Monday 30 January 2017

মাদ্রাসা ও জঙ্গিবাদ-১


আমার প্রথম ই-বুক
মাদ্রাসা ও জঙ্গিবাদ।


মাদ্রাসা শিক্ষা কাঠামো
আঠারোশ শতকের আগে যে সময়টিতে এসে ইসলামিক শিক্ষা ব্যাবস্থা তথা মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থা মুখ থুবরে পড়তে শুরু করে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানের অভাবে, তাঁর আগে কেমন ছিলো সেই শিক্ষা ব্যাবস্থা জানতে সেই সময়ের সিলেবাস পর্যালোচনা করলেই অনুধাবন করা যায়। কয়েকশত বছরের পরিকল্পনাহীন, রাজদরবার চালানোর প্রয়োজনে পরিচালিত এবং শুধুই ধর্ম কর্ম করার মৌলভী সৃষ্টির প্রতিষ্ঠান গুলো কখনোই গুছিয়ে উঠতে না পারা এবং এর ফলাফল আজও টের পাওয়া যায়। আঠারোশ শতক পর্যন্ত দিল্লীর মাদ্রাসা রাহিমিয়া ছিলো তুলনামূলক আধুনিক ব্যাবস্থাপনা। শাহ ওয়ালিউল্লাহ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সেই মাদ্রাসায় ধর্ম এবং বিজ্ঞান শিক্ষার মাঝে একটি ব্যালেন্স করার প্রচেষ্টা ছিলো।
বিষয়
সংখ্যা
ভাষার ব্যাকরণ
দর্শণ
যুক্তিবিদ্যা
এষ্ট্রনমি
গণিত
মিষ্টিসিজম
সিলেবাসঃ মাদ্রাসা রহিমিয়া, দিল্লী।
প্রায় একই রকম শিক্ষা ব্যাবস্থা লক্ষ্য করা যায়, লক্ষনৌ এর ফিরাঙ্গি মহলের মোল্লা নিজামুদ্দীন শাহলায়িরদারসে নিজামি’’ মোল্লা নিজামুদ্দীন শাহলায়ি তাঁর সিলেবাসে ট্র্যাডিশনাল শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছিলেন।
মাদ্রাসা শিক্ষাকে অনুধাবন করতে হলে মাদ্রাসা শিক্ষার লক্ষ্য, সিলেবাস, এর বিবর্তন, বিকাশ ইত্যাদি বিশ্লেষণ এবং এর ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরী। আরব জনপদে ইসলাম নামের যে ধর্মের শুরু হয় সেই অঞ্চলের মাঝে মক্কা-মদীনার মানুষের মাতৃভাষা আরবী থাকাতে আরবীতে তাদের দক্ষতা ছিলো বেশি, উপরন্তু এই দুই অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা কিংবা তাদের মাঝে ভাষা-সাহিত্য চর্চা, শব্দমালাকে আরবী ভাষার মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করা অত। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে যে, নদীয়া, শান্তিপুরের বাংলা বাঙ্গালীদের জন্য যেমন মান বিচারে বিবেচ্য তেমনই মক্কা-মদীনার আরবী অন্যান্য আরব অঞ্চলের জন্য মানদণ্ড হিসেবে বিবেচ্য ছিলো।
আরবে ইসলামের বিকাশ সাধীত হলে সেখানের মানুষ তাদের সামাজিক, অর্থনীতিক, রাজনীতিক জীবনে বিশাল পরিবর্তন বয়ে নিয়ে আসে।নতুন ধর্ম, নতুন আইন-রীতি সব কিছুই কোরান-হাদীসের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে শুরু করলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই সময়ের জ্ঞান চর্চা ছিলো কোরান-হাদীস ভিত্তিক। তাই তাদের সিলেবাস ছিলো কোরআন হাদীস।

