Sunday 29 July 2018

নির্বাচনঃ ধর্মের ব্যাবহার, পুরুষতান্ত্রিক মনোজগৎ এবং অথর্ব নিথর অলস জনতা ও জবাবদিহিতা...




আগামীকাল ভোর হলেই আমাদের অনেকের প্রাণের শহর সিলেটে সিটি কর্পোরেশন ইলেকশন ২০১৮ অনুষ্ঠিত হবে। এবারই প্রথম দলীয় ব্যানারে বা প্রতীকে সিটি কর্পোরেশন ইলেকশন হবে। এবারের নির্বাচনের পূর্বে ২০ মার্চ ২০০৩ সালে প্রথম সিটি কর্পোরেশন ইলেশন হয় এরপর ৪ আগস্ট ২০০৮ এবং ১৫ জুন ২০১৩ সালে ৩য় সিটি কর্পোরেশন ইলেকশন অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের অনেকেরই মনে থাকার কথা ২০০৩ সালে বিএনপি সমর্থিত এম এ হক সাহেবকে আওয়ামিলীগ সমর্থিত বদর উদ্দীন আহমদ কামরান সাহেব প্রায় ২২ হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন। এরপর কারাগারে থেকেও ২০০৮ সালে আবারো বিএনপি সমর্থিত আ ফ ম কামাল সাহেবকে  প্রায় ৮৩ হাজার ভোটে পরাজিত করেন তিনি। ২০১৩ সালে   আওয়ামিলীগ সমর্থিত বদর উদ্দীন আহমদ কামরান সাহেব প্রায় ৩৫ হাজার ভোটে বিএনপি সমর্থিত আরিফুল হক চৌধূরী সাহেবের কাছে পরাজিত হন। এই ভোট ভোট খেলা আবারও আমাদের সামনে এসেছে কিন্তু এতোদিনে সুরমার জল গড়িয়েছে অনেক দূর, বদলে গেছে মানুষ, বদলে গেছে সময় আর বহুরুপি পলিটিশিয়ানগণও...
ইলেকশন এলেই আমাদের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াগুলোতে রিপোর্ট করা হয় সিলেটের পূণ্যভূমি থেকে, শাহজালালের মাজার থেকে আওয়ামীলীগ বা বিএনপি তাদের নির্বাচণী প্রচারণা শুরু করেছে। অথবা আমরা দেখতে পাই প্রার্থীদের মসজিদে মসজিদে আনাগোনা, এতিম খানায় দান-খয়রাত, ইমাম, আলেমদের সাথে উঠা বসা, মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি।
কোন প্রার্থী তাঁর প্রচারণা কৌশল হিসেবে এদের সাথে যোগাযোগ করলে তাতে আমাদের বলার কিছু নেই বলেই যদি আমরা চোখ বন্ধ করি তবে সেখান থেকেই সমস্যার উৎপত্তি হতে শুরু করে।।কয়েকটি উদাহরণ দিলেই অনুধাবন করা যাবে...
যেমন বন্ধবন্ধু। তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। একজন পেশাদার কমিটেড রাজনীতিবিদ ছিলেন তিনি। মানুষকে একিভূত করেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে প্রেরণা হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি একজন পিতা, স্বামি,ভাই, বন্ধুও ছিলেন। উনার রাগ-দুঃখ, হিংসা, আশা-লোভ সব ছিলো যেমনটা থাকে সকল রক্তমাংসের মানুষের। উনার মৃত্যুর পর অতি উৎসাহী চাটুকার ও বেকুব আওয়ামিলীগার (উনার মেয়ে সহ) উনাকে দেবতা বানানো শুরু করলো। উনাকে সমালোচনা করা যাবেনা, উনার কাজ নিয়ে, সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করা যাবেনা, সমালোচনা করা যাবেনা। যেমনটা করা যায়না আল্লাহ, খোদা, ভগবান কিংবা কোন নবী-রাসূল নিয়ে।
লাখো লাখো মানুষের বলিদানে অর্জিত স্বাধীনতাকে সম্মান জানাতে গিয়ে শিখা অনির্বাণ কে সশস্ত্র সৈনিক দিয়ে পাহাড়া দিয়ে  অথবা অমুক বেদীতে বা তমুক শহীদ মিনারে জুতা পা দিয়ে উঠা যাবেনা এমন সম্মানের কোড সৃষ্টি করে এগুলোকে আরেক মসজিদ, মন্দির করে ফেলা হয়েছে।
ঠিক একই ভাবে একটি শিক্ষিত রেশনাল জাতী নির্মাণের দিকে এগিয়ে না যেয়ে জনতাকে ইমোশনালী ধোকা দিতে বিজয়ের জন্য, মঙ্গলের জন্য দরগা-মাজার থেকে প্রচার চালানো ধর্মের নামে অধর্ম করা ছাড়া আর কিছুইনা। জামায়াত এক সময় তাদের প্রতীক কে “ইনসাফ” প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন হিসেবে দেখানোর কারণে মানুষ ইনসাফ, দাড়িপাল্লা এগুলোর এক ধরণের ইমোশনাল ধোকায় পতিত হতেন। শেখ হাসিনা তাঁর জীবনে বহুবার হজ্ব করেছেন, কিন্তু ৯৬’র মাথায় পট্রি, হাতে তসবি দিয়ে মানুষকে তাঁর বাবার শাষণ আমলকে যেভাবে এন্টাই ইসলামিক ইমেজ তৈরি করা হয়েছিলো তাঁর জবাবে তিনি সেই পট্রি-তসবি ব্যাবহার করেছেন।
