Monday 5 August 2019

কাশ্মীরঃ ছাই চাপা দেয়া আগুনের উপর সন্ত্রাসবাদের তামাদি মূলকের নতুন সূচনা।



এই প্রিন্সলি স্টেইটের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ, ধরতীর স্বর্গকে মুসলমান শাসকগণ শাসন করেন ১৩৪৬ সাল থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত, এরপর ১৮১৯ সালে পাঞ্জাবের শিখ রাজ, ১৮৪৬ সালে জম্মুর ডগরা রাজ অতঃপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসন-শোষণ করে মহারাজা হরি সিং কে ইন্ডিয়া বা পাকিস্তানের সাথে জুড়ে যাবার কিংবা শর্ত সাপেক্ষে স্বাধীন থাকার সুযোগ দিয়ে ফেলে যায়।
মহারাজা হরি সিং কাল ক্ষেপনের মাধ্যমে নিজ ক্ষমতা ও স্বাধীনতাকে রক্ষা করার  সিদ্ধান্তে নিজ বুদ্ধিতে কুপোকাত হয়ে মুসলিম বিদ্রোহ ও পশতুন ট্রাইবসম্যানদের ইন্টারভেনশনের মুখে ১৯৪৭ সালে ইন্ডিয়ান ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত হবার চুক্তি করেন।পাকিস্তান একে ইন্ডিয়ান ইন্টারভেনশন হিসেবে দেখে এবং নিয়মিত-অনিয়মিত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৯ সালে ভারত-পাকিস্তান সিস ফায়ারে সম্মত হয়ে লাইন অব কন্ট্রোল সৃষ্টি করে।
এক সন্তান কে কেটে সৃষ্টি হয় দুই নাম, আজাদ কাশ্মীর এবং জম্মু কাশ্মীর। জম্মু কাশ্মীরে যে সকল মুসলিম আছেন তাদের একটি অংশ স্বাধীনতার জন্য লড়তে থাকেন। ভারত তার অঞ্চল রক্ষায় শক্তি প্রয়োগ করতে থাকে। সকল অস্থিতিশীল অঞ্চলের মতো কাশ্মীরেও খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, বৈষম্য চলে আসছে সেই অবধি।
কাশ্মীর ভারতের সাথে সংযুক্তির ইনাম হিসেবে কিছু প্রিভিলেজ ভোগ করে আসছিলো যা ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল ৩৭০ এবং ‘৩৫-এ’ দিয়ে সুরক্ষিত ছিলো।
আর্টিকেল ৩৭০ ও ‘৩৫-এ’ কাশ্মিরি নাগরিকদের অধিকার দিয়েছিলো নিজ আইন প্রণয়নের শুধু ফাইন্যান্স, প্রতিরক্ষা, ফরেন এফেয়ার্স এবং কমিউনিকেশন ব্যাতিরেকে।
এই ধারা তাদের নিজ পতাকা, জাতীয় সংগীত, কাশ্মীরের চাকুরি ক্ষেত্রে প্রাধান্য,  এমনকি কাশ্মীরের বাইরের কারো সম্পত্তির মালিক হতে বাধা দেয়ার আইন করতে সুযোগ করে দিয়েছিলো।
আর্টিকেল ৩৭০ ও ‘৩৫-এ’ অনেক ভারতীয় নাগরিকের কাছে বৈষম্যমূলক আইন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিলো। অনেকের কাছে সন্ত্রাসবাদের সহায়ক হিসেবে বিবেচিত ছিল।
ভারতের বর্তমান শাসক দল বিজেপি তাদের নির্বাচনি ম্যানুফেস্টোতে পরিষ্কার বলে এসেছে তারা আর্টিকেল ৩৭০ ও ‘৩৫-এ’ বাতিল করবে। আজ ভারত সরকার তা বাতিল করে দিয়েছে।
কাশ্মীরিদের নিজ স্বাধীনতার দরজা আজ অফিসিয়ালি খুলে গেলো কিন্তু স্বাধীনতার এই স্বপ্ন-স্বাধ ভারতের মতো বড় রাষ্ট্র থেকে আদায় করা ততোটাই কঠিন যতোটা ভারত-পাকিস্তান এক হয়ে যাওয়া। সন্ত্রাসবাদ বা অস্থিতিশীল অবস্থা এক সময় জীবনের টানে মিলিয়ে যাবে। মানুষ জাতীয় জীবনে এগিয়ে যাবে। এই অস্থিরতার পেছনের অন্যতম ক্রীড়ানক পাকিস্তান আর সেই অবস্থায় নেই কিন্তু এই অঞ্চলে এসেছে নতুন দানব। কাশ্মীরে চোখ পরেছে আমেরিকার। আমেরিকা এই মাটিতে আসতে চায় না কিন্তু আফগানিস্তান থেকে সসম্মানে বেড়িয়ে যেতে পাকিস্তানকে তার খুব প্রয়োজন। সামনে আমেরিকান ইলেকশন, ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে ডেস্পারেটলি বেরিয়ে যেতে চায়। আফগানিস্তানে ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা এবং চীনের স্ট্রাট্যাজিকাল ইন্টারেস্ট রয়েছে। ভারত আমেরিকার সম্মানে প্রস্থানের গ্যারান্টি নিশ্চিত করতে অক্ষম অপর দিকে পাকিস্তান ও তার ম্যাকানিজম দিয়ে সেই কাজ সম্পন্ন করতে পুরোপুরি সক্ষম। সেই কারনে ভারত মুখ বুজে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে বাধ্য হবে। আবার একই সময়ে ভারত যদি কাশ্মীরকে যেকোন মূল্যে পুরোপুরি নিজের করায়ত্ব করে নেয়, তখন আমেরিকা পাকিস্তানের কাশ্মীর আবদার নিয়ে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াবে না। পাকিস্তান আফাগানিস্তান ও কাস্মীর দুই জায়গাতেই ব্যানিফিশিয়ারি হতে পারবে না তা ভারত খুব চতুরতার সাথে আর্টিকেল ৩৭০ ও ‘৩৫-এ’ বাতিল করে কাশ্মীরে নিজ অথরিটি পুরোপুরি স্থাপিত করেছে।

কাশ্মীরের নতুন প্রজন্ম নিজেদের কে বলিউডের রঙ্গে বিভোর করবে নাকি নতুন ভারতের সাথে সম্প্রীতির নতুন দিশায় যাবে নাকি মর্ত্যের এই স্বর্গকে নরকে পরিণত করতে অস্ত্র হাতে তুলে নেবে সময়ি তা বলে দেবে। ভারত পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়েই কাশ্মীরে এসেছে তাই যেকোন ভুল চিন্তাই এই অঞ্চলে আগুনের লেলিহান শিখা ছরিয়ে দেবে।