাটার্নের দীর্ঘ আয়তাকার তিন দিক ঘেরা দালানের সমস্টি। entrance এর ঠিক বিপরীত দিকে ছিলো হাদীস ভবন। তার পেছনে ছিলো একটি বেকারি ফ্যাক্টরি। হাদীস ভবনের পুর্ব দিকে ছিলো মেথর পট্রি।এখানে নীচ তলাতে লাইব্রেরী ও শিক্ষকগণ থাকতেন।দুতলায় মেশকাত ও বোখারীর ক্লাস হতো। তিন তলায় কিছু ছাত্র বসবাস করতো। আমাদের সেই সময়ের বসবাসের টিনের ঘরটি ছিলো পুর্ব দিকে। তার পেছনে ছিলো কাজিরবাজারের খাল। শীতকালে যেমন তেমন , বর্ষাকালে এর পানি হয় কালো আর এর সৌরভকে (!) সুগন্ধিতেও দূর করা যেতনা। এখানে আওয়াল থেকে নহমীর পর্যন্ত ক্লাস ছিলো এবং দুটি ঘরে শিক্ষক থাকতেন। আমাদের ঘরটির পরই ছিলো নতুন দালান। এখানে দুতলায় আলিয়া আওয়াল থেকে আলিয়া চাহারম পর্যন্ত ক্লাস হতো এবং ইলেক্ট্রিক্যাল ট্রেনিং করানো হতো। একেবারে প্রান্তে দুজন শিক্ষক থাকতেন। নিচতলা বানিজ্যিক কাজে ভাড়া দেয়া হতো এবং মাদ্রাসার নিজস্ব সেবা মুলক ব্যাবসার কাজে ব্যাবহার করা হতো। এছাড়াও এই দালানের এক প্রান্তে ছিলো কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (আমি কখনো কাউকে প্রশিক্ষণ নিতে দেখিনি।), অপর প্রান্তে হোস্টেল সুপার থাকতেন। নতুন দালানের পেছনে ছিলো পানের আড়ৎ।
পশ্চিম দিকে ছিলো হেফজ বিভাগ, ওরা মসজিদে ক্লাস করতো। এরপর শায়খুল হাদীস সাহেবের ঘর, এরপর বায়তুর রাহমান মসজিদ। মসজিদের পশ্চিমে ছিলো খোলা ডোবা। আমার দু বছরের সময়কালে দেখেছি এর নির্মাণ কাজ কখনো শেষ হয়না। অনেক পরে বুঝেছিলাম, এটা ছিলো তার বৈদেশিক আয়ের অন্যতম চাবি। কিছুদিন পর পর তিনি মসজিদের ডিজাইন পরিবর্তন করতেন। এরপর ছিলো অযু করার উন্মুক্ত হাউজ। এমন নোংরা পানিতে কি করে শুদ্ধতা পাওয়া যায়, আজো আমি ভেবে পাইনি। হাউজের পশ্চিমে ছিলো টয়লেটের সারি। সম্ভবত এই রকম টয়লেট ওরা ওদের জাহান্নামের বর্ণনাতেও রাখবেনা। এরপর ছিলো আমাদের সবার ভাতঘর। দীর্ঘ হলঘর,এখানে আমাদেরকে ইন্ডিয়ান কমোডে বসার মতো, বসে খেতে হতো। বর্ষায় ভাতঘর গোয়াল ঘরের চেয়ে খারাপ অবস্থা হয়ে যেতো। ঝুটা খাবার ফেলতে ফেলতে,ভাতঘরের পশ্চিমে ভাতের টিলা হয়ে যেত। আমরা যারা টাকা দিতাম তারা তিন বেলা খেতে পেতো আর যারা ফ্রি খেতো তারা দু বেলা খেতো। আজ আমি ভাবতে পারি আমাদের সবার পেট এবং ক্ষুধা একই রকম ছিলো। কিন্তু খাবার জোটানোর খোদা ছিলো আমাদের সাথে।যেমন আছে আজো সেই সব লোকদের সাথে যাদের আছে টাকা ও ক্ষমতা। আর দরিদ্রদের আছে স্বপ্ন আর মিছে আশা।আমি দারিদ্র্যকে প্রেথম দেখেছি মেথর পট্রি ও পানের আড়তে। আমি অনুমান করেছি এর অভিশাপ কত জঘন্য। আমি ক্ষুধাকে খুজে পেয়েছি প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের চোখে, সেই ক্ষুধাতে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিলো মেথরদের ক্ষেত ও শুকর চড়ানো মাঠ। তার ক্ষুধা নেভাতে স্বয়ং খোদা-তালা, দয়াল নবী মুহাম্মাদ, এবং হাল আমলের দাতা মুহসিন সিলেটের তৎকালীন ডি সি এবং তার মর্দে মুজাহিদগণ মাঠে নেমে এসেছিলেন। আমি সেখানে একজনও ভাসানীকে পাইনি। গল্পের রাবণের এক মনুষ্য রুপ পেয়েছিলাম যে মেথরদের কে দাশ করে রেখেছিলো। সে এসেছিলো তার হিস্যা বুঝে নিতে কিন্তু পারেনি। রামের দল যেখানে হাজির সেখানে রাবনের সময় কই ? আমি কি বলতে পারি, এরা একই সময়ে রাম ও রাবন।

