Saturday 22 October 2011

আমার আনি - ০৩

বয়ে গেছে সময়, কেটে গেছে ঘোর। যা শুনতাম তাই বিশ্বাস করতাম, আমার ভেতর বিচারিক ক্ষমতা তখনো বেড়ে উঠেনি। কি করে বেড়ে উঠবে, যে পর্যন্ত আমার আমি কে জ্ঞান ও বাস্তবতার মিরর ভিউয়ে না দেখতে পাব ?
মাদার তেরেসার বন্দনা করলো ইনকিলাব, আমার চারপাশে আলোচিত হতে থাকলো, সে এনজিও করে ,সেবার নামে হত দরীদ্র মানুষকে খ্রিষ্টান বানায় !
এ বিষয়ে সেই সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় প্রচার ছিলো, আমাদের দেশে এনজিওরা বিদেশ থেকে টাকা এনে শিক্ষার নামে হত-দরীদ্র, প্রান্তিক মানুষের ছেলে-মেয়েদের জন্য স্কুল খুলে, নাস্তিক বানানোর কাজ করে থাকে। ইনকিলাবে সচিত্র প্রতিবেদনে পড়েছিলাম, পার্বত্য অঞ্চলের সাজেক নামে দুর্গম এলাকাতে এনজিওরা আদিবাসী মানুষকে ধর্মান্তরিত করছে । তাদের কে শিক্ষার নামে, সেবার নামে প্রভাবিত করে, মোহিত করে তাদের জীবনাচার পরিবর্তন করে চলেছে। রাষ্ট্র ও ধর্মপ্রেমি দেশজ পন্ডিতগণ যদি তাদের হাত, ঐ সব মানুষদের দিকে বাড়িয়ে দিতেন তবে কি আজ তাদের এমন কোন এজেন্ডা তারা পেতে্‌ন, যা তারা বেঁচে খাচ্ছেন।
মাওলানা সাঈদী, প্রিন্সিপাল হাবিবুর রাহমান,ওলীপুরী সাহেবদের ওয়াজ-নসিহত সভাতে শুনেছি...
স্কুলে বাচ্চাদের বলা হতো,চোখ বন্ধ করো,আল্লাহর কাছে চকলেট চাও। স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চারা চকলেট পেতোনা। এরপর বলা হতো এবার আপার কাছে চকলেট চাও, আপার ব্যাগে চকলেট থাকতো, তাই বাচ্চারা পেতো। তাদের শেখানো হতো আল্লাহ কিছু দিতে পারে না, তার কোন ক্ষমতা নেই,বাস্তবে আল্লাহ নেই।
আমার তখন মনে হয়েছিলো,কি গভীর ষড়যন্ত্র ! আমি বড় হয়ে এদের বিরুদ্ধে লড়ব। আজ বুঝতে পারি গল্প তৈরীতে কতো কাঁচা ছিলো ওরা ! ওদের আতরের সুবাস, গাঁজার মাদকতা কাঁটাতে পারেনি।
বাংলার হুজুর ফজলুল করীম সাহেব থেকে শুনে ও ইনকিলাব পড়ে জেনেছিলাম, দেশে শান্তি চুক্তি হয়েছে,যা দেশকে বেঁচে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র ! এসবের পেছনে নাকি ভারতের হাত রয়েছে ! আমাদের স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ! তখন বুঝিনি স্বার্বভৌমত্ব কি ?
যদি স্বার্বভৌম বা রাষ্ট্রের মৌলিক একক হয় জনগণ ও ভুখন্ড,যখন তা র‍্যাবের হাতে বিনা বিচারে মারা যায় কিংবা নদী ভাঙ্গনের টাকা মন্ত্রী-আমলারা লুটেপুটে খায় তখন স্বার্বভৌমত্ব কি হুমকির মুখে পড়েনা ? আর যখন এই ধর্মকারীরা আওয়ামী লীগে বা বি এন পির সাথে থাকে তখন তাদের এই স্বার্বভৌম প্রেম কোথায় থাকে ? আমি উত্তর খুঁজতে থাকি...
- See more at: http://classic.nagorikblog.com/node/6369#sthash.GAtUNBiA.dpuf

