Sunday 14 May 2017

নারী ধর্ষণ ও বাংলাদেশ এবং সভ্য মানুষের ব্যার্থতা।

ফেইসবুকে, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া বা ব্লগের দুনিয়ায় ইদানিং সবচেয়ে চর্চিত নাম আপন জুয়েলার্স। যে জুয়েলারি নারীর সৌন্দয্যের অহংকার বলে বিজ্ঞাপন করে বেড়ায় সেই প্রতিষ্ঠানের নাম আসে নারীর প্রতি সহিংসতায়।
আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের কুপুত্র সাফাত জঘন্য অপরাধ করেছে এবং সে গ্রেফতার হয়েছে। তার সহযোগী সাদমান সাকিফ (সাকিফের পিতা মোহাম্মদ হোসেন জনি ইভেন্ট এরেঞ্জমেন্টের ব্যাবসা করেন) ও গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু যেই হোটেলে এই জঘন্য কাজটি হয়েছে এবং যেখান থেকে সিসি টিভি ফুটেজ ডিলিট করা হয়েছে, এমনকি ৭০২ নাম্বার রুমের টয়লেটে , রুমের অভ্যন্তরে ক্যামেরা স্থাপন করে রাখার জন্য বনানীর রেইনট্রী হোটেল এর মালিক কতৃপক্ষ বা ঝালকাঠি ১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন এর পুত্র মাহিদ হারুন যে সাফাত-সাকিফের ফ্রেন্ড তাদের সম্পর্কে কেউ কিছু বলছেনা।(ভিকটিমের বক্তব্য থেকে প্রাপ্ত তথ্য) দেখে শুনে মনে হয় আওয়ামিলীগের এই এমপি বা তার পুত্রের নাম আমাদের কারো কারো শ্বশুর বা ভাশুরের নামের সাথে মিলে যায় তাই লজ্জা বসত নাম নেয়া হচ্ছেনা। যদি বলতে চান উনারা innocent until proven guilty তখন এই থিওরীর ভাজে ভাজে আপনি সাফাত-সাকিফ এবং আপন জুয়েলার্সকে সংযুক্ত কেন করতে পারেননি? অনুগ্রহ করে স্মরণ রাখুন, আমি পলিটিক্যালি কারেক্ট ভার্শন নিয়ে আমাদের সমাজের মাঝে চেপে রাখা ধর্ষকামি, ধর্ষন্মাদ বা পুরুষ পশুদের হাত থেকে মুক্তির পথ দেখিনা।
মেয়েগুলো কেন সেই হোটেলে গিয়েছিলো, কেন এক মাস সময় নিলো পুলিশ রিপোর্ট করতে, কেন সাফাতের স্ত্রী এখানে সংযুক্ত, মেয়েগুলো ব্ল্যাকমেইল করারা চেষ্টা করছে ধনীর ছেলেদের, কেন মেয়েটি মিউচুয়াল করতে দুজন বড় ভাই পাঠিয়েছিলো, তারা স্বেচ্ছায় ধর্ষিত হয়েছে কিংবা কেন কয়েকদিন আগের হযরত আলি ও তার মেয়ের জন্য মানুষ ও মিডিয়া দাড়ায়নি, এই সব কথার জবাব আপনি খুজতে পারেন, পুলিশ বা আদালত এগুলোর জবাব নিংড়ে নিংড়ে বের করবে।
এই কেন কেন করে আমরা যা করছি তা ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজের জন্য আমাদের মাঝের ধর্ষকেদের বাহানা বের করে তাদের আরো একটি ধর্ষণের জন্য আহ্বান করছি।
বাংলার মুসলিম যারা পূর্বে উল্লেখিত কেন গুলো নিয়ে তুফান তুলছেন শুধুই তাদের জন্য প্রশ্ন, স্বেচ্ছায়ও যদি দুজন নারী পুরুষ মিলিত হন তবে কি আপনি বেলাল্লাপনার অভিযোগ তুলবেন না? বাংলার মানুষের কাছে প্রশ্ন, কেন আপনি একজন নারীর পাশে তার ইনোসেন্সির দাবীতে দাড়াতে পারছেন না, কেন আপনি স্বয়ংক্রিয় ভাবে নারীটিকে ষড়যন্ত্রকারী আর পুরুষটি ভোলাভালা ভোলানাথ মনে করে কেন কেন করছেন?
আমাদের সমাজে এবং পৃথিবীর বেশীর ভাগ সমাজেই নারীকে তার উপর নির্যাতনের জন্য দায়ী করার ট্রেন্ড এটি বহু পুরনো...শুনলে অবাক হবেন উইকের প্রাইম মিনিষ্টার পর্যন্ত পুরুষের নোংরা চোখ বা নোংরা ভাষার আক্রমন থেকে নিরাপদ নয়। একবার ভাবুন কেন? নারীর হ্যা বা না বলার যে অধিকার তা যতোদিন আপনার মস্তিষ্কে শক্তিশালী ভাবে স্থাপন না করছেন আপনার মেয়ে, আপনার বোন কিংবা আপনার স্ত্রী আপনার কারনেই একদিন কোন এক ধর্ষকের ধর্ষন্মাদোনার শিকার হবে।
ধর্ষিত হবার মাঝে কোন লজ্জা বা অপরাধবোধ বা অসতি বা নষ্ট হয়ে যাবার কিছু নেই। যেমনটি নেই ছিনতাইকারী বা ডাকাতের লুন্ঠনের শিকারে। ধর্ষণ একটি সামাজিক এবং ধর্ম সহযোগীতায় বেড়ে উঠা মারাত্মক ব্যাধি। এই ব্যাধির মোকাবেলায় আমাদের সবার যার যার অবস্থান থেকে আওয়াজ তোলার এবং কাজ করার প্রয়োজন।
আপনাদের সামনে বাংলাদেশে নারী কতোটা হুমকির মুখে তা তুলে ধরতে নিচের পরিসংখ্যান গুলো তুলে ধরছি, মনযোগ দিয়ে দেখুন, চিন্তা করুন এবং ভাবুন, কোথায় পৌছেছি আমরা?
অধিকার ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ধর্ষণের উপর একটি বিস্তারীত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, নিচের সেইফ লিঙ্কটিতে ক্লিক করলেই রিপোর্টটি দেখতে পাবেন...
http://1dgy051vgyxh41o8cj16kk7s19f2.wpengine.netdna-cdn.com/wp-content/uploads/2016/04/Statistics_Rape_2001-2017-Jan-Feb.pdf