Wednesday 5 October 2011

আমার আমি

বিঃ দ্রঃ - আমার একান্ত কিছু কথা, যা কোন কোন পাঠকের মধ্যে ভিন্ন বোধ কিংবা মত জাগিয়ে দিতে পারে। যার জন্য আমি দায়িত্ব নিতে আগ্রহি নই। বাস্তবতা যদি আমার অতিতের সাথে আপনাকে আহত ব্যাহত কিংবা ভাবিয়ে তুলে, তা শুধু আপনার নিজের কৃ্তিত্ব।
মানুষ মোহিত হতে পছন্দ করে, ভাবে ডুবে থাকতে পছন্দ করে, পছন্দ করে all iz well ভাবতে।
মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যা্‌ই আমি যাকে ছেড়ে এসেছি, যাকে আমি অবাস্তব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই ভাবনা আমার পিছু নিতে চায়। আমরা মানুষ বড় অসহায়, মাঝে মাঝে ভীতু।
সে অনেক দিনের পথ চলা, বংশ পরম্পরায় আলোচিত, চচ্চিত, রোজকার অনুশীলন...তাই আজো আমি সেই সব আচার কিংবা অভ্যেসে আক্রান্ত হই আর নিজে নিজে হেসে উঠি।
আমি আনন্দিত যে আমি আমার ঘোর কে দোর থেকে বিদায় দিতে উঠে বসেছি।
আমি যে কখন থেকে বিশ্বাসি তা আমি নিজেও জানিনা। মায়ের কাছে শুনেছি , যখন মুখে বুল ফুটেছে, পা চলতে শুরু করেছে তখন থেকেই নাকি বাবা আমায় মসজিদে নিতে শুরু করেছেন। এতো এতো বিস্বাসির সেই সভা আমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছিল তাই চোখে জল তুলে বের হতে পেরেছিলাম, তবে কিছু কালের মধ্যেই আবার নিয়মিত মসজিদের মক্তব্যে হাজিরা দেয়া শুরু করতে হয়েছিল।
সেই থেকে শুরু , প্রতিদিন সকালে কায়দা, ছিপারা, ব্যাভহারিক প্রশিক্ষণ। এই পাঠ ছিলো খুবই নিরান্দময়। আমি কি বকবক করছি তার কিছুই আমি বুঝিনা, তথাপি আমি অভ্যাসগত ঐতিহ্যের হাত ধরে মুসলমান হবার যে কর্মকান্ড শৈশবে আমার সাথে শুরু হয়েছিলো আমি তাতে শুধু অভিনয় করে গেছি। সময়ের সাথে অজানা বন্ধ কুঠুরিগুলি যখন আমি খুলতে শুরু করলাম, তখন আমি বিষ্মিত হতে শুরু করলাম।অজস্র গাজাখুরি গল্পে কোরান নামক বইটি তার রস বৃদ্ধি করেছে। নিরান্দময় সেই নিয়মিত অভ্যেসের দিনগুলিতে আমার বন্ধু অলি একসময় তার কোরান পাঠ শেষ করেছিল আমার আগে, আমি তখন ১২ পারাতে। আমরা শিশুরা আনন্দিত যে এ উপলক্ষে শিরনি দেয়া হবে, আগে পড়া শেষ হবে। কিন্তু আমার আনন্দের আকাশে মেঘ হয়ে এলেন আমার বাবা, তার সাথে যোগ দিলেন আমার মা...তারা খুবি বিষন্ন এই ভেবে যে কবে আমি কোরান পাঠ শেষ করব। এ নিয়ে প্রায়ই আমায় কথা শুনতে হতো, আমার ধার্মিক বাবা-মা কি এটাকে তাদের ধর্ম চর্চার অপুর্নতা ভাবতেন !
পরিচিতজন কিংবা স্বজনরা আমায় কোরান পাঠ সম্পুর্ন করা নিয়ে প্রশ্ন করতেন তার উত্তর করতে এ পর্যন্ত আমায় মিথ্যে বলে আসতে হয়েছে। মিথ্যে বলার ভার খুবই ভয়ানক।
সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে আমায় আমার ঘরের দোর থেকে, এলাকার সীমা ছেড়ে বাইরে আসার আহবান জানাচ্ছে...
বাবারা সব সময় ব্যাস্ত থাকেন যেমন ছিলেন আমার বাবাও। মায়ের হাত ধরে একদিন কাজলশাহ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে গেলাম। সেটি একসময় ছিলো যখন আমি ভাবতে পারিনি আমি কোন নৌকোতে চড়েছি...মানুষ আমায় দেখে মাথা ছুয়ে আদর করে, নিজেরা হালকা দীর্ঘশ্বাষ ছেড়ে আশির্বাদ করে। আর সবার মতো আমিও সকালে মাদ্রাসাতে যাই, ফিরে এসে খেলতে চাই...টিভি দেখতে চাই...
আমার চারপাশের মানুষ আমায় অতি যত্নে মনে করিয়ে দেয় এসব আমায় শোভা পায়না। আমার জন্য তৈরি হয় ভিন্ন আচরন বিধি। আমার সমাজ আমায় তারই সীমানায় নজরবন্দি করে রাখে। আমি ভেবে পাইনা কেন আমায় এমন হতে হবে ? কেন আমি সবার মতো হতে পারবোনা। এসবের পরও কিছুই থেমে থাকেনা। চলি আমিও , চলতে চলতে ইবতেদায়ী লেভেল শেষ করি।
সাথের ছেলে মেয়েরা বেড়াতে যাচ্ছে, সারাদিন খেলা-ধুলা করছে, কিন্তু আমি আমাকে খুজে পাই কাজির বাজার মাদ্রাসায়। কালো এক ট্রাংকে আমার কাপড় আর কিছু শুকনো খাবার আর বাইন্ডিং করা খাতা আর আমার আমি...
আমি আসছি...কথা রয়েছে আরো কিছু বলার...