Wednesday 19 October 2011

আমার আমি - ০২

কাজলশাহ মাদ্রাসা থেকে ক্লাস ফাইভ পাশ করে জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম। তারা আমায় জামাত পাঞ্জাম এ ক্লাস শুরু করার জন্য মনোনিত করলেন। এখানে আমি উর্দু, ফারসি, আরবি ভাষার ব্যাকরণ ও সাহিত্য পড়েছি। এছাড়াও বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস,ভুগোল পড়েছি। এখানে বলা অত্যন্ত জরুরী যে, এই বিষয় গুলি বাংলাদেশ বেফাকুল মাদারিস শিক্ষা বোর্ড (কওমী,সরকারী নয়।) কতৃক প্রকাশিত। যখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম কতো মান্দাতা আমলের সিলেবাস আমি পড়েছি, আমি শুধু অবাক হয়েছি। আজ যখন আমি সেই সিলেবাস নিয়ে ভাবি, আমি খুজে পাই প্রচণ্ড সাম্রদায়িক এক শিক্ষা ব্যাবস্থা। সেই বইয়ে কোন হিন্দু, খ্রিস্টান কিংবা অন্য কোন লেখকের লেখা নেই, এমন কি ইতিহাস বইয়ে মুসলমানদের অর্জন, তাদের বিজয় কিংবা তাদের প্রতি নির্যাতনের গল্প ছাড়া আর কিছু ছিলনা। অথচ মুসলমানগণ ছিলো বঙ্গ জনপদের সর্বশেষ অভিবাসী কিংবা দখলদার।
আমি যখন ছাফেলা দুওমে উত্তীর্ণ হলাম (কাজির বাজারে ছাফেলা আওয়াল নেই), তখন আগের বিষয় গুলির সাথে মা-লা-বুদ্দা মিনহু নামে ইসলামী আইন বিষয়ক এক বই যোগ হয়। এই বইয়ের কিছু অধ্যায়ের পাঠদান পদ্ধতি অত্যান্ত অশ্লীল, কিছু অধ্যায়ের হিসাব নিকাশ অমানবিক (সাক্ষি সংক্রান্ত নারী-পুরুষ বিভেদ,তালাক,গোলামের মাধ্যমে বিনিময়,গোলাম বিনিময়), কিছু অধ্যায় উদ্ভট এবং হাস্যকর ( মধ্যপ্রাচের মুদ্রা,এককের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত)।
আমরা সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ক্লাস করতাম। মধ্যখানে যোহ্ররের নামাযের বিরতী দেয়া হতো। যে বিষয়টি ভেবে আমি আজও শিউরে উঠি,কিছু কিছু শিক্ষক ছাত্রদেরকে ক্লাসের পড়া না পারলে কিংবা কোন অপরাধ করলে, মধ্যযুগের গোলাম পেটানোর মতো করে পেটাতেন। এখানে ছাত্ররা প্রচুর পড়াশুনা করে তবে তাদের পাঠদান ও মুল্যায়ন পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক। একটি ব্যাপার অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক যে এরা সেই সময়ে নকল করতোনা। বছরে তিনটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। সমস্ত বিষয় আরবী মাসের হিসাবে পরিচালিত হতো। ছাত্রদের কো-কারিকুলাম একটিভিটি প্রায় ছিলো না। মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে কোন ধরনের খেলাধুলার অনুমতি ছিলোনা।
মাদ্রাসায় আল ইসলাহ নামে ছাত্র সংসদ ছিলো। এরা প্রতি বৃহস্পতিবার যোহরের নামাজের পর ছাত্র সভার আয়োজন করতেন। সেখানে পুর্বনির্ধারিত বিষয়ে ছাত্রগণ বক্তৃতা দিতেন। পালাক্রমে সব ছাত্রকে প্রতি সপ্তাহে অংশগ্রহন করতে হতো। মাঝে মাঝে এরা মোনাযারা (বিতর্ক), উর্দু-ফারসী ভাষায় পালাক্রমে ছন্দ বলা আয়োজন করতেন। ছাত্র সংসদে শুধু ইনকিলাব ও সিলেটের ডাক পত্রিকা আসতো। সেখানে পত্রিকা পড়তে পড়তে আমার পত্রিকা পড়ার নেশা হয়ে গেলো। ক্লাস শেষে কিছু করার থাকতোনা, বাইরে যাবার অনুমতি ছিলোনা তাই সেই সময়ে আমি সমস্ত পত্রিকা খুটিয়ে খুটিয়ে পড়তাম। আর এই পত্রিকার হাত ধরে আমি বাহিরকে দেখতাম, জানতাম।
পত্রিকা পড়েই একদিন জানলাম মাদার তেরেসা নামে ইন্ডিয়ার কেউ একজন মারা গেছে। তার সম্পর্কে পত্রিকার ফিচারে অনেক কিছু লিখলেও বড় ভাইদের বলতে শুনেছি সে ছিলো খ্রিস্টান্দের এজেন্ট !