সিলেটের সিটি কর্পোরেশন ইলেকশনে সাধারণ মানুষকে তাদের ধর্মীয় আবেগকে নাড়া দিতে বদর উদ্দীন কামরান সাহেব  উন্নয়ণ , দূর্ণীতি ও ট্রান্সপারেন্সি বিষয়ে তাঁর প্রধান প্রতিদন্ধি আরিফুল সাহেবকে সমালোচনার সাথে সাথে এও জনগণকে বলেছেন, শাহজালালের মাঝারে উরুস উপলক্ষ্যে আরিফুল হক সাহেব তোরণ নির্মাণ করাননি! মাঝার কেন্দ্রিক কুসংস্কার নিয়ে কাজ না করে তাঁর দিকে মানুষকে আরও গভীর জালে জড়াতে এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাজই উনার শেষ অর্জন নয়। সৌদি আরব থেকে জনৈক ব্যাবসায়ি ফয়সাল গিরগিরি কে নিজ নির্বাচনের প্রচারে এনেছেন। এই লোক তাঁর ট্রাডিশনাল পোষাক আবায়া বা তোব বা সেকাব্বন পড়ে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন, আরবীতে ভাষণবাজি করেছেন। অতি সাধারণ মানুষ যারা আরবী ভাষা বোঝেন না, যারা শাসক শ্রেণীর এসব ট্রিককে নজর আন্দাজ করে ফেলেন সহজে। তাদের কাছে আরবী মানেই কোরআন বা তাঁর কাছাকাছি মর্যাদার কিছু, সৌদি আরব মানেই পূণ্য আর পূণ্য। অত্যন্ত অবাক করার বিষয় এই যে কামরান সাহেব আমাদের জানাচ্ছেন এই লোকের সাথে উনার হজ্বের সময় পরিচয় হয়েছে এবং সেই সময় সে উনাকে কথা দিয়েছেন উনার জন্য উনার ইলেকশনে সে কাজ করবে! হজ্ব করতে যেয়ে তাঁর সাথে আপনি ইলেকশন ক্যাম্পেইন নিয়ে কথা বলেছেন! ২০০১ সালের ইলেকশনে জামায়াত যখন বিএনপির সাথে জাতীয় ইলেকশনে জোট গড়লো তখন ভাঙ্গা মসজিদের ছবি, মাদ্রাসা ছাত্রদের মিছিল ও তাদের আহত-রক্তাক্ত ছবি, আওয়ামিলীগকে ভোট দেয়ার কারনে কিভাবে গুনাহর ভাগিদার হতে হবে, এমনকি সম্পূর্ণ নির্বাচনকে ইসলাম রক্ষার নামে প্রচারণা চালাতে আমরা দেখেছি।
ধর্মকে ব্যাবহার এবং অপব্যাবহার মানুষের রেশনাল চিন্তাকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। সিলেটের মানুষের জন্য মাজার-দরগা একটি ইনহেরিটেড অভিশাপ। ভুলে গেলে চলবেনা ব্যাক্তির ব্যাক্তিগত ধর্ম বিশ্বাস যখন প্রচারে বা সমাজে প্রভাব বিস্তারে কাজে লাগানো হয় তাঁর পেছনে মানুষকে ধোকা দেয়া ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য থাকেনা।         
জনাব কামরান সাহেব এই পর্যন্ত তাঁর যে ইমেজ সৃষ্টি করেছেন তাতে তিনি সদা একটি সাদা টুপি পরিহিত, সফেদ পাঞ্জাবি বা অতি সাধারণ ডিজাইন বা কারুকাজ বিহীন পাঞ্জাবি পরিহিত সদা হাস্যজল একজন মানুষ। তিনি নগরে অস্বীকৃত, পিছিয়ে পরা , তথকাথিত নীচু শ্রেণীর মানুষ থেকে শুরু করে প্রায় সব খানেই বিয়ে কি কুলখানি সবখানেই হাজির হতেন তোহফা নিয়েসাধারণ জনগণের সাথে হাত মেলাতেন, আলিঙ্গন করতেন। কিন্তু এমন দেবতার মতো মানুষকে কেন জনতা ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিলো? উনার সম্পর্কে অভিযোগগুলো কি?