Monday 15 August 2011

আজ পনের আগষ্ট। যে দেশটি থেকে আমি এসেছি সে দেশে আজ শোক দিবস। শোক একজন মানুষের নির্মম ভাবে প্রাণ হারানোর। আমি মনে করি, আমার শোক অন্য যায়গায়, তিন যুগ ধরে বিচার না করার যে রেওয়াজ চলে আসছে তার চেয়ে বড় শোকের আর কিছু নেই। আমার শোক, মানুষ হত্যাকে যে বা যারা জায়েজ/হালাল/প্রয়োজনীয়/অবশ্যম্ভাবি ভাবে তাদের জন্য।
বুঝতে চেষ্টা করেছি, যারা বিশ্বাসী (ইহকাল/পরকাল/বিচার) তারা কেনো এমন বর্বর ভাবনায় আর কাজে মেতে উঠেন। স্মরণকালের ইতিহাসে হিটলারের পড়ে সবচেয়ে বড় গণ হত্যা এবং মানবতা বিরোধী কাজ সংঘটিত হয়েছে আমাদের ছোট্র বদ্বীপে, আমাদের বাংলাদেশে। কিছু মানুষ আজো বিশ্বাস করে, এসব গণহত্যা কিংবা মানবতা বিরোধী কাজ গ্রহণ যোগ্য।.. কারন কি ? কেনো তারা এমন ভাবেন ?
আমার অনুধাবন ধর্ম গোষ্ঠীর নেতৃত্ব আর ধর্ম গ্রন্থ গুলো বিকৃত চিন্তার মানুষ হতে যোগান যুগিয়েছে। সেই চিন্তা থেকেই জানতে চেষ্টা করেছি, কোথা থেকে এলো এই সকল ধর্ম গ্রন্থ।
আমার ব্যাক্তিগত আগ্রহের কারনে, প্রথমেই শুরু করেছিলাম, ভারতীয় হিন্দু ধর্মের গ্রন্থ গুলো থেকে, এই সিরিজে বাইবেল ও কোরান নিয়েও খুজবো কিভাবে এলো ধর্মের কাগুজে লাঠিয়াল এই সব ধর্ম গ্রন্থ।

ধর্ম গ্রন্থের সৃষ্টি আর মানুষের লিখার জ্ঞান অর্জনের ইতিহাস খুব কাছাকাছি হতে হবে। তবে লিখিত রুপ ছাড়াও স্মৃতিতে ধরে রাখার মাধ্যমে ধর্মের মন্ত্রের চর্চা হয়ে থাকতে পারে।
প্রায় ২০০ অধ্যায়ের ''দি বুক অব ডেড'' ছিলো পৃথিবীর প্রাচীণতম ধর্ম গ্রন্থ।  বুক অব ডেডে থেকে যে কয়েকটি বিষয়টি উঠে আসে তার মাঝে,
১। মানুষ হত্যা না করা,
২। ক্ষুধার্তকে সাহায্য করা,
৩। স্বজাতীর বিনাশ বা ক্ষতি না করা,
৪। কাউকে দুঃখ না দেয়া,
৫। পানির প্রবাহ রোধ না করা,
৬। লুট বা চুরি না করা ইত্যাদি।