মুসলিম সাম্রাজ্য বিকাশের সাথে সাথে, নতুন জনপদ, নতুন ভাষাভাষী মানুষ, নতুন কালচার তাদের সামনে এলে ইসলামিক শিক্ষা ব্যাবস্থায় আসে এক বিশাল পরিবর্তন। পরিবর্তনের হাওয়ায় বেগ আনে, ছন্দ আনে, রঙ আনে আর বয়ে বেড়ায় মুসলিমদের মাঝে ক্ষমতার দ্বন্ধ। তথাকথিত খোলাফায়ে রাশেদার যুগের অবসান হলে মুসলিমদের পরবর্তী ইতিহাস প্রধানত দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক দিকে মিশরের কায়রো কেন্দ্রিক আব্বাসী যারা আজকের পৃথিবীতে সুন্নি নামে পরিচিত অপর দিকে ইরাকের বাগদাদে ফাতেমি শিবির যারা শিয়া স্কুল অব থটের সাথে সম্পৃক্ত ফাতেমীগন ৯৬৯ সালে কায়রো ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করলে আব্বাসীগণ ১০৯০/১০৯১ সালে মাদ্রাসাতুল নিযামিয়্যা বা নিযামিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। মাত্র ৩৩ বছরের গাজ্জালী সেখানে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এই দুই স্কুল অব থট বা দুই শিবিরের কল্যাণে আজও ইতিহাস এদের সময়কেই ইসলামের গোল্ডেন এজ বলেন। আজও ৯০,০০০ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে আল-আজহার ইউনিভার্সিটি জ্ঞান বিলিয়ে যাচ্ছে অপর দিকে নিজামিয়্যা কলেজের সিলেবাস হাজার বছর পরও আজও অনুসরিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসায়।
১০৭২ সালে চরম এক সংকটময় সময়ের মাঝ দিয়ে বাগদাদে আব্বাসীয় খিলাফতের মসনদে বসেন খলিফা মালিক শাহ। ৮বছর পর ১০৮০ সালে নিজামুল মূলককে তাঁর খিলাফতের উজির হিসেবে নিয়োগ দেন। মুসলিম ইতিহাসে এমন দক্ষ দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এডমিনিষ্টেটর বিরল। তাঁর প্রচেষ্টায় সৃষ্ট এবং প্রচলিত নিযামিয়্যা সিলেবাসের ছায়া অবলম্বনে কিংবা নামকা ওয়াস্তে অথবা বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করে খুড়িয়ে খুড়িয়ে উট পাখির মতো বালিতে মুখ ডুবিয়ে আজও পরিচালিত হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থা।
পৃথিবী বদলে গেছে, মুসলিমগণ তাদের গোল্ডেন এজের রোমান্টিসিজম শুধু স্মৃতি কাতরতায় মনে করে, দেশ-রাজ্য, সাম্রাজ্য ভেঙ্গে খান খান হয়েছে, ক্রুসেড হয়েছে, বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে দুটি, রাজ শক্তি থেকে ভিখেরী হয়েছে মুসলিম, মানুষ ভীন্ন ভীন্ন গ্রহ খুজে বেড়াচ্ছে, আমেরিকা কে মানুষ খুজে বের করেছে, মানুষের উড়ার সাধ পূর্ণ হয়েছে, সমস্ত পৃথিবী হাতের মুঠোয় এসেছে কিন্তু বদলায়নি মুসলমানদের শিক্ষা আর নিযামিয়্যা সিলেবাস !
মুসলীমগণ এক তিনমাত্রিক গোলকে বন্দি হয়ে আছে, যার প্রথমটি তাদের দ্বীনকে চ্যালেঞ্জ বা এক্সপ্লোর না করার ইগো এবং ভয়, কলোনিয়াল সিস্টেম্যাটিক্যাল স্লো-পয়জনিং এবং আজকের সময়ের এক্সট্রিমিষ্ট পেট্র-ডলারের বিকাশ।

কয়েকশত বছরের অস্থীরতা কাটিয়ে যখন ভারতে মুসলিম শাষকগণ তাদের শাষণ বিকাশে মনযোগ দিতে পেরেছিলেন তখন তারা প্রথম যে কাজটি করেছিলেন তাদের রাজ কাজ পরিচালনার জন্য শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এবং তাদের প্রচারীত বিশ্বাসের প্রাতিষ্ঠানিকিকরণ।