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে যুগান্তর পত্রিকায় তোহুর আহমদ ও রেজোয়ান আহমেদ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন,সেখানে ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ থেকে ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ সালে এই সময়কালে তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দীন কামরান সাহেবর দায়িত্বপালনকালে অডিট অধিদফতরের দেওয়ান আব্দুর রশিদ, নজরুল ইসলাম ও শংকর চন্দ্র কর এই  তিন অডিট কর্তা মোট ৪৪টি বিষয়ে ৮০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি প্রদান করেন। তারা কোটি কোটি টাকার লেনদেনের কোন বিল-ভাউচার খুজে পাননি। এই বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, “বিল-ভাউচার জমা হলো কি না তা দেখার দায়িত্ব মেয়রের নয়”
তাঁর দায়িত্ব পালনকালে সিটি কর্পোরেশনের নামে ১৩৪টি ব্যাঙ্ক হিসেব খোলা হবার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। কেন এতো একাউন্ট!? জবাবে তিনি বলেছেন, নতুন নতুন ব্যাঙ্ক তাদের ব্রাঞ্চ খোলার পর তাদের অনুরোধ রক্ষায় একাউন্ট খোলা হয়েছিলো। আমাদের প্রশ্ন বাংলাদেশে কতোটি ব্যাঙ্ক রয়ছে? আমাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী বাংলাদেশে পাবলিক , প্রাইভেট, ইসলামিক, ফরেন, নন-সিডিয়ুল ব্যাঙ্ক সর্বসাকুল্যে ৬৩।  মনে রাখা প্রয়োজন এই ব্যাঙ্কগুলোর অনেকগুলোই তাঁর মেয়াদকালের পর ব্যাবসা শুরু করেছে।
নির্বাচনে কোন প্রার্থী যে ইশতেহার ঘোষণা করেন তাঁর প্রেক্ষিতে যে সকল নাগরিক সেই প্রার্থীকে ভোট দেন তা সেই সব জনগণের আকাঙ্ক্ষা বা রায় তাই সরকারের সকল স্তরের জন্য বিজয়ী প্রার্থীর ইশতেহার সম্মান কর অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু যখন আরিফুল হক সাহেব বদর উদ্দীন কামরান সাহেবের দূর্ণিতীর শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন বলে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার সচিব সেই তদন্ত করার অনুমতি না দিয়ে দলীয় লেজুড় বৃত্তি এবং বৃহৎ স্কেলে সিষ্টেমেটিক দূর্ণিতীর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। সরকারের সহযোগীতার অভাবে যখন আরিফুল হক সাহেব একটি বেসরকারি অডিট ফার্ম দিয়ে দূর্ণীতি অনুসন্ধান করাতে চেয়েছেন তখন  আওয়ামীলীগ সরকার তাতেও বাধা দেন। প্রশ্ন হলো কিসের ভয়ে এমন দূরাচার সরকার করেছিলো? 
সিলেট শহরের রাজনীতিতে জামায়াতের নেতাদের সাথে তাঁর সখ্যতা অন্যতম আলোচনার বিষয় খোদ ইনার নিজের দলের নেতা-কর্মিদের মাঝেও।
অপর দিকে আরিফুল হক সাহেব যার নাম আর দূর্নীতি এঁকে অপরের সমাথার্ক ভাবা হয় সেই আরিফুল হক সাহেব বিএনপি সরকারের আমলে প্রয়াত সাইফুর রহমান সাহেবেরে নেক নজরের বদৌলতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে অকেজো করে রেখে বদর উদ্দীন কামরান সাহেবের প্যারালালে আরও একটি মেকানিজম চালু করেছিলেন। সিলেট শহরের একটি গাছ থেকে আকাশ ছোঁয়া দালান পর্যন্ত তাঁর দখল, তাঁর নজর এবং লাভের লেলিহান নজর থেকে রেহাই পায়নি। দূর্ণীতি দমন কমিশনের ঘোষিত ৫০ জন দেশ সেরা দূর্ণীতিবাজদের তালিকায় তিনি ছিলেন প্রথম সারির একজন। তাঁর দূর্ণীতির এই যাত্রায় তাঁর স্ত্রীও ছিলেন তাঁর একান্ত সঙ্গী যার নামেও দূর্ণীতির মামলা হয়।
ভূমিখেকো আরিফুল হক সাহেব তাঁর উগ্র মেজাজের জন্য তাঁর দল এবং দলের বাইরেও সমান ভাবে আলোচিত ও সমালোচিত। আরিফুল হক সাহেবের সময়ে সিটি কর্পোরেশন অফিসে শ্বাস নিতেও ঘুষ দেয়ার অভিযোগ ছিলো নিত্যদিনের কাজ। উল্লেখ্য যে  আরিফুল সাহেব সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এস এম কিবরিয়া সাহেবর হত্যা মামলার একজন চার্জশীটভুক্ত আসামি ছিলেন।  এই যদি হয় সাবেক দুই নগর প্রদানের কর্মকান্ড তবে কিভাবে আমরা মেনে নিয়েছিলাম আমাদের নগরপিতা হিসেবে?! উনারা কি আসলেই এই সম্মান ডিজার্ভ করেন?