পাঠক লক্ষ্য করুন, এক সাথে বসবাস করতে এবং নিজেকে অন্যের থেকে নিরাপদ্ রাখতে যা প্রয়োজন তার সব কিছুই এই বিধান গুলো গুঢ় অর্থ। নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে অন্যের বিনাশ গ্রহণযোগ্য সেই আদিকাল থেকেই। মিশরের পিরামিড গুলোতে যেসব চিত্রের পাঠোধ্বার হয়েছে তার মাঝে ঈশ্বর বা খোদা সংক্রান্ত চিত্র গুলো শুধূ হাস্যকর নয়, যুক্তিহীন কূপমন্ডুকতা মাত্র। তাই ঈশ্বরের যে চিত্র মানুষের মাঝে পাওয়া যায় তার পক্ষে কোন আইন তৈরী করা আর মানুষের পৃথিবীতে আসা শুধু কঠিন নয় অসম্ভব আর অবাস্তবও বটে।

মানুষের ইতিহাসে ব্যাবিলনের সম্রাট হাম্মুরাবি'র আইন গুলোকে সবচেয়ে বিন্যাস্ত আর তুলনামূলক সফিস্টিকেটেড আইন বলা চলে যা আজকের যুগে অগ্রহণযোগ্য, কিছু কিছু বর্বর বলে বিবেচিত।
মজার বিষয় হলো, মানুষ আইন করে কিন্তু যখন সে তার প্রয়োগ নিয়ে চিন্তিত হয়েছে তখনই সে উদ্ভাবন করেছে এক কল্পিত ঈশ্বরের, যার দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষ, বিরোধী মতকে দমন করা যায়। শ্রেণী ভিত্তিক সমাজের রক্ষা কবচ হয়ে উঠে ধর্ম আর ধর্মের আইন গুলো। চলুন দেখা যাক এক নজরে ভারতীয় হিন্দু ধর্মের ভিত্তি ধর্মগ্রন্থ গুলো কি কি...

Monday 25 July 2011

ইসলামী আইন তথা ফতোয়া সন্ত্রাস এবং বাংলাদেশ ।


ইদানীং পত্রিকার পাতা কিংবা টিভির সংবাদে প্রায়শই যে সংবাদ টি আমাদের বিবেক কে কাদিয়ে যায়, আমাদের কে ভয় পাইয়ে দিয়ে যায় তা হলো ফতোয়া সন্ত্রাস।আর ঠিক সেই সময়ে যে খবর টি আমাদের অস্থির করে রাখে তা হলো এক দল দাড়ী-টুপি-পাঞ্জাবী পরিহিত হায়েনার মিছিল-সমাবেশ। এরা নাকি ইসলামি আইন ( ফতোয়া ) রক্ষার আন্দোলন করছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ কো্টি মানুষ যার যার ধর্ম-কর্ম শান্তিতে পালন করে আসছে।কারো কোন সমস্যা নেই শুধু এরা ছাড়া। বস্তুত এদের এই লম্ফ-জম্ফের মধ্য দিয়ে তাদের জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাতসারে তারা যে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সংবিধান এবং সর্বোপরি ৭১ এর চেতনা বিরোধী এক মোর্চা গড়ছেন, তারা কি তা জানেন ?


যদি না জেনে করে থাকেন তবে তাদের জন্য জাতীয় ভাবে তওবার আয়োজন করা অতি জরুরী। আর যদি জেনে শুনে বুঝে করে থাকেন তবে সকল দেশ প্রেমিক নাগরিক এবং সরকার কে খুজতে হবে এদের এহেন ধৃষ্টতার মূল কোথায় ?
সভ্যতার চলমান চক্রে মানুষ নিজেকে ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, ভাষার নামে কিংবা ক্ষমতার বলে , বহু দলে,বহু দেশে,বহু জাতীতে বিভক্ত করে রেখেছে। এরকমই এক বিভক্তি ঘটে ১৯৪৭ সালে। ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় দুটি দেশ, ভারত ( হিন্দু ) ও পাকিস্তান ( মুসলমান )। বস্তুত এই দেশ বিভাগ ছিলো মুসলমানদের আকাঙ্ক্ষা। মুসলমানগণ তাদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র, ইসলামী শাষণ, অধিক সুযোগ সুবিধার লাভের জন্য পাকিস্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু পাকিস্তান কখনোই ইসলামী রাস্ট্র হয়নি।অপর দিকে পাকিস্তানের পুর্বাংশের অর্থ্যাৎ বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ মাতৃভাষা, সুষম উন্নয়ন, স্বাধীকারের দাবিতে এক গঙ্গা রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক ছোট ব-দ্বীপ কে স্বাধীন করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর বাংলার মানুষ তাদের জন্য সংবিধান রচনা করে। একমাত্র সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ছাড়া কেউ সেই সংবিধানের বিরোধীতা করেননি। বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান,সমস্ত বাঙ্গালী সেই সংবিধান কে সবার জন্য মনো্নীত করেন। সেই থেকে বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রের আইনের ভিত্তি এই সংবিধান। ৭১ সালে কিছু বাংলা ভাষী যারা পাকিস্তানের সমর্থক ছিলো, যুদ্ধাপরাধ করেছিলো তারা কিন্তু নিঃশেষ হয়ে যায়নি। এরা ধর্মের খোলসে ছড়িয়ে পড়েছে সমাজ,রাস্ট্রের সবখানে। এরা এদের ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে চলেছে নিরন্তর।তাই স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও যখন দেখি নারীর প্রতি বৈষম্য ,ধর্মের নামে নির্যাতন তখন মনে হয় প্রকৃত স্বাধীনতা আসেনি। ৭৫ এর পর থেকে যখন দেখি জামাতে ইসলামী,ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি, ইসলামী ঐক্যজোট এর ব্যানারে ৭১ এর পরাজিত শক্তি কো্রান গলায় নিয়ে আমাদের সমাজ জীবনে,রাস্ট্র জীবনে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে তখন ডাক দিতে ইচ্ছে হয় আরেক সংগ্রামের। এরা কেন ভুলে যায় এটা ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান নয়, এটা আমাদের গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।