এই ছিলো আমার আপনার, আমাদের চারপাশের শিশ্নধারী পুরুষের কির্তিকলাপ। এমন বাস্তবতায় যেখানে নারীকে তার ধর্ষণের জন্য দায়ী করা হয় সেখানে কতো হাজার নারী ধর্ষণ আনরিপোর্টেড রয়েছে তার কোন হদিস আমরা কখনোই জানবোনা। নারী তার ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ নয় এমনকি নিরাপত্তার জন্য যে পুলিশের কাছে নারী সাহায্য চায় তার অবস্থা কি এবং নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর বন্দুকের নল ও তাদের শিশ্ন নারীকে হামলা করার জন্য কতোটা তৎপর তা দেখতে পাবেন নিচের সেইফ লিঙ্কটিতে...
http://1dgy051vgyxh41o8cj16kk7s19f2.wpengine.netdna-cdn.com/wp-content/uploads/2016/04/Statistics_Rape_RLEA_2001-2017-Jan-Feb.pdf


এই সকল ধর্ষণ ছাড়াও একজন নারী প্রতিদিন পুরুষের চোখ দিয়ে ধর্ষিত হন, পুরুষের ঠোটের শীষে (হুইসেল) ধর্ষিত হন, শরীরের অংভঙ্গিতে ধর্ষিত হন আমাদের সামনে, আমাদের চারপাশে, অফিসে, আদালতে, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায়, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে। নিচের সেইফ লিঙ্কটিতে দেখুন ২০১০ থেকে ২০১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হ্যারাসমেন্ট বা স্টকিংয়ের কিছু রিপোর্ট...
http://1dgy051vgyxh41o8cj16kk7s19f2.wpengine.netdna-cdn.com/wp-content/uploads/2016/04/Statistics_Stalking_2010-2017-Jan-Feb.pdf