আমরা নতুন সিটি মেয়র এবং কাউন্সিলর নির্বাচীত করতে যাচ্ছি ডাইরেক্ট ভোটের মাধ্যমে। গণপ্রতিনিধিত্বমূলক ডেমোক্রেসিতে নারী-পুরুষ,জাত-পাত,ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণী-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবাই আইনত অংশ নিতে পারেন। এমন ব্যাবস্থাপনায় আপনি দেখতে পাবেন আমরা নিজেদেরকে উট পাখির মতো করে বালিতে মুখ গুজে রেখে শুনেই চলেছি এই আয়োজন একজন নগরপিতা নির্বাচনের আয়োজন। (উটপাখি নিয়ে প্রচলিত ধারণাটি সঠিক নয়)    
কেন আমরা প্রশ্ন করিনা, কেন নগর মাতা নয়? কিংবা কেন একজন তৃতীয় লিঙ্গ বা অনির্ধারীত লিঙ্গকে আমরা স্বয়ংক্রিয় ভাবে এক্সক্লুড করে রেখেই আমরা আমাদের মনোজগৎ প্রতিষ্ঠিত করছি? যারা আমাদের ভোট নিয়ে আমাদের ম্যান্ডেট নিয়ে তথাকথিত নগরপিতার আসনে বসেন তারা কতোটা পিতার ভূমিকা পালন করেন? তাদের সাথে আমাদের বাস্তব এবং প্রকৃত সম্পর্কটি কি বা কেমন থাকার কথা ছিলো?
শহর ব্যাবস্থাপনায় একজন নগর কর্মি, একজন নগর হিসাব রক্ষক, নগর সুইপার, নগর ট্যাক্স পরিদর্শক পদগুলো নাগরিকদের ট্যাক্সে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের একজন সেবা প্রদায়ক মাত্র। সরল অর্থে মেয়র-কাউন্সিলরগণ শুধুমাত্র একজন সেবক এবং প্রতিনিধি। আমাদের অতীতের কোন মেয়রগণ দরিদ্র কোন রিক্সা ড্রাইভার, সুইপার কিংবা দিনমজুরকে আলিঙ্গন করলে বা হাত মেলালে অথবা সমাজে পিছিয়ে পরা কোন নাগরিকের সন্তানের বিয়েতে অথবা মানুষের কোন আবেগময় কোন আয়োজনে সহজেই উপস্থিত হলেই তিনি পিতার ভূমিকা পালন করা হয়ে যায়না। এসব করাই তাঁর প্রধান কাজ নয়। একজন পিতা বা মাতা বা তাদের মর্যাদার কেউ নিজ লোকের সম্পদ চুরি বা ডাকাতি করেন না, কোন দল বা গোষ্ঠির তাবেদারী-গোলামি করেন না, নিজ স্বার্থ রক্ষায় অবিবেচক হয়ে উঠেন না তাই নগরপিতা শব্দ শুধু লিঙ্গ বৈষম্য করেনা, এই শব্দ অতীতের মেয়রদের কাজের সাথে সামনজস্যপুর্ণও নয়। নগর রক্ষক বা সেবায়েত কে যখন পিতার আসনে বসাবেন তখন মনে রাখবেন তারা জবাবদিহিতার দায়িত্ব থেকে ভেগে যেতে উৎসাহী হবে। আপনার ভোট নিয়ে নিজের পজিশন কে সেল করার ব্যাবসায় লাভবান হবে। তাই নগরপিতার আসন থেকে সড়িয়ে নগরের একজন সেবক যাকে আপনি নির্বাচীত করেছেন আপনার কথা শুনার জন্য, এই শহরের কল্যাণের জন্য তাকে শুধুই নগরের সবার একজন কর্মচারি ভাবুন। একজন নাগরিক হিসেবে আপনার দায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথমধাপ সেখানেই।    
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত, বিদগ্ধ আইনজীবী রাম জেটমালানি তাঁর এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন,
“Democracy without education is hypocrisy without limitation” 
এবারের ইলেকশনে আমরা ৭জন প্রার্থী সম্পর্কে জানতে পেরেছি যাদের ৩ জন স্বশিক্ষিত। আমাদের ভাবতে হবে এদের মাঝে আরিফুল হক সাহেব নিজেও স্বশিক্ষিত। উনি উনার ইশতেহারে ড্রিমটিম, ফ্রি ওয়াইফাই জোন, গ্রেভ ইয়ার্ড ইত্যাদি ইত্যাদি টার্ম তো ইউজ করছেন কিন্তু আমাদের কে বুঝতে হবে এগুলো তারা গিমিক হিসেবেই বলছেন কি না? তাঁর বিরুদ্ধে ৭টি ফৌজদারী মামলা চলমান রয়েছে। কামরান সাহেব নিজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ৪টি মামলা ছিলো যেগুলো তাঁর নিজ দলের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মামলা থেকে অব্যহতি পেয়েছেন। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী এল এল বি পাস করেছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ৩৪টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। বাকি ৪জনের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই এবং তাদের একজন স্বশিক্ষিত কিন্তু অপর ৩জন ডিপ্লমা ইন ফরেনসিক মেডিসিন, দাখিল বা স্নাতক পর্যন্ত পড়াশুনা রয়েছে।
