ইদানীং পত্রিকার পাতা কিংবা টিভির সংবাদে প্রায়শই যে সংবাদ টি আমাদের বিবেক কে কাদিয়ে যায়, আমাদের কে ভয় পাইয়ে দিয়ে যায় তা হলো ফতোয়া সন্ত্রাস।আর ঠিক সেই সময়ে যে খবর টি আমাদের অস্থির করে রাখে তা হলো এক দল দাড়ী-টুপি-পাঞ্জাবী পরিহিত হায়েনার মিছিল-সমাবেশ। এরা নাকি ইসলামি আইন ( ফতোয়া ) রক্ষার আন্দোলন করছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ কো্টি মানুষ যার যার ধর্ম-কর্ম শান্তিতে পালন করে আসছে।কারো কোন সমস্যা নেই শুধু এরা ছাড়া। বস্তুত এদের এই লম্ফ-জম্ফের মধ্য দিয়ে তাদের জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাতসারে তারা যে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সংবিধান এবং সর্বোপরি ৭১ এর চেতনা বিরোধী এক মোর্চা গড়ছেন, তারা কি তা জানেন ?
যদি না জেনে করে থাকেন তবে তাদের জন্য জাতীয় ভাবে তওবার আয়োজন করা অতি জরুরী। আর যদি জেনে শুনে বুঝে করে থাকেন তবে সকল দেশ প্রেমিক নাগরিক এবং সরকার কে খুজতে হবে এদের এহেন ধৃষ্টতার মূল কোথায় ?
সভ্যতার চলমান চক্রে মানুষ নিজেকে ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, ভাষার নামে কিংবা ক্ষমতার বলে , বহু দলে,বহু দেশে,বহু জাতীতে বিভক্ত করে রেখেছে। এরকমই এক বিভক্তি ঘটে ১৯৪৭ সালে। ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় দুটি দেশ, ভারত ( হিন্দু ) ও পাকিস্তান ( মুসলমান )। বস্তুত এই দেশ বিভাগ ছিলো মুসলমানদের আকাঙ্ক্ষা। মুসলমানগণ তাদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র, ইসলামী শাষণ, অধিক সুযোগ সুবিধার লাভের জন্য পাকিস্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু পাকিস্তান কখনোই ইসলামী রাস্ট্র হয়নি।অপর দিকে পাকিস্তানের পুর্বাংশের অর্থ্যাৎ বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ মাতৃভাষা, সুষম উন্নয়ন, স্বাধীকারের দাবিতে এক গঙ্গা রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক ছোট ব-দ্বীপ কে স্বাধীন করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর বাংলার মানুষ তাদের জন্য সংবিধান রচনা করে। একমাত্র সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ছাড়া কেউ সেই সংবিধানের বিরোধীতা করেননি। বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান,সমস্ত বাঙ্গালী সেই সংবিধান কে সবার জন্য মনো্নীত করেন। সেই থেকে বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রের আইনের ভিত্তি এই সংবিধান। ৭১ সালে কিছু বাংলা ভাষী যারা পাকিস্তানের সমর্থক ছিলো, যুদ্ধাপরাধ করেছিলো তারা কিন্তু নিঃশেষ হয়ে যায়নি। এরা ধর্মের খোলসে ছড়িয়ে পড়েছে সমাজ,রাস্ট্রের সবখানে। এরা এদের ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে চলেছে নিরন্তর।তাই স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও যখন দেখি নারীর প্রতি বৈষম্য ,ধর্মের নামে নির্যাতন তখন মনে হয় প্রকৃত স্বাধীনতা আসেনি। ৭৫ এর পর থেকে যখন দেখি জামাতে ইসলামী,ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি, ইসলামী ঐক্যজোট এর ব্যানারে ৭১ এর পরাজিত শক্তি কো্রান গলায় নিয়ে আমাদের সমাজ জীবনে,রাস্ট্র জীবনে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে তখন ডাক দিতে ইচ্ছে হয় আরেক সংগ্রামের। এরা কেন ভুলে যায় এটা ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান নয়, এটা আমাদের গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