এতোসব ঘটার পরও আমাদের চোখ হয়তো খুলবেনা, যেমনটা খুলেনা আমাদের সরকার বাহাদূরের। প্রতিটি রাষ্টের মতো আমাদের বাংলাদেশও ইমেজ রক্ষার নামে ডিনায়াল পলিসি অবলম্বন করেও ঢাকতে পারেনি আমাদের লজ্জা, আমাদের পরাজয়, নারীর প্রতি আমাদের সহিংসতা। নিচের সেইফ ছকটিতে দেখুন সরকারের খতিয়ান, (অবশ্যই সব সময় কম করে দেখানো হয়...)
Comparative Crime Statistics: 2002 - 2015


Year Women & Child Repression


2002 18967
2003 20717
2004 13318
2005 11981
2006 11730
2007 15217
2008 15246
2009 13997
2010 17752
2011 21389
2012 20947
2013 19601
2014 21291
2015 21220
Total 243373
All Cadre PMIS|Publications|Citizen's Help Request|NOC|BPKT Bank
অরিজিনাল রিপোর্টটি দেখতে পাবেন নিচের লিঙ্কটিতে
http://www.police.gov.bd/Crime-Statistics-comparative.php?id=208


যারা এতো ইনফরমেশন দেখার সময় নেই তারা খুব সহজে পার্সেনটিজ নাম্বারে দেখতে পারেন কি হারে বাড়ছে যৌনউন্মাদ আমাদের সমাজে আমাদের চোখের সামনে নাকের নাগালে...
২০১৩-২০১৪ সালে যে হারে ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে তা ২০১৪-২০১৫ সালে বেড়েছে ৫.৪%।
২০১৩-২০১৪ সালে কতোটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে? ৩৫৯২ টি এবং তা বেঁড়ে ২০১৪-২০১৫ সালে হয়েছে ৩৭৮৬ টি। এই একই সময়ে রিপ্রেশন বেড়েছে ৯.৪%।
এই পর্যন্ত যা দেখলেন তা শুধুমাত্র রিপোর্ট হয়েছে অথবা আমাদের মিডিয়া তা তুলে ধরতে পেরেছে। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি সমিতি তাদের সমিক্ষায় বলছেন ২০১০ সালের পর থেকে ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। তাদের হিসেব মতে ২০১৪ সালে মাত্র ৭৮৯টি ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট হয়েছে। ২০১৩ সালে ৭১৯, ২০১২ সালে ৮৩৬, ২০১১ সালে ৬০৩, ২০১ সালে ৪১১ টি ধর্ষণ রিপোর্ট করা হয়েছে। যদি ভাবেন বর্তমানের কি অবস্থা তার হিসেবেও উনারা আমাদের নজরে দিচ্ছেন... জানুয়ারি ২০১৭ থেকে মে মাস পর্যন্ত ২৪১টি ধর্ষণের ঘটনার মাঝে মাত্র ২৩টি রিপোর্ট করা হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী আমাদের মিডিয়া মাত্র ৬৭১টি ধর্ষণের ঘটনা আমাদের সামনে নিয়ে আসতে পেরেছে। পুলিশি অবহেলা, স্থানীয় রাজনীতিক প্রভাব, ক্ষমতাশীলদের হুমকি ইত্যাদি ইত্যাদি উপেক্ষা করে যে অভিযোগ গুলো বিচারের আশায় আদালতে যায় সেখানের চিত্র আরো ভয়ংকর।
মেট্রপলিটন মেজিষ্ট্রেট কোর্ট ঢাকার মতে মাত্র ২% ধর্ষণের ঘটনা ট্রায়ালে যায়। অবশ্যই মনে রাখতে হবে শহরে যদিও অভিযোগ করা যায় বা বিচারের জন্য সহযোগীতা পাবার জন্য এনজিও বা লিগ্যাল হেল্প পাওয়া সহজ হলেও গ্রাম অঞ্চল গুলোর ক্ষেত্রে এই আশা চরম নিরাশার নামান্তর। ঢাকার ওয়ান ষ্টপ ক্রাইসিস সেন্টার যেগুলো সরকারী হাসপাতাল গুলোতে বিদ্যমান সেখানের গত ১৪ বছরের ডাটা থেকে আমরা জানতে পারি তাদের কাছে ৫৩২১ জন সাহায্য চেয়েছেন আর তাদের সাহায্যের প্রেক্ষিতে মাত্র ৪৩ জন শাস্তি পেয়েছে।