একটি নগরের উন্নয়ন মানে শুধু ব্যাবসা-বানিজ্য নয়, শিক্ষা, কালচার, টলারেন্স এসব বিষয় যখন আসে তখনই কেবল আমরা গণতন্ত্রের স্বাধ পেতে শুরু করবো। যেমনটা আমরা ব্রিটেনের লন্ডনে দেখি। এই দেশের সমাজ, শিক্ষা ব্যাবস্থা, প্রশাসন, কালচার ইত্যাদি এমন ভাবে বেড়ে উঠেছে যে তারা লাখ লাখ নন-ব্রিটিশ, ইমিগ্রান্টদের তাদের সাথে ইন্টিগ্রেট করেছে। পেশি শক্তি, টাকার বলে কিংবা দলীয় লেজুড় বৃত্তির কারনে যখন লোকাল সরকার ব্যাবস্থা পতিত হয় তখন সেই নগরের বিকাশের পথে স্থায়ী তালা ঝুলে যায়।
যেমন আমরা দেখেছি সিলেটের উন্নয়নের কৃতিত্ব কে নেবে তা নিয়ে তর্ক হয়, আওয়ামীলীগ বলে তাদের সরকারের কাজ, বিএনপি দাবী করে তাদের মেয়রের কাজ। কিন্তু যে জনতা ভোট দিয়েছে, ট্যাক্স দিয়েছে তাদের আলোচনা না করে , তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে জনগনের চাকর তাঁর মুনিবকে ফেইবার করেছে এমন আচড়ণ বা বার্তা আমরা সর্বত্র দেখতে পাই।
পথভুলা নাগরিক সমাজকে তাদের অবস্থান থেকেই ভালো নাগরিক সৃষ্টি করার লড়াইটি চালিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। নিজ অধিকার অন্যের হাতে বয়ে আসবে এমন ভাবা শুধু অহেতুক নয়, ভয়ঙ্কর ঝকিপূর্ণ।  ভুলে গেলে চলবেনা চোরের বাজারে চোখের জালায় নাক কাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সংখ্যার গরিষ্ঠতা দিয়ে আমাদের সেবা দিতে এসে যারা আমাদের প্রভু বনে যান এবং সেটাই গণতন্ত্র হিসেবে চালিয়ে দেন তখন আমাদের মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত সচেতন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তাই কন্সটেন্টলি আমাদেরকে সাদা মনের মানুষ খুজতে হবে, লড়তে হবে। হুইলের বিজ্ঞাপনে সাদা মনের মানুষ খোজে লাভ হবেনা। জীবন আছে তো আশা আছে। দেশ ও দশের জন্য আওয়ামীলীগ বা বিএনপি জরুরি নয়। জামায়াত তো নয়ই।
বেটার ট্রান্সপারেন্সি, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সুষম উন্নয়নের জন্য দলের উর্ধ্বে উঠে প্রাদেশিক বা অঞ্চল গত বিকাশ, উন্নয়ণে মনোনিবেশ করলে এই জনপদ এগিয়ে যেতে বেশিদিন লাগবেনা। আমাদের শিক্ষার প্রসারের সাথে ট্রাডিশনাল গ্রাম/মহল্লা শাষণ ব্যাবস্থা প্রবর্তন এক নতুন ডেমোক্রেসি পৃথিবীর সামনে উঠে আসবে। তাই সিষ্টেমের ভেতর থেকেই সংশোধনের এক যাত্রা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সেই লড়াইয়ে কিশোর-কিশোরী,যুবক-যুবতী, ধনি-গরীব সবাইকে একসাথে উতপাদনের ইকোনমি গড়ায় মনোনিবেশ করার বিকল্প নেই। ব্যাক্তির মোরাল কোড যার জন্য ধর্মের প্রয়োজনীয়তা একেবারে নেই বললেই চলে তাঁর প্রচার-প্রসার জরুরি। দিন বদলের জন্য আসমান থেকে কিংবা অদৃশ্য জগত থেকে কেউ নেমে আসবেনা। বদলে যেতে হবে আমাদের, বদলে দিতে হবে আমাদেরই। কথা বলার ও শুনার এবং চিন্তা করার জন্য যদি প্রজন্ম বেড়ে না উঠে তবে সেদিন আর বেশী দূরে নয় যখন আমরা বনের পশুর আরও কাছাকাছি আচড়ন শুরু করবো। নিজেদের জবাবদিহিতা নিজেদের কাছে...  