১৯১৯সালে প্রকাশিত মাওলানা আবুল হাসান নদভী রচিতহিন্দুস্থান কি পুরানি দারসগাহেবইতে লিখেন, ১৩ ও ১৪ শতকের মাদ্রাসা গুলোতে শিক্ষার্থীদের সিলেবাসে ছিলো,
  • আদব-আখলাক
  • ব্যাকরণ
  • অরেশন
  • হাদীস
  • পাটিগণিত এবং এষ্ট্রনমি
  • তাসাওউফ
  • কালাম
মোঘলদের আমলে মাদ্রাসা সমূহের কমন সিলেবাস ছিলো,
  • আদব-আখলাক
  • সাহিত্য ও ব্যাকরণ
  • আইন
  • দর্শণ
  • গণিত
  • এষ্ট্রনমি
  • চিকিৎসা বিজ্ঞান
  • হাদীস
  • কালাম
  • তাসাওউফ
  • নক্সবন্দি পীরদের জীবনি
ট্রাডিশনাল মাদ্রাসার পাশাপাশি নন রিলিজিয়াস সেক্যুলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান ছিলো, সেখানে তাদের জন্য যে সিলেবাস ছিলো তা জীবনমুখি, তাদের সিলেবাসে ছিলো,
  • আখলাকে নাসিরি ওয়া আখলাকে জালিলি
  • পাটিগণিত
  • এষ্ট্রনমি
  • এষ্ট্রলজি
  • জিওমিট্রি
  • শাহনামায়ে ফিরদৌসী
  • জাফার নামা
  • ফুতুহাত ই তিমুরী
  • আকবার নামা
  • ইকবাল নামা ই জাহাঙ্গিরি
  • ওয়ারজাম নামা
  • মহাভারত
  • অরেশন
  • চিকিৎসা বিজ্ঞান
  • ইকোনমিক্স
  • সোশিয়লজি
  • সাহিত্য
  • মাকতুবাত
  • নাযহাতুল আরোয়াহ
  • মাসনভী
  • হাদীকা
  • পূরকৌশল
  • প্ল্যানিং এডমিনিস্ট্রেশন
  • রাজনীতি
  • স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনা
  • গণিত
  • ধর্ম
কলোনীয়াল এরাতে এই সিলেবাসে আসে বিশাল পরিবর্তন। কিছু পরিবর্তন পরিচয়কে ধুলিষ্যাত করে দেয় কিছু পরিবর্তন মাথা উচু করে নিজ পরিচয় পৃথিবীর পাতায় ছেপে যায়। ভয়, অবিশ্বাস, অহম আর দূরদর্শিতার অভাব এবং সঠিক নেতৃত্বের শূন্যতায় মাদ্রাসা শিক্ষা তাঁর জৌলুস হারিয়ে আজ এক জাতীয় বোঝা হয়ে উঠেছে তাঁর কারন সময়ের সাথে পরিবর্তীত না হতে পারা যার ছাপ পড়ে কলোনীয়াল এরার মাদ্রাসার সিলেবাসে জ্ঞানের চর্চা বহুমুখি না হয়ে নাম রক্ষার হয়ে উঠায় সেই সময়ের সিলেবাসে ছিলো,
  • সরফ
  • নাহু
  • বালাগাত
  • সাহিত্য
  • মানতিক
  • হিকমাত
  • রিয়াযি
  • ফিকহ
  • কালাম
  • হাদীস
  • ফারায়েজ
  • তাফসীর
পৃথিবীর ইতিহাসে সময়ের পরিক্রমায় মানুষের জ্ঞানের বিকাশ ঘটার সাথে মানুষ এগিয়ে গেছে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে, নতুন কে জানতে। ফেলে আসা সময়ের থেকে আরো কল্যাণকর কিছু করার তাড়নায় ছুটে চলেছে কিন্তু ভারতীয় তথা সারা বিশ্বের মুসলমান সমাজে এক রহস্যময় পিছে ছুটার যে প্রবনতা বা অভ্যাস তা গভীর চিন্তাতেও কূল পাওয়া যাবার মতোন নয়।