মানুষ জীবনের প্রতিটি ধাপে শৃঙ্খলা, রীতি-নীতি, এবং জ্ঞানের আলোকে ক্রমে ক্রমে সভ্যতার চরম বিকাশের পানে এগিয়ে চলেছে। জীবনকে নান্দনিক,বিজ্ঞানময়,সভ্য করতে নিরলস অগ্রযাত্রার মূল সূত্র দলগত বা সামাজিক বা নাগরিক জীবনের ভাবনা ।এই ভাবনার ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ইচ্ছা থেকেই ধীরে ধীরে বিভক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে আজকের নাগরিক সভ্যতা। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিস্টের আলোকে গড়ে উঠা মানুষও ভিন্ন ভিন্ন রীতি-নীতি, সভ্যতা, বিশ্বাস সূচনার মাধ্যমে বৈচিত্রময় করে তুলেছে এই পৃথীবিকে। মানুষ যখন প্রকৃ্তির সাথে লড়াই করতে করতে সামাজিক জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন থেকেই মানুষের ভেতর শুরু হয় ক্ষুধার জন্য লড়াই, যৌনতার জন্য লড়াই, ক্ষমতার জন্য লড়াই।আর তাই বৈচিত্রময় এই জীবন কে স্থির, সুরক্ষিত এবং সমতা ও সহজীকরনের জন্য মানুষ তৈরি করে আইন। সেই আদিম মানুষ গুলোর ছিলো নানান রকম প্রতিবন্ধকতা, ছিলো জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। মানুষ ভয় পেতে শুরু করে তার অক্ষমতাকে, অদৃশ্য আর অন্ধকারে এসে ভর করেন যত ভগবান, আল্লাহ, গড নামক রাম গরুড়ের ছানারা।আর সেই সুযোগে আদিম সেই মানুষ কে আরও সামাজিক, নিয়মতান্ত্রিক করতে সময়ের শ্রেষ্ঠ কিছু মানুষ তাদের চিন্তা শক্তির সর্বোচ্চ ব্যা্বহার করে সৃস্টি করে ধর্ম। সেই সুবাধে আধুনিক এই সময়ে আমরা দু ধরনের আইনের সাথে পরিচিত। ১। মানব রচিত আইন। ২। ধর্মীয় আইন।
পৃথিবীতে বর্তমানে ১৯৬ টি রাস্ট্র রয়েছে। প্রতিটি রাস্ট্রের রয়েছে নিজেকে তথা তার নাগরিককে বিকশিত করার, নিরাপদ রাখার, সহজ জীবন নিশ্চিত করার আইন। নানা দেশ নানা আইন। মানুষ নিজের প্রয়োজনে এসব আইন সৃস্টি করেছে, সময়ে সময়ে মানুষের প্রয়োজনে এসবের সংশোধন করেছে।
অতি সম্প্রতি নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮ এবং ফতোয়া নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃস্টির পায়তারা চলছে। নারী উন্নয়ন নীতিমালা তে “সম্পত্তিতে নারীর সমান অধীকার’’ কিংবা ২০০১ সালের ফতোয়া নিষিদ্ধ রায় এসব তাদের সমস্যা নয়। তারা তাদের অপকর্ম করছে,করে যাবে। আর এসবের পেছনে একমাত্র কারন, সমাজে তাদের অবস্থান জানান দেয়া, যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে জনগনের দৃস্টি অন্যত্র আকর্ষণ করা, বাংলাদেশের মানুষকে মধ্যযুগের গুহাতে ঠেলে দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলাদেশের মানুষ, জনগণের সরকার যদি মনে করেন তারা জনগণের কল্যাণের জন্য কোন আইন করবেন তবে তাদের সেই এখতিয়ার আছে। এর বিরোধীতা করা ষড়যন্ত্রের শামিল।এসব ইসলামিস্টরা চেচিয়ে বেড়ায় ইসলাম নারীকে মর্যাদা দিয়েছে,তবে বাংলাদেশের আইন নারীকে সম্পত্তিতে সমান অধিকার দিলে দোষ কোথায় ? নারীকে যখন ফতোয়া দিয়ে ধর্মের নামে নির্যাতন করা হয় তখন ইসলাম নারীকে কোন মর্যাদায় ভুষিত করে ? মধ্যযুগীয় বর্বর ইসলামী আইন চালু করে অমুসলীমদের জিজীয়া প্রদান করে আগাছা হয়ে থাকা ৭১ এর চেতনার সবচেয়ে বড় পরাজয়। জাতী, ধর্ম নির্বিশেষে বাংলার মানুষ যে স্বাধীনতা এনেছে আজ যদি তা ইসলামের নামে মুসলমানদের কাছে ভাড়া দিয়ে দেয়া হয় তবে এর চেয়ে বড় পরাজয় আর নেই।
তাই জানতে হবে ইসলামী আইন কি ? ফতোয়া কি ? আমাদের দেশে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না ? সাংবিধানীক ভাবে এসব ইসলামী গোবর্জনা আনয়নের সুযোগ রয়েছে কি না ? এসব ইস্যু যারা সৃস্টি করে তাদের আসল উদ্দেশ্য কি ?
আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে তথাকথিত বর্বর যুগে ( তুলনা সুচক ভাবনায় প্রতিটি যুগ তার আগের যুগের চেয়ে সভ্য বিবেচিত) ব্যাক্তি মুহাম্মাদ নিজেকে শেষ নবী দাবী করে ইসলাম নামক ধর্ম প্রবর্তন করেন। তার অনুসারীগণ তার কথিত কিছু বাণীকে কোরআন এবং তার প্রতিদিনের জীবন আচরন কে হাদীস নামে প্রচার করেন। তার মৃত্যুর প্রায় ২০০ বছর পর হাদীস সংগ্রহ হয় এবং ৩০০-৪০০ বছর পর ইসলামী আইন নামক কিছু নিয়ম নীতি প্রনয়ণ হয়। বস্তুত মুহাম্মাদ নিজের প্রয়োজনে কিছু নিয়ম নিজে প্রনয়ন করেন, কিছু সেই সময়ের চলমান সমাজ থেকে গ্রহন করেন। অতঃপর কিছু ইসলামী বিশেষজ্ঞ ইসলাম কে সুশৃঙ্খল করতে ইসলামী আইনের উপর কাজ করেন। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সমর্থিত ৪ টি ইসলামী আইন গ্রুপ রয়েছে। ১। হানাফী ২। শাফেয়ী ৩। মালেকী ৪। হাম্বলী ।এছাড়াও রয়েছে সালাফী ও শিয়া সম্প্রদায়।
সমাজ জীবনে আমরা ফতোয়া শব্দের সাথে পরিচিত। ফতোয়া শব্দটি আরবী,এর অর্থ মতামত। এর পারিভাষিক অর্থ, একজন ইসলাম বিষয়ক মুসলিম বিশেষজ্ঞ কতৃক প্রদত্ত ইসলামিক আইনের ধর্মীয় মতামত, যা ফতোয়া নামে পরিচিত। যিনি ফতোয়া প্রধান করেন তিনি মুফতি।
বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থায় একমাত্র কওমি মাদ্রাসা সমুহে ইসলামী আইন বা ফতোয়া বিষয়ে পড়ার ব্যাবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের ১৫২৫০ টি কওমি মাদ্রাসার মধ্যে গুটি কয়েক মাদ্রাসায় এ সুযোগ বিদ্যমান। এ সকল মাদ্রাসার শিক্ষকগণ সময়পোযুগি নন,তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা,নেই কোন গবেষণা সুযোগ, প্রচলিত বিচার ব্যাবস্থা সম্পর্কে নেই কোন অভিজ্ঞতা। মাদ্রাসাগুলো থেকে বের হওয়া আলেমগণ সমাজে সম্মানিত, এরা ব্যাক্তি জীবনে মসজিদে ইমামতি, মাদ্রাসার শিক্ষক হিসাবে কাজ করে থাকেন। বাংলাদেশে ২৫০৩৯৯ টি মসজিদ রয়েছে, অর্থ্যাৎ ঠিক সম পরিমান ইমাম রয়েছেন। এসব নরাধমদের বেশির ভাগ হাদীস বিষয়ে পড়াশুনা করা মৌলোভী। এসব ইমামদের যোগ্যতা, দক্ষতা সম্পর্কে জানার কোন সুযোগ নেই। এই ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকগণ আমাদের বিচার ব্যাবস্থাকে পাশ কাটিয়ে ফতোয়ার মতো ফালতু এক বিচার ব্যাবস্থা চালু রেখেছে। যার ফলে বাংলাদেশের ধর্মভীরু, হত দরীদ্র মানুষ বিশেষ করে মহিলা জনগোষ্ঠীর জন্য ফতোয়া আজ অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে আজ পর্যন্ত রাস্ট্রীয় ব্যাবস্থাপনা, অর্থনীতি, ধর্মেয় আচার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এরকম বিষয়ে কোন ফতোয়া প্রদান করা হয়না। শুধুমাত্র অবলা, অসহায় নারী যখন ধর্ষিত হয় কিংবা তালাক পায় তখনি খোদার আইন তার শিশ্ন নিয়ে নারীকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