Thursday 26 July 2018

ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনাকে বলছি...



২০০১ সাল একটি অভিশপ্ত বছর। কারন গণতন্ত্রের বস্ত্র হরণ করা হয়েছিলো। প্রথমবার কোন হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছিলো। খাম্বার ভেতর করে বাংলাদেশ পাকিস্তানে পাচার হয়েছিলো। জংগি জানোয়ার তার দাত বের করেছিলো। বাংলাদেশের মানুষ জামায়াত ও পাকিস্তানপন্থীদের ম্যারেজ ঘটিয়ে জাতীয় দাওয়াত মাহফিল করেছিলো।

এরপর বাংলাদেশে ২০০৮ নামে কোন সাল আসেনি। ২০১৪ সাল নামে কিছু কখনোই ছিলোনা। তবে ২০১৯ সাল নামে কিছু একটা আসছে। সেই ইলেকশনে একদল হারামজাদাদের দেখা মিলবে তাদের কথা বলতেই এই ইতিহাসের ঘাটাঘাটি।

২০১৪ সালে মানুষ নামে দুপায়ের প্রাণী ছিলেন ৯১৯৬৫৯৭৭ জন যাদের মাঝে বাংলাদেশি মানুষ হবার সিকৃতি পেয়েছিলেন ৪৩৯৩৮৯৩৮ জন। নির্বাচন নামে একটি খেলা আয়োজিত হয়েছিলো যেখানে ১৪৭টি আসনে মঞ্চায়িত সারকাসের ব্যাবস্থা ছিলো কিন্তু ১৫৪টি আসন কম্বল চোরদের কম্বলে হামিয়ে গিয়েছিলো।

রাবনের শুভাগমন উপলক্ষ্যে ৪২ দিনে ১৪২ জন মানুষের থেতলে দেয়া মাথা, ভাঙা হাত-পা, লগি-বৈঠা দিয়ে নেড়ে-চেড়ে লাল রক্তের ঘণ ঝোল দিয়ে কুলখানি করা হয়েছিলো বংগবন্ধুর স্বপ্নের।

মাত্র ২২% মানুষ সেই মেজবানের আয়োজক, অতিথি ছিলেন।

হারিয়ে যাওয়া ২০০৮, ২০১৪ সালের পর আর কোন দিন কোন মেয়ে-শিশু ধর্ষিতা হয়নি। কিংবা কারো যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে হাসিনার সমান করা হয়নি। কোন ব্যাংক গায়েব করা হয়নি।

অসমাপ্ত...

আহা আমিও যদি আমার দেশ নিয়ে বলতে পারতাম "ইনহাস্ত ওয়াতানাম"



গন্ধ শব্দটি দেখলে বা শুনলেই আমরা নাক কুচকে ফেলি। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু গন্ধ এই নাকে আসে যা অতি পরিচিত, কতো আপন মনে হয় তা বলে বোঝানো যাবেনা।

ইচ্ছে করেই ট্রেন যে দিকে ছুটছিলো তার বিপরীত দিকে বসেছি যাতে করে ফেলে আসা সময়কে আরো একটু বেশী দেখে যেতে পারি।

নর্থ ওয়েলস বা স্কটল্যান্ড আমাকে আমার বাড়ীর কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে হয় বয়স হয়ে যাচ্ছে, বয়স হয়ে গেলে মানুষ স্মৃতি বিলাশে ভোগে।

দ্রুত গতির ট্রেনটি সাগরের তীর ঘেসে ছুটছে। আমাদের দেশের উজানভাটার মতো করে এখানেও বিকাল সাগর তীরের যৌবনে ভাটা আনে। ভেজা তীর জাগায় জাগায় পানি রেখে আগামির প্রতি তার তৃষ্ণা জানিয়ে রাখে।