Monday 17 October 2011

আমার আমি- ০১

আপনারা যারা হিন্দি মুভি 'তারে যামিন পর' দেখেছেন, তারা হয়তো অনুমান করতে পারবেন কেমন লেগেছিলো দারশির সাফারির, যখন তার মা বাবা তাকে বোর্ডিং স্কুলে রেখে আসছিলে্ন, তখনকার সেই দৃশ্য যা আমার সাথে মিলে গিয়েছিলো, আজ থেকে ১৫/১৬ বছর আগে। ফিরে আসার বিশাল গেট পাড়ি দেয়ার সাহস আমার ছিলোনা। কিছু করার ক্ষমতাও আমার ছিলোনা। তাতে কি ? আশ্রয় ছিলো আমার বিছানা ও বালিশ,আর মুখ গুজে কান্না ছিলো আমার ভাবের সেই সময়কার প্রকাশ।
সামাজিক রীতি আনুযায়ী বিদায়ের সময় আমার বাবা আমার সহবাসীদের কিছু বলতে চাইছিলেন,কিন্তু তাদের দৃস্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছিলোনা,তখন আমার নাবালক বুদ্ধি দিয়ে তাদের একজনের টি-শার্টের লিখা WONDERFUL শব্দটি উচ্চারণ করে সেই ছেলেটিকে ডাকার চেস্টা করেছিলাম, এ নিয়ে তারা আমায় বাকি সময়কাল ইংলিশম্যান বলে ক্ষেপাত। অনেক পরে বুঝে ছিলাম নিরীহ এই শব্দটি কেনো তাদের কাছে অদ্ভুত ঠেকেছিলো।
(আমার চারপাশের এখনকার বর্ণনা যাদের কাছে অতিরিক্ত ঠেকবে , তাদের জন্য বলছি এরপর যা আমি বলবো তার জন্য এই বর্ণনা অতি জরুরী হয়ে আসবে।)
আমি ও আমরা ১০'x১৫' একটা রুমে মোট ১৪ জন মানুষ(!) বসবাস করতাম। সকাল হলে বিছানা গুটিয়ে সেখানে ক্লাস শুরু হতো। মাদ্রাসাটি ছিলো u প্যাটার্নের দীর্ঘ আয়তাকার তিন দিক ঘেরা দালানের সমস্টি। entrance এর ঠিক বিপরীত দিকে ছিলো হাদীস ভবন। তার পেছনে ছিলো একটি বেকারি ফ্যাক্টরি। হাদীস ভবনের পুর্ব দিকে ছিলো মেথর পট্রি।এখানে নীচ তলাতে লাইব্রেরী ও শিক্ষকগণ থাকতেন।দুতলায় মেশকাত ও বোখারীর ক্লাস হতো। তিন তলায় কিছু ছাত্র বসবাস করতো। আমাদের সেই সময়ের বসবাসের টিনের ঘরটি ছিলো পুর্ব দিকে। তার পেছনে ছিলো কাজিরবাজারের খাল। শীতকালে যেমন তেমন , বর্ষাকালে এর পানি হয় কালো আর এর সৌরভকে (!) সুগন্ধিতেও দূর করা যেতনা। এখানে আওয়াল থেকে নহমীর পর্যন্ত ক্লাস ছিলো এবং দুটি ঘরে শিক্ষক থাকতেন। আমাদের ঘরটির পরই ছিলো নতুন দালান। এখানে দুতলায় আলিয়া আওয়াল থেকে আলিয়া চাহারম পর্যন্ত ক্লাস হতো এবং ইলেক্ট্রিক্যাল ট্রেনিং করানো হতো। একেবারে প্রান্তে দুজন শিক্ষক থাকতেন। নিচতলা বানিজ্যিক কাজে ভাড়া দেয়া হতো এবং মাদ্রাসার নিজস্ব সেবা মুলক ব্যাবসার কাজে ব্যাবহার করা হতো। এছাড়াও এই দালানের এক প্রান্তে ছিলো কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (আমি কখনো কাউকে প্রশিক্ষণ নিতে দেখিনি।), অপর প্রান্তে হোস্টেল সুপার থাকতেন। নতুন দালানের পেছনে ছিলো পানের আড়ৎ।