মানুষ জীবনের প্রতিটি ধাপে শৃঙ্খলা, রীতি-নীতি, এবং জ্ঞানের আলোকে ক্রমে ক্রমে সভ্যতার চরম বিকাশের পানে এগিয়ে চলেছে। জীবনকে নান্দনিক,বিজ্ঞানময়,সভ্য করতে নিরলস অগ্রযাত্রার মূল সূত্র দলগত বা সামাজিক বা নাগরিক জীবনের ভাবনা ।এই ভাবনার ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ইচ্ছা থেকেই ধীরে ধীরে বিভক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে আজকের নাগরিক সভ্যতা। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিস্টের আলোকে গড়ে উঠা মানুষও ভিন্ন ভিন্ন রীতি-নীতি, সভ্যতা, বিশ্বাস সূচনার মাধ্যমে বৈচিত্রময় করে তুলেছে এই পৃথীবিকে। মানুষ যখন প্রকৃ্তির সাথে লড়াই করতে করতে সামাজিক জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন থেকেই মানুষের ভেতর শুরু হয় ক্ষুধার জন্য লড়াই, যৌনতার জন্য লড়াই, ক্ষমতার জন্য লড়াই।আর তাই বৈচিত্রময় এই জীবন কে স্থির, সুরক্ষিত এবং সমতা ও সহজীকরনের জন্য মানুষ তৈরি করে আইন। সেই আদিম মানুষ গুলোর ছিলো নানান রকম প্রতিবন্ধকতা, ছিলো জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। মানুষ ভয় পেতে শুরু করে তার অক্ষমতাকে, অদৃশ্য আর অন্ধকারে এসে ভর করেন যত ভগবান, আল্লাহ, গড নামক রাম গরুড়ের ছানারা।আর সেই সুযোগে আদিম সেই মানুষ কে আরও সামাজিক, নিয়মতান্ত্রিক করতে সময়ের শ্রেষ্ঠ কিছু মানুষ তাদের চিন্তা শক্তির সর্বোচ্চ ব্যা্বহার করে সৃস্টি করে ধর্ম। সেই সুবাধে আধুনিক এই সময়ে আমরা দু ধরনের আইনের সাথে পরিচিত। ১। মানব রচিত আইন। ২। ধর্মীয় আইন।
পৃথিবীতে বর্তমানে ১৯৬ টি রাস্ট্র রয়েছে। প্রতিটি রাস্ট্রের রয়েছে নিজেকে তথা তার নাগরিককে বিকশিত করার, নিরাপদ রাখার, সহজ জীবন নিশ্চিত করার আইন। নানা দেশ নানা আইন। মানুষ নিজের প্রয়োজনে এসব আইন সৃস্টি করেছে, সময়ে সময়ে মানুষের প্রয়োজনে এসবের সংশোধন করেছে।
অতি সম্প্রতি নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮ এবং ফতোয়া নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃস্টির পায়তারা চলছে। নারী উন্নয়ন নীতিমালা তে “সম্পত্তিতে নারীর সমান অধীকার’’ কিংবা ২০০১ সালের ফতোয়া নিষিদ্ধ রায় এসব তাদের সমস্যা নয়। তারা তাদের অপকর্ম করছে,করে যাবে। আর এসবের পেছনে একমাত্র কারন, সমাজে তাদের অবস্থান জানান দেয়া, যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে জনগনের দৃস্টি অন্যত্র আকর্ষণ করা, বাংলাদেশের মানুষকে মধ্যযুগের গুহাতে ঠেলে দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলাদেশের মানুষ, জনগণের সরকার যদি মনে করেন তারা জনগণের কল্যাণের জন্য কোন আইন করবেন তবে তাদের সেই এখতিয়ার আছে। এর বিরোধীতা করা ষড়যন্ত্রের শামিল।