এতোক্ষনে আপনার এই অনুভব চলে আসার কথা যে আমরা ভয়ংকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সেদিন আর বেশীদিন দূরে নয় যখন ইন্ডিয়ায় রেইপের ঘন ঘটায় মানুষ ইন্ডিয়াকে যেভাবে রেপেন্ডিয়া বলছে আমাদের না ব্যাংদেশ বলা শুরু করে।
শক্তিশালী আইন ও তার প্রয়োগ এবং সামাজিক ভাবেই এই ব্যাধি নির্মূলে আমাদের নামতে হবে।
ভেবে দেখতে হবে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে যে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ হবার কথা ছিলো তা কেন হচ্ছেনা। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় কেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী বা সরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পুলিশ প্রধানকে জবাবদিহি করা হচ্ছেনা। তাদের ব্যার্থতা থাকলে তাদের পদচ্যুত করা হচ্ছেনা। কোন ঘটনা ঘটলেই আমরা কিছু দিনের জন্য ফেইসবুকে, ব্লগে বিপ্লবের ঝড় তুফান তুলে আবার যেই সেই অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি। দেশের সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী বেসরকারী অফিস, আদালত, কারখানায় ধর্ষণ বিরোধী ক্যাম্পেইন হচ্ছেনা কেন? সচেতনেতা বৃদ্ধির জন্য সরকার এনজিও এবং শিক্ষিত সুবিধাভোগী সমাজ এগিয়ে আসছেনা কেন?
উপরের প্রশ্নের সকল ভাগের উত্তর হয়তো ছোট্র পরিষরে খোজা যাবেনা তাই আমি নির্দিষ্ট একটা সেকশন থেকে শুরু করলাম।


বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষিত সমাজ বিশেষত মসজিদের ইমাম সমাজ এবং আলেম সমাজ রাজনীতি, ইসলাম ইত্যাদি নিয়ে মাঝে মাঝে আন্দোলন , মহাসম্মেলন করতে দেখি কিন্তু বাংলাদেশ বিষয়ক ইস্যুতে কিংবা সমাজের অত্যন্ত জরুরী ইস্যুতে তাদের অবজ্ঞা বা নিষ্ক্রিয়তা আমায় অবাক করে। আমরা যারা মনে করি মাদ্রাসা শিক্ষিত সমাজ পিছিয়ে পড়ছে, অবহেলিত তারা অবাক হতে হয় এবং লজ্জিত হতে হয় যখন ঐ সব আলেম ইমামদের এই দেউলিয়াপনা দেখি।
আমি জানি অনেকেই বলবেন মসজিদে ধর্ষনের বিরুদ্ধে তারা বলেন কিন্তু আমরা পরিষ্কার দেখি নারী বিষয়ক অত্যন্ত কদর্য মনোভাব মসজিদ গুলো রুখতে ব্যার্থ হয়েছে এবং তা ছড়াতে সহায়ক থেকেছে। অন্যান্য ধর্মের মতো করে ইসলাম ধর্মও নারীর অধিকার ও সম্মান প্রদানে বেশীর ভাগ সময়ে লজ্জা জনক ভাবে ব্যার্থ হয়েছে। আমরা ধর্ষণ বা নারী নিগ্রহ নিয়ে আলেম ও ইমাম সমাজের হেফাজতের সমাবেশের মতো বিশাল সমাবেশ কেন দেখতে পারছিনা? কেন যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, ইভ টিজিং, সমান সুযোগ সুবিধা, নারীর স্বাস্থ্য, নারীর যৌনাধিকার, নারীর তালাক দেয়ার অধিকার, উচ্চ শিক্ষা ও কাজের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হতে দেখিনা আমাদের সমাজের আলেম উলামা ও ইমামদের ? মানুষের ইস্যু নিয়ে আপনি সামনে আসতে না পারলে কিভাবে আসা করবেন মানুষ আপনাদের হাত বাড়িয়ে এক হয়ে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য উদার হবে।
ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের জন্য যে আইন আছে তার যথার্থ প্রয়োগ নেই। প্রভাবশালী মানুষ অপরাধ করে ছাড় পেয়ে যায়, সমাজ নারীকে তার উপর নির্যাতনের জন্য দায়ী করে, জালিমের লজ্জাকে মজলুমের উপর চাপিয়ে দেয়! পুরুষকে স্বেচ্ছাচারী হবার সকল আয়োজন রাষ্ট্র সমাজ ধর্ম সবাই এক হয়ে সুযোগ করে দেয় আর সেই পুরুষের স্বেচ্ছাচারিতার বলি হয় নারী? এই সব প্রশ্নে আমাদের আলেম সমাজ নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে চরম ভাবে ব্যার্থ হয়েছেন। কোথাও কোথাও তারা নিজেরাই নির্যাতনের সহায়ক টুল হয়ে উঠেছেন। কি করতে পারেন আলেম বা মসজিদের ইমামগণ...
বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হবার কারনে প্রতিটি নামাজে মুসল্লিরা অংশ গ্রহণ করেন, বেশীর ভাগ মানুষ শুক্রবারের জুম্মার নামাজে অংশ নেন। মসজিদের ইমাম গণ তার মুসল্লিদের সাথে, সমাজের শিক্ষিত, গুণিজন, শিক্ষক, রাজনীতিক নেতা, ব্যাবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষদের নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা, একশন কমিটি গ্রহণ যারা ধর্ষণ বা নারী নিগ্রহ ঘটলেই আপোষহীন হয়ে সম্মিলিত ভাবে এর মোকাবেলা করবেন। তাদের দৈনিক বা সাপ্তাহিক আলোচনায় প্রতিটি পুরুষকে নারীর প্রতি হেয় বা অসম্মান অথবা নির্যাতন মূলক চিন্তা পরিহারে কথা বলবেন। কোরান বা হাদীসে যে এলিমেন্ট গুলো নারী নির্যাতনে পুরুষদের জাষ্টিফিকেশনের যোগান দেয় সেগুলোর ইন্টারপ্রিটেশনে রিফরমেশন আনবেন। ধর্ষকের পরিবারে কোন ধর্মীয় আচারে অংশ নেবেন না, তাদের মৃত্যুতে তাদের জানাজায় আলেমগণ অংশ নেবেন না, তাদেরকে সালাম প্রদান করা বা তাদের থেকে সালাম গ্রহণ করবেন না।

আমাদের সমাজে বিশেষত ইসলামিক সমাজে রিফরমেশন অত্যন্ত জরুরী এবং এই রিফরমেশন লং ডিউ হয়ে আছে। এই লড়াই আস্তিক নাস্তিক, মুসলিম অমুসলিম ধনী- গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নারী - পুরুষ এক হয়ে লড়তে হবে। তবেই সাফল্য আসবে। যারা A4 কাগজে শ্লোগান লিখে সিজনাল প্রতিবাদে আসেন কিংবা নারীর ধর্ষণের রগ রগে বর্ণনা দিয়ে সচেতনতা আনার স্থুল স্বপ্নদোষে মজে আছেন, যারা এই সব গোপন এবং হারাম, নাপাকি মনে করে চুপ হয়ে আছেন তাদেরকে অবস্থান বদল করে মানবতার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে দাড়াতে হবে। নিজ ব্যাক্তিগত বলয়ে নিজ পরিবারে পরিবর্তনের প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবেই হবে নতুবা আমাদের মা্‌ আমাদের বোন, আমাদের স্ত্রী ধর্ষিত হবে যখন আমরা অন্যের মা মেয়ে স্ত্রী ধর্ষণে চোখ বন্ধ করে মিয়ারকেটের মতো আচরণ করছি...

No comments:

Post a Comment