পশ্চিম দিকে ছিলো হেফজ বিভাগ, ওরা মসজিদে ক্লাস করতো। এরপর শায়খুল হাদীস সাহেবের ঘর, এরপর বায়তুর রাহমান মসজিদ। মসজিদের পশ্চিমে ছিলো খোলা ডোবা। আমার দু বছরের সময়কালে দেখেছি এর নির্মাণ কাজ কখনো শেষ হয়না। অনেক পরে বুঝেছিলাম, এটা ছিলো তার বৈদেশিক আয়ের অন্যতম চাবি। কিছুদিন পর পর তিনি মসজিদের ডিজাইন পরিবর্তন করতেন। এরপর ছিলো অযু করার উন্মুক্ত হাউজ। এমন নোংরা পানিতে কি করে শুদ্ধতা পাওয়া যায়, আজো আমি ভেবে পাইনি। হাউজের পশ্চিমে ছিলো টয়লেটের সারি। সম্ভবত এই রকম টয়লেট ওরা ওদের জাহান্নামের বর্ণনাতেও রাখবেনা। এরপর ছিলো আমাদের সবার ভাতঘর। দীর্ঘ হলঘর,এখানে আমাদেরকে ইন্ডিয়ান কমোডে বসার মতো, বসে খেতে হতো। বর্ষায় ভাতঘর গোয়াল ঘরের চেয়ে খারাপ অবস্থা হয়ে যেতো। ঝুটা খাবার ফেলতে ফেলতে,ভাতঘরের পশ্চিমে ভাতের টিলা হয়ে যেত। আমরা যারা টাকা দিতাম তারা তিন বেলা খেতে পেতো আর যারা ফ্রি খেতো তারা দু বেলা খেতো। আজ আমি ভাবতে পারি আমাদের সবার পেট এবং ক্ষুধা একই রকম ছিলো। কিন্তু খাবার জোটানোর খোদা ছিলো আমাদের সাথে।যেমন আছে আজো সেই সব লোকদের সাথে যাদের আছে টাকা ও ক্ষমতা। আর দরিদ্রদের আছে স্বপ্ন আর মিছে আশা।আমি দারিদ্র্যকে প্রেথম দেখেছি মেথর পট্রি ও পানের আড়তে। আমি অনুমান করেছি এর অভিশাপ কত জঘন্য। আমি ক্ষুধাকে খুজে পেয়েছি প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের চোখে, সেই ক্ষুধাতে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিলো মেথরদের ক্ষেত ও শুকর চড়ানো মাঠ। তার ক্ষুধা নেভাতে স্বয়ং খোদা-তালা, দয়াল নবী মুহাম্মাদ, এবং হাল আমলের দাতা মুহসিন সিলেটের তৎকালীন ডি সি এবং তার মর্দে মুজাহিদগণ মাঠে নেমে এসেছিলেন। আমি সেখানে একজনও ভাসানীকে পাইনি। গল্পের রাবণের এক মনুষ্য রুপ পেয়েছিলাম যে মেথরদের কে দাশ করে রেখেছিলো। সে এসেছিলো তার হিস্যা বুঝে নিতে কিন্তু পারেনি। রামের দল যেখানে হাজির সেখানে রাবনের সময় কই ? আমি কি বলতে পারি, এরা একই সময়ে রাম ও রাবন।