এসব ইসলামিস্টরা চেচিয়ে বেড়ায় ইসলাম নারীকে মর্যাদা দিয়েছে,তবে বাংলাদেশের আইন নারীকে সম্পত্তিতে সমান অধিকার দিলে দোষ কোথায় ? নারীকে যখন ফতোয়া দিয়ে ধর্মের নামে নির্যাতন করা হয় তখন ইসলাম নারীকে কোন মর্যাদায় ভুষিত করে ? মধ্যযুগীয় বর্বর ইসলামী আইন চালু করে অমুসলীমদের জিজীয়া প্রদান করে আগাছা হয়ে থাকা ৭১ এর চেতনার সবচেয়ে বড় পরাজয়। জাতী, ধর্ম নির্বিশেষে বাংলার মানুষ যে স্বাধীনতা এনেছে আজ যদি তা ইসলামের নামে মুসলমানদের কাছে ভাড়া দিয়ে দেয়া হয় তবে এর চেয়ে বড় পরাজয় আর নেই।
তাই জানতে হবে ইসলামী আইন কি ? ফতোয়া কি ? আমাদের দেশে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না ? সাংবিধানীক ভাবে এসব ইসলামী গোবর্জনা আনয়নের সুযোগ রয়েছে কি না ? এসব ইস্যু যারা সৃস্টি করে তাদের আসল উদ্দেশ্য কি ?
আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে তথাকথিত বর্বর যুগে ( তুলনা সুচক ভাবনায় প্রতিটি যুগ তার আগের যুগের চেয়ে সভ্য বিবেচিত) ব্যাক্তি মুহাম্মাদ নিজেকে শেষ নবী দাবী করে ইসলাম নামক ধর্ম প্রবর্তন করেন। তার অনুসারীগণ তার কথিত কিছু বাণীকে কোরআন এবং তার প্রতিদিনের জীবন আচরন কে হাদীস নামে প্রচার করেন। তার মৃত্যুর প্রায় ২০০ বছর পর হাদীস সংগ্রহ হয় এবং ৩০০-৪০০ বছর পর ইসলামী আইন নামক কিছু নিয়ম নীতি প্রনয়ণ হয়। বস্তুত মুহাম্মাদ নিজের প্রয়োজনে কিছু নিয়ম নিজে প্রনয়ন করেন, কিছু সেই সময়ের চলমান সমাজ থেকে গ্রহন করেন। অতঃপর কিছু ইসলামী বিশেষজ্ঞ ইসলাম কে সুশৃঙ্খল করতে ইসলামী আইনের উপর কাজ করেন। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সমর্থিত ৪ টি ইসলামী আইন গ্রুপ রয়েছে। ১। হানাফী ২। শাফেয়ী ৩। মালেকী ৪। হাম্বলী ।এছাড়াও রয়েছে সালাফী ও শিয়া সম্প্রদায়।
সমাজ জীবনে আমরা ফতোয়া শব্দের সাথে পরিচিত। ফতোয়া শব্দটি আরবী,এর অর্থ মতামত। এর পারিভাষিক অর্থ, একজন ইসলাম বিষয়ক মুসলিম বিশেষজ্ঞ কতৃক প্রদত্ত ইসলামিক আইনের ধর্মীয় মতামত, যা ফতোয়া নামে পরিচিত। যিনি ফতোয়া প্রধান করেন তিনি মুফতি।

বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থায় একমাত্র কওমি মাদ্রাসা সমুহে ইসলামী আইন বা ফতোয়া বিষয়ে পড়ার ব্যাবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের ১৫২৫০ টি কওমি মাদ্রাসার মধ্যে গুটি কয়েক মাদ্রাসায় এ সুযোগ বিদ্যমান। এ সকল মাদ্রাসার শিক্ষকগণ সময়পোযুগি নন,তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা,নেই কোন গবেষণা সুযোগ, প্রচলিত বিচার ব্যাবস্থা সম্পর্কে নেই কোন অভিজ্ঞতা। মাদ্রাসাগুলো থেকে বের হওয়া আলেমগণ সমাজে সম্মানিত, এরা ব্যাক্তি জীবনে মসজিদে ইমামতি, মাদ্রাসার শিক্ষক হিসাবে কাজ করে থাকেন। বাংলাদেশে ২৫০৩৯৯ টি মসজিদ রয়েছে, অর্থ্যাৎ ঠিক সম পরিমান ইমাম রয়েছেন। এসব নরাধমদের বেশির ভাগ হাদীস বিষয়ে পড়াশুনা করা মৌলোভী। এসব ইমামদের যোগ্যতা, দক্ষতা সম্পর্কে জানার কোন সুযোগ নেই। এই ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকগণ আমাদের বিচার ব্যাবস্থাকে পাশ কাটিয়ে ফতোয়ার মতো ফালতু এক বিচার ব্যাবস্থা চালু রেখেছে। যার ফলে বাংলাদেশের ধর্মভীরু, হত দরীদ্র মানুষ বিশেষ করে মহিলা জনগোষ্ঠীর জন্য ফতোয়া আজ অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে আজ পর্যন্ত রাস্ট্রীয় ব্যাবস্থাপনা, অর্থনীতি, ধর্মেয় আচার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এরকম বিষয়ে কোন ফতোয়া প্রদান করা হয়না। শুধুমাত্র অবলা, অসহায় নারী যখন ধর্ষিত হয় কিংবা তালাক পায় তখনি খোদার আইন তার শিশ্ন নিয়ে নারীকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
বাংলাদেশ এক গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম পেয়েছে। এ যুদ্ধে কেউ ধর্মের ভিত্তিতে যোগদান করেনি। কোন ধর্ম রাস্ট্রের জন্য মানুষ যুদ্ধ করেনি। ইসলামের নামে পাকিস্তান গঠন করে মানুষের কল্যাণ করা যায়নি, তাই সবার জন্য এক দেশ গঠন করে বাঙ্গালীরা। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির আইনগত ভিত্তি রচনা করতে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের গণপরিষদ একটি সংবিধান গ্রহন করে। সেই সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনী ( ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল ) এবং এরপর ৮ম সংশোধনীর ( ১৯৮৮ ) মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধান কে মুসলমানী করন করা হয়। যার হাত ধরে আজ ৭১ এর পরাজিত শক্তি আবার ধর্মের খোলসে সবার উপর ইসলাম চাপিয়ে দেবার চেস্টা করছে। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে ধর্ম যার যার, রাস্ট্র সবার। তাই সংবিধানের ৩য় ভাগের ৪১ তম অনুচ্ছেদে প্রতিটি মানুষ কে ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছে। বাংলাদেশে ৮৫ % মানুষ মুসলমান, অবশিস্ট মানুষ হিন্দু,খৃস্টান, বৌদ্ধ এবং উপজাতী। এখন যদি প্রত্যেকের জন্য আলাদা করে ধর্ম আইন দিয়ে সংবিধান ভরে দেয়া হয় তবে তা পাঁচ স্বামী নিয়ে দ্রৌপদীর সামাজিক বসবাসের মতো হবে, যেখানে রাস্ট্র একটা সার্কাসের দলে পরিনত হবে, যা কোন দেশ প্রেমিকের কাম্য হতে পারেনা। উদাহরন সরুপ উল্লেখ করা যায়, ১ম হিজরীতে মদীনার ইহুদীদের সাথে এবং নবম হিজরীতে বনু নাযরানের ( খৃস্টান ) সাথে মুহাম্মদের চুক্তিই প্রমান করে ধর্ম যার যার নিজস্ব ব্যাপার।