সাগরের তীর থেকে দূরে ফসলের মাঠের বুক চিরে যেতে যেতেই দেখা লেভেন্ডারের কিশোরী মেয়েদের সাথে। থেকে থেকে এক উঠান জাগিয়ে তুলেছে ওরা। দূরেই একপাল ভেড়া নিজ মনেই গপ্পো সপ্পো করছে আর ঘাস খেয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু পথ পারি দিতেই দেখি গোটা কয়েক ঘোড়া অলস সময় কাটাচ্ছে। আমার কাছে সব ছবির মতো লাগছে। টিলা উঠছে আবার নামছে, ছোট ছোট গাছ দিয়ে জমির সীমানা একে দেয়া হয়েছে সেই সীমানার কোনায় কোনায় আবার মাঝারী গাছ রয়েছে। যেদিকে তাকাই একি ছবি। হঠাৎ হঠাৎ কোন এক খামার বাড়ীর দেখা মেলে। প্রতিটি বাড়ী আমায় বলে আসো আমি তোমায় এক নতুন গল্প বলি। ভাবনা আমায় উড়িয়ে নিয়ে চলে, এরই মাঝে ক্ষেতের মাঝে ডোবার মতো জলাধার দেখে আমি হারিয়ে যাই ফতেহপুরে। নোংরা নয় এই ডোবা, সাদা-কালো, সাদা-খয়েরি রঙের গরু -বাছুর পানি পান করছে, কতেক আবার পানিতে নামবে কি নামবেনা ভাবছে, কোনটি আবার নিরাপদ ও সুবিধার যায়গা খুঁজছে।

আমার মাথায় সামসুর রহমানের "ট্রেন" কবিতা বেজেই চলেছে। সেই ছন্দে দোল দিতেই হয়তো বিকেলের পড়ন্ত সূর্য্যের আলো ট্রেনের জানালায় করে আমায় প্রেমে ফেলে গেছে। কিছু মানুষ পানি ও নৌকায় বসবাসের প্রেমে পড়েছে, দেখা হলো তেমনি কিছু মানুষের সাথেও। মাঠের পর মাঠ। মাঝে মাঝে লোকালয় আসে। দুচোখ যতোদূর যায় সবুজ আর সবুজ। সোনালি আলোয় সোনাঝরা মাঠ। তারই মাঝে কোন এক ছোট খাল একে বেকে আমার অজানা ঠিকানায় গড়িয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের খুটি আর তার কিংবা উইন্ডমিলের উইং সবুজের বুক চিড়ে কোন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আমার অবস্থান থেকে মনে হচ্ছে আমরা টিলার ঢাল বা ঢালের নীচ দিয়ে ছুটে যাচ্ছি তাই ঐ সবুজ ও প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য্যের পদতলেই লেভেন্ডারের মেয়েরা আমাদের বলছে, বোকা ছুটছিস কোথা, এখানেই তোর গন্তব্য, নেমে পড়। আমি এতোটা সাহসি নই তাই ওদের কথা শুনিনি। চলতে চলতে কতো পথ চলেছি। অদ্ভুত ক্যানভাসের আকাশ পেছনে ফেলে আমি ছুটছি। আমার সাথে ছুটছে রঙিলা মেঘ। নির্জন ষ্টেশন আমায় দেখে হেসে হেসেই বলে ছুটে চলাই তোর জীবন। আমার নাকে সেই গন্ধ। গোবরের গন্ধ। এক সময় নাক কুচকে পালিয়ে যাওয়া সেই গন্ধ আমার কাছে লাগছে আপন। সবুজের কোন কমতি নেই মেহেংগায়ির এই জীবনে। ষ্টেশনের নাম 'ণৈনিতান' আমার কাছ মনে হচ্ছে কেন হলোনা 'নৈনিতাল', এমন মায়াময় বর্ণনার এলাকাই তো আমি পড়েছিলাম যেখানে বিপ্লবীরা ছুটছে, লড়ছে। সমাজ বদলে দেয়ার লড়াই। আমি বরং কল্পনায় এই জায়গাতেই একজন "অতীন" হয়ে যাই।

আমি ও ট্রেন ছুটছি আর মাথায় ঘুরছে আহা আমি যদি বলতে পারতাম "ইনহাস্ত ওয়াতানাম"

মোবাইল মসজিদ ও একটি ভাবনা...



২০২০ সালে জাপানের টোকিওতে আয়োজিত হবে অলিম্পিক। অতীতের সব আয়োজকদের মতো জাপানীরাও ব্যাপক তাম-জাম করে সব আয়োজনের জন্য সকল প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

উপরে যা জানলেন তা শুধুই একটি খবর। এই খবর তখনই বিবেক জাগানিয়া, চিন্তার জগতে ঝড়তোলা খবরে পরিণত হবে যখন জানবেন অলিম্পিকে আসা মুসলিম অতিথিদের নামাজের ফ্যাসিলিটিস নিশ্চিত করতে ষ্টেডিয়ামের সামনে রাখার জন্য ৯০ হাজার ডলার ব্যায়ে মোবাইল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।

জাপানে মুসলিমদের বসবাস রয়েছে, আছে মসজিদও।

বেশীরভাগ জাপানীদের ধর্ম বিশ্বাস বৌদ্ধ ধর্মের দিকে।

আমরা কি এমন দৃশ্য সৌদিআরবে দেখতে পাবো? পাকিস্তান বা বাংলাদেশে অথবা আফগানিস্তান বা ইরানে?