Wednesday 5 October 2011

আমার আমি

বিঃ দ্রঃ - আমার একান্ত কিছু কথা, যা কোন কোন পাঠকের মধ্যে ভিন্ন বোধ কিংবা মত জাগিয়ে দিতে পারে। যার জন্য আমি দায়িত্ব নিতে আগ্রহি নই। বাস্তবতা যদি আমার অতিতের সাথে আপনাকে আহত ব্যাহত কিংবা ভাবিয়ে তুলে, তা শুধু আপনার নিজের কৃ্তিত্ব।
মানুষ মোহিত হতে পছন্দ করে, ভাবে ডুবে থাকতে পছন্দ করে, পছন্দ করে all iz well ভাবতে।
মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যা্‌ই আমি যাকে ছেড়ে এসেছি, যাকে আমি অবাস্তব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই ভাবনা আমার পিছু নিতে চায়। আমরা মানুষ বড় অসহায়, মাঝে মাঝে ভীতু।
সে অনেক দিনের পথ চলা, বংশ পরম্পরায় আলোচিত, চচ্চিত, রোজকার অনুশীলন...তাই আজো আমি সেই সব আচার কিংবা অভ্যেসে আক্রান্ত হই আর নিজে নিজে হেসে উঠি।
আমি আনন্দিত যে আমি আমার ঘোর কে দোর থেকে বিদায় দিতে উঠে বসেছি।
আমি যে কখন থেকে বিশ্বাসি তা আমি নিজেও জানিনা। মায়ের কাছে শুনেছি , যখন মুখে বুল ফুটেছে, পা চলতে শুরু করেছে তখন থেকেই নাকি বাবা আমায় মসজিদে নিতে শুরু করেছেন। এতো এতো বিস্বাসির সেই সভা আমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছিল তাই চোখে জল তুলে বের হতে পেরেছিলাম, তবে কিছু কালের মধ্যেই আবার নিয়মিত মসজিদের মক্তব্যে হাজিরা দেয়া শুরু করতে হয়েছিল।
সেই থেকে শুরু , প্রতিদিন সকালে কায়দা, ছিপারা, ব্যাভহারিক প্রশিক্ষণ। এই পাঠ ছিলো খুবই নিরান্দময়। আমি কি বকবক করছি তার কিছুই আমি বুঝিনা, তথাপি আমি অভ্যাসগত ঐতিহ্যের হাত ধরে মুসলমান হবার যে কর্মকান্ড শৈশবে আমার সাথে শুরু হয়েছিলো আমি তাতে শুধু অভিনয় করে গেছি। সময়ের সাথে অজানা বন্ধ কুঠুরিগুলি যখন আমি খুলতে শুরু করলাম, তখন আমি বিষ্মিত হতে শুরু করলাম।অজস্র গাজাখুরি গল্পে কোরান নামক বইটি তার রস বৃদ্ধি করেছে। নিরান্দময় সেই নিয়মিত অভ্যেসের দিনগুলিতে আমার বন্ধু অলি একসময় তার কোরান পাঠ শেষ করেছিল আমার আগে, আমি তখন ১২ পারাতে। আমরা শিশুরা আনন্দিত যে এ উপলক্ষে শিরনি দেয়া হবে, আগে পড়া শেষ হবে। কিন্তু আমার আনন্দের আকাশে মেঘ হয়ে এলেন আমার বাবা, তার সাথে যোগ দিলেন আমার মা...তারা খুবি বিষন্ন এই ভেবে যে কবে আমি কোরান পাঠ শেষ করব। এ নিয়ে প্রায়ই আমায় কথা শুনতে হতো, আমার ধার্মিক বাবা-মা কি এটাকে তাদের ধর্ম চর্চার অপুর্নতা ভাবতেন !
পরিচিতজন কিংবা স্বজনরা আমায় কোরান পাঠ সম্পুর্ন করা নিয়ে প্রশ্ন করতেন তার উত্তর করতে এ পর্যন্ত আমায় মিথ্যে বলে আসতে হয়েছে। মিথ্যে বলার ভার খুবই ভয়ানক।
সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে আমায় আমার ঘরের দোর থেকে, এলাকার সীমা ছেড়ে বাইরে আসার আহবান জানাচ্ছে...
বাবারা সব সময় ব্যাস্ত থাকেন যেমন ছিলেন আমার বাবাও। মায়ের হাত ধরে একদিন কাজলশাহ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে গেলাম। সেটি একসময় ছিলো যখন আমি ভাবতে পারিনি আমি কোন নৌকোতে চড়েছি...মানুষ আমায় দেখে মাথা ছুয়ে আদর করে, নিজেরা হালকা দীর্ঘশ্বাষ ছেড়ে আশির্বাদ করে। আর সবার মতো আমিও সকালে মাদ্রাসাতে যাই, ফিরে এসে খেলতে চাই...টিভি দেখতে চাই...
আমার চারপাশের মানুষ আমায় অতি যত্নে মনে করিয়ে দেয় এসব আমায় শোভা পায়না। আমার জন্য তৈরি হয় ভিন্ন আচরন বিধি। আমার সমাজ আমায় তারই সীমানায় নজরবন্দি করে রাখে। আমি ভেবে পাইনা কেন আমায় এমন হতে হবে ? কেন আমি সবার মতো হতে পারবোনা। এসবের পরও কিছুই থেমে থাকেনা। চলি আমিও , চলতে চলতে ইবতেদায়ী লেভেল শেষ করি।
সাথের ছেলে মেয়েরা বেড়াতে যাচ্ছে, সারাদিন খেলা-ধুলা করছে, কিন্তু আমি আমাকে খুজে পাই কাজির বাজার মাদ্রাসায়। কালো এক ট্রাংকে আমার কাপড় আর কিছু শুকনো খাবার আর বাইন্ডিং করা খাতা আর আমার আমি...
আমি আসছি...কথা রয়েছে আরো কিছু বলার...