বাংলাদেশ এক গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম পেয়েছে। এ যুদ্ধে কেউ ধর্মের ভিত্তিতে যোগদান করেনি। কোন ধর্ম রাস্ট্রের জন্য মানুষ যুদ্ধ করেনি। ইসলামের নামে পাকিস্তান গঠন করে মানুষের কল্যাণ করা যায়নি, তাই সবার জন্য এক দেশ গঠন করে বাঙ্গালীরা। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির আইনগত ভিত্তি রচনা করতে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের গণপরিষদ একটি সংবিধান গ্রহন করে। সেই সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনী ( ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল ) এবং এরপর ৮ম সংশোধনীর ( ১৯৮৮ ) মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধান কে মুসলমানী করন করা হয়। যার হাত ধরে আজ ৭১ এর পরাজিত শক্তি আবার ধর্মের খোলসে সবার উপর ইসলাম চাপিয়ে দেবার চেস্টা করছে। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে ধর্ম যার যার, রাস্ট্র সবার। তাই সংবিধানের ৩য় ভাগের ৪১ তম অনুচ্ছেদে প্রতিটি মানুষ কে ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছে। বাংলাদেশে ৮৫ % মানুষ মুসলমান, অবশিস্ট মানুষ হিন্দু,খৃস্টান, বৌদ্ধ এবং উপজাতী। এখন যদি প্রত্যেকের জন্য আলাদা করে ধর্ম আইন দিয়ে সংবিধান ভরে দেয়া হয় তবে তা পাঁচ স্বামী নিয়ে দ্রৌপদীর সামাজিক বসবাসের মতো হবে, যেখানে রাস্ট্র একটা সার্কাসের দলে পরিনত হবে, যা কোন দেশ প্রেমিকের কাম্য হতে পারেনা। উদাহরন সরুপ উল্লেখ করা যায়, ১ম হিজরীতে মদীনার ইহুদীদের সাথে এবং নবম হিজরীতে বনু নাযরানের ( খৃস্টান ) সাথে মুহাম্মদের চুক্তিই প্রমান করে ধর্ম যার যার নিজস্ব ব্যাপার।
বাংলাদেশের মানুষ উষ্ণ মন্ডলীয় অঞ্চলের শংকর প্রজাতীর মানুষ তাই এখানে ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে রাস্ট্র পর্যায়ে আনলে তা সংঘাত আনবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, হানাফী,শাফেয়ী,শিয়া,ওহাবী ইত্যাদী বহু দলে বিবক্ত বাঙ্গালী মুসলমানরা বাংলাদেশ কে আরেক সুমালীয়ায় পরিনত করবে। এখন যদি রাস্ট্রকে যদি অধিকাংশ মানুষের ভিত্তিতে ধর্মীয় করন করা হয় তবে সংখ্যা লঘুরা যিযিয়া প্রদান করে বসবাস করতে হবে অথবা কাউকে ইসলামের সমভাবাপন্ন মনে না হলে তাকে হত্যা করা হবে ( হাদীস নং ৩৬৯, বোখারী )। যা সংবিধানের ৩য় ভাগের ৩৯ এর ১ ও ২ অনুচ্ছেদ মানুষকে যে বাক, ভাব প্রকাশ, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা দিয়েছে মানুষ তা হারাবে।
তাই মহামান্য হাই কোর্ট ২০০১ সালে ( বিচারপতি গোলাম রব্বানী ও নাজমুন আরা সুলতানা ) বাংলাদেশে সকল প্রকার ফতোয়া ( ইসলামী আইন) চর্চা নিষিদ্ধ করেন।
বাংলাদেশে ফতোয়া সন্ত্রাস এবং এর কারন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এসবের মূল কারন গুলি নিন্মরুপ...