বাংলাদেশের মানুষ উষ্ণ মন্ডলীয় অঞ্চলের শংকর প্রজাতীর মানুষ তাই এখানে ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে রাস্ট্র পর্যায়ে আনলে তা সংঘাত আনবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, হানাফী,শাফেয়ী,শিয়া,ওহাবী ইত্যাদী বহু দলে বিবক্ত বাঙ্গালী মুসলমানরা বাংলাদেশ কে আরেক সুমালীয়ায় পরিনত করবে। এখন যদি রাস্ট্রকে যদি অধিকাংশ মানুষের ভিত্তিতে ধর্মীয় করন করা হয় তবে সংখ্যা লঘুরা যিযিয়া প্রদান করে বসবাস করতে হবে অথবা কাউকে ইসলামের সমভাবাপন্ন মনে না হলে তাকে হত্যা করা হবে ( হাদীস নং ৩৬৯, বোখারী )। যা সংবিধানের ৩য় ভাগের ৩৯ এর ১ ও ২ অনুচ্ছেদ মানুষকে যে বাক, ভাব প্রকাশ, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা দিয়েছে মানুষ তা হারাবে।
তাই মহামান্য হাই কোর্ট ২০০১ সালে ( বিচারপতি গোলাম রব্বানী ও নাজমুন আরা সুলতানা ) বাংলাদেশে সকল প্রকার ফতোয়া ( ইসলামী আইন) চর্চা নিষিদ্ধ করেন।
বাংলাদেশে ফতোয়া সন্ত্রাস এবং এর কারন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এসবের মূল কারন গুলি নিন্মরুপ...
১। দরীদ্র।
২। অধিক জনসংখ্যা।
৩। ৭১ এর সংবিধান পরিবর্তন।
৪। আন্তর্জাতিকভাবে ইসলামী সন্ত্রাস বৃদ্ধি।
৫। সমাজে অসম উন্নয়ন।
৬। স্কুলের তুলনায় মাদ্রাসার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
৭। জেন্ডার অসমতা।
৮। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্নীতি।
৯। বিচার বিভাগীয় জটিলতা।
১০। ধর্ম, ধর্মীয় ব্যাক্তি, সমাজপতিদের অসৎ যোগসাজেশ।
উল্লেখিত কারনে বৃদ্ধি পাওয়া ফতোয়া সন্ত্রাসের একমাত্র শিকার পিছিয়ে থাকা নারী সমাজ। পুরুষবাদী সমাজে নারীকে দাবিয়ে রাখতে ধর্মের নামে নির্যাতন করার জন্য মৌলোভী এবং তাদের মুনিব গং সব সময় পাগড়ী পরে কোরান-হাদীস খুলে বসে থাকেন।
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি কতৃক পরিচালিত জরিপে দেখা যায় যে গত ৪ মাসে বাংলাদেশের ৭টি জেলায় ৫০ জন মহিলা ফতোয়া সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। অতি সম্প্রতি ( জানুয়ারী,২০১১ ) শরিয়তপুরের এক কিশোরী শরীয়া বিচারে ৮০টি বেত্রাগাতের পর মারা যায়। গত এক দশকের ফতোয়া সন্ত্রাসের পরিসংখ্যান থেকে যায় যে ...২০০৯ ( ৪৮ জন ), ২০০৮ ( ২১ জন ), ২০০৭ (৭৭ জন), ২০০৬ ( ৬৫ জন ), ২০০৫ (৬৯ জন ), ২০০৪ ( ৫৮ জন ), ২০০৩ ( ৪৪ জন ), ২০০২ ( ৩৯ জন) মহিলা ফতোয়ার শিকার হয়েছেন।
একই ভাবে ১৯৯২-২০০১ সালের মধ্যে ২৪০ টি ফতোয়ার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীগণ। এসব দেখে মনে হয় আমরা আজো সভ্য হতে পারিনি। আজ যদি নারী ভাবে রাস্ট্র ও কল্পনার আল্লাহ-খোদা-ভগবান শুধু পুরুষ আর ধনীদের জন্য তবে কি তা অমুলক হবে ?
যে খোদারা মরিয়ম কে ধর্ষণ করে তাকে মহান করে প্রচার করে, যে ভগবান কিশোরীদের নদীর ধারে ধর্ষণ করে তার লীলা বলে চালিয়ে দেয়, যে ধর্ম নেতারা তাদের যৌনতার জন্য নতুন বিধান জারী করে তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়ার সময় আজ এসেছে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য তাদের সংবিধান এবং তারা নিজেই যথেস্ট, তাদের জন্য কোন খোদায়ী আইনের প্রয়োজন নেই।
তথ্য সূত্র ঃ
১। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
২। বাংলাদেশের সংবিধান।
৩। বাংলাদেশের অর্থনীতির চালচিত্র – আনু মুহাম্মাদ।
৪। প্রথম আলো।
৫। বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড।
৬। ইবনে হেশাম, ১ম খন্ড - পৃঃ ৫০৩-৫০৪।
৭। ফতহুল বারী, ৮ম খন্ড - পৃঃ ৯৪-৯৫।
৮। যাদুল মায়াদ,৩য় খন্ড – পৃঃ ৩৮-৪১।
৯। আর রাহিকুল মাখতুম – ছফিউর রহমান মোবারকপুরি।
১০। সাপ্তাহিক সুরমা।
১১। উইকিপিডিয়া।
১২। বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় ওয়েব সাইট।

Sunday 17 July 2011

গুজারিশ এবং নাগরিকের ইচ্ছা মৃত্যু।

নানা রকম গল্প নিয়ে প্রতি বছর সিনেমা মুক্তি পায়। কিছু সিনেমা বিনোদন দানের পাশাপাশি আমাদের বুদ্ধি জগতে, বিবেক কে নাড়া দিয়ে যায়। একজন গল্পকার মানুষের বর্তমান, অতীত এবং অনাগত জীবন ও সময়ের ব্যাক্ত বা অব্যাক্ত কথা মালা নিয়ে গল্প রচনা করেন। সেই সব গল্প গুলোকে ব্যাবসা, বিনোদন বা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে একজন সিনেমা পরিচালক দৃশ্যায়িত করেন। লক্ষ–কোটি মানুষকে এক সাথে কোন বার্তা পোঁছানোর এমন বাস্তব ব্যাবস্থা আর কিছুতেই নেই। আর হয়তোবা এ কারনেই সিনেমা আজ গণ মানুষের মনের লুকোনো ভাব প্রকাশের সবচেয়ে বড় ও সহজ মাধ্যম।