একজন হিন্দু, একজন ইহুদি, একজন নাস্তিক বা অগ্নিপূজারী কিংবা আদিবাসী-উপজাতী কি নির্ভয়ে তার ধর্ম ভাবনা বা বিশ্বাস চর্চা করতে পারবেন?

উত্তর গুলো আমাদের অজানা নয়।

সমস্যা অন্যত্র, মুসলিমদের মাঝে ডিনায়াল ব্যাধি বাসা বেধেছে শতাব্দি ধরে সেই সাথে করে নিজেদেরই একমাত্র সঠিক বা হেদায়েত প্রাপ্ত বিশ্বাস করার এক ভয়াল কিট তাদের মস্তিষ্কের মাঝে স্থান করে নিয়েছে। তাই পৃথিবীর অন্য ধর্ম বিশ্বাস বা মতামতকে নালিফাইড করার ভাবনায় একদল ধর্মউন্মাদ জেহাদি প্রেরণায় অন্যের প্রাণ কেড়ে নিতে পাগল হয়ে উঠে এমনকি এর জন্য রমজান মাসকে বেছে নেয় অধিক পূণ্যের আশায়।

পৃথিবীতে যতো ইহুদি রয়েছে তাদের প্রতি মুসলিমদের রয়েছে অসীম ঘৃণা আর হতাশা। আপনি প্রায়সই শুনতে পাবেন সকল খৃষ্টান-ইহুদিরা মুসলিমদের জ্ঞান চুরি করে জ্ঞানী হচ্ছে, মুসলিমদেরকে জ্ঞানী হতে, গূণি হতে কিংবা ধনী হতে বাধা দিতে সর্বদা ষড়যন্ত্র করছে।

এমন চিন্তা কেন তারা করেন?

যখন মানুষ নিজেকে পরাজিত হতে দেখে, নিজেদেরকে পিছিয়ে যেতে দেখে, নিজেরা অলস আর পরনির্ভর হয়ে উঠে, তখন তারা অদৃশ্য কল্পনার কাছে আশ্রয় নিতে শুরু করে। ঠিক সেই পয়েন্ট থেকেই মানুষ তার সহজাত বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে অযৌক্তিক মানুষে পরিণত হয়।

সেই বিবেচনাহীন মানুষের মাঝে তখন নিজেদেরকে একমাত্র সেরা ভাবার, সঠিক ভাবার এবং অনিশ্চিত পরকালের নিশ্চিত মুক্তির একমাত্র অধিকারী ভাবতে থাকে।

এমন ব্যাধির শিকার শুধু মুসলমানগণ একা নয়, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুসারী, ইসরায়েলের নেতানিয়াহুর সমর্থকরাও আক্রান্ত। এমন ব্যাধিতে হিটলারের পতন হয়েছে, এমন ব্যাধিতে একই রঙ, একই অঞ্চলের হওয়া সত্ত্বেও একে অপরকে খুন, প্রতিপক্ষের নারীদের ধর্ষণ, একই ধর্ম বিশ্বাস হওয়া সত্ত্বেও গোলাম করে রাখার চিন্তায় উন্মাদ মানুষের কথা আমরা পড়েছি।

ধর্মগুলো যখন মানুষ তৈরি করতে শুরু করে তখন মানুষের কল্যাণ, অর্থনীতি, ডিসিপ্লিন তাদের মাথায় ছিলো এবং একে সর্বজন, সর্বময় গ্রাহ্য করতে তারা ঈশ্বর ভাবনা সৃষ্টি করে। আলাদা আলাদা সার্বভৌম নিয়ে, আলাদা আলাদা আইন, কালচার, বিশ্বাস নিয়ে রাষ্ট্র-সমাজ ব্যাবস্থা এক পৃথিবীতে থাকলেও আলাদা আলাদা ঈশ্বর ভাবনা সম্মানজনক সহাবস্থান করতে পারছেনা কেন?

ধর্মবিশ্বাস সবার কাছে গছিয়ে দিতে ঈশ্বরের কথা বলে চালিয়ে দেয়া ধর্মগ্রন্থগুলোর চরম-পরম সত্যতা, ভূলের উর্ধ্বে থাকার ধারণা, আলোচনা-সমালোচনা, রিফরমেশনের দ্বার রুদ্ধতাই মানুষকে নিজ শ্রেষ্ঠত্বের অযৌক্তিক লড়াইয়ে মদদ দিয়ে আসছে।

ঠিক একই চিন্তা থেকে ১৮ ট্রাককে মসজিদে রুপান্তর করা হয়েছে। মানুষ ধর্ম, ব্যবসা নিয়ে ব্যাকুল হয়ে চিন্তা করলেও মানবতার কথা ভাবেনি।