১। দরীদ্র।
২। অধিক জনসংখ্যা।
৩। ৭১ এর সংবিধান পরিবর্তন।
৪। আন্তর্জাতিকভাবে ইসলামী সন্ত্রাস বৃদ্ধি।
৫। সমাজে অসম উন্নয়ন।
৬। স্কুলের তুলনায় মাদ্রাসার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
৭। জেন্ডার অসমতা।
৮। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্নীতি।
৯। বিচার বিভাগীয় জটিলতা।
১০। ধর্ম, ধর্মীয় ব্যাক্তি, সমাজপতিদের অসৎ যোগসাজেশ।
উল্লেখিত কারনে বৃদ্ধি পাওয়া ফতোয়া সন্ত্রাসের একমাত্র শিকার পিছিয়ে থাকা নারী সমাজ। পুরুষবাদী সমাজে নারীকে দাবিয়ে রাখতে ধর্মের নামে নির্যাতন করার জন্য মৌলোভী এবং তাদের মুনিব গং সব সময় পাগড়ী পরে কোরান-হাদীস খুলে বসে থাকেন।
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি কতৃক পরিচালিত জরিপে দেখা যায় যে গত ৪ মাসে বাংলাদেশের ৭টি জেলায় ৫০ জন মহিলা ফতোয়া সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। অতি সম্প্রতি ( জানুয়ারী,২০১১ ) শরিয়তপুরের এক কিশোরী শরীয়া বিচারে ৮০টি বেত্রাগাতের পর মারা যায়। গত এক দশকের ফতোয়া সন্ত্রাসের পরিসংখ্যান থেকে যায় যে ...২০০৯ ( ৪৮ জন ), ২০০৮ ( ২১ জন ), ২০০৭ (৭৭ জন), ২০০৬ ( ৬৫ জন ), ২০০৫ (৬৯ জন ), ২০০৪ ( ৫৮ জন ), ২০০৩ ( ৪৪ জন ), ২০০২ ( ৩৯ জন) মহিলা ফতোয়ার শিকার হয়েছেন।
একই ভাবে ১৯৯২-২০০১ সালের মধ্যে ২৪০ টি ফতোয়ার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীগণ। এসব দেখে মনে হয় আমরা আজো সভ্য হতে পারিনি। আজ যদি নারী ভাবে রাস্ট্র ও কল্পনার আল্লাহ-খোদা-ভগবান শুধু পুরুষ আর ধনীদের জন্য তবে কি তা অমুলক হবে ?
যে খোদারা মরিয়ম কে ধর্ষণ করে তাকে মহান করে প্রচার করে, যে ভগবান কিশোরীদের নদীর ধারে ধর্ষণ করে তার লীলা বলে চালিয়ে দেয়, যে ধর্ম নেতারা তাদের যৌনতার জন্য নতুন বিধান জারী করে তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়ার সময় আজ এসেছে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য তাদের সংবিধান এবং তারা নিজেই যথেস্ট, তাদের জন্য কোন খোদায়ী আইনের প্রয়োজন নেই।
তথ্য সূত্র ঃ
১। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
২। বাংলাদেশের সংবিধান।
৩। বাংলাদেশের অর্থনীতির চালচিত্র – আনু মুহাম্মাদ।
৪। প্রথম আলো।
৫। বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড।
৬। ইবনে হেশাম, ১ম খন্ড - পৃঃ ৫০৩-৫০৪।
৭। ফতহুল বারী, ৮ম খন্ড - পৃঃ ৯৪-৯৫।
৮। যাদুল মায়াদ,৩য় খন্ড – পৃঃ ৩৮-৪১।
৯। আর রাহিকুল মাখতুম – ছফিউর রহমান মোবারকপুরি।
১০। সাপ্তাহিক সুরমা।
১১। উইকিপিডিয়া।
১২। বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় ওয়েব সাইট।