যেদিন ভারত থেকে মুসলমান কিংবা অন্যভাবে বললে বাঙ্গাল আর হিন্দুস্তান থেকে মোঘলদের ক্ষ্মমতাচ্যুতি সেদিন থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমান মানষে একটি কথা বেজে চলেছে, তারা লুন্ঠিত, তারা প্রতারিত, তারা নির্যাতীত, তারা শঙ্কিত, তারা এক অসংজ্ঞায়িত ঈমান রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছে যাতে হানাদার ছিলো ইংরেজ। ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে জার্মানী জাতীব্যাকস্ট্যাববা পিছন থেকে ছুরি মারার মিথ নিয়ে যেভাবে পৃথীবির ইতিহাসে অন্যতম নির্মম বর্বর হত্যাযজ্ঞ বিশেষত ইহুদী নিদনে উৎসাহিত হয়েছিলো আর তাদের নেতাগণ যেভাবে সাধারণ জার্মানদের জানিয়েছিলোকোন শত্রু তোমায় পরাজিত করেনিতেমনি করে সদ্য ক্ষমতা হারানো মুসলীম সমাজ তাদের মাঝে ইংরেজ বিদ্বেষকে তাদের বিশ্বাসের অংশ করে নিয়েছিলেন। মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব থেকেই ইংরেজ বেনিয়া, শোষক শ্রেণী সদ্য ক্ষমতা হারানো জাতী গোষ্ঠীকে অবিশ্বাস নিয়ে বিবেচনা করবে তাই একটি দুরত্ব নতুন ক্ষমতা লাভকারী এবং মুসলমানদের মাঝে ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকলো। অপর দিকে ইংরেজগণ মোগলদের প্রচলিত অফিসিয়াল ভাষার সাথে কমফোর্টেবল না থাকায় লর্ড উইলিয়াম বেনটিংক ১৮২৯ সালে তাদের দাপ্তরিক ভাষা পারসীর বদলে ইংরেজীতে করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু তাঁর প্রস্তাব গৃহীত না হলেও ১৮৩৫ সালে থমাস বেবিংটন মেকলি ভারতে ইংরেজী শিক্ষা ব্যাবস্থার গোড়া পত্তন করেন। থমাস বেবিংটন মেকলি ভারতীয়দের ইংরেজী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, an educational system that would create a class of Anglicised  Indian who would serve as cultural intermediaries between the British and the Indians. সহজ বাংলায় বললে যা শুনে শুনে আমরা বড় হয়েছি তা হলো, কেরানী গড়ার শিক্ষা ব্যাবস্থা। মৌলিক কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়, ইংরেজগণ যেমন বহিরাগত, হানাদার আর লুটেরা ছিলো তেমনই ভারতে এসে রাজ করা মোঘল কিংবা অন্যান্য মুসলীম শাষকগণও এর এমন কোন ভীন্ন কিছু ছিলেন না। তারাও পারসী ভাষা ভারতীয়দের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন তবে আজ কেন ভারতের মুসলমানগণ সহজ ভাবে তাদের ক্ষমতাচ্যুতি নিতে পারেন নি ?
প্রত্যেক পরিবর্তনেরই একদল সুবিধাভোগী থাকেন তেমনই নতুন শাষকদের প্রিয় পাত্রে রুপ পেলেন রাজ ক্ষমতা থেকে যুগ যুগ ধরে বাইরে থাকা হিন্দু এলিট ক্লাস। সমাজে এলো আরো এক নতুন শ্রেণী মধ্যবিত্ত। এরা রুপ রঙ্গে ভারতীয় কিন্তু ভাবনায় ইংরেজ। এরা তাদের দিন বদল করতে চান তাই তাদের কাছে আদর্শ আর নীতি যতোটা খেলো দরীদ্র শ্রেণীর মাঝে ধর্ম বা বিশ্বাস ততোটা প্রকট হয়ে আসতে থাকে।
একদিকে ক্ষমতাচ্যুতি অন্যদিকে নিজ বিশ্বাস দূলছে ঝড়ো হাওয়ায়, এমন বাস্তবতায় মুসলমানগণ ভারতীয় মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভুলটি করলেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান, নতুন ভাষা, নতুন নেতার সাথে না চলে সবার মাঝে থেকেও গোপন বা উহ্য হয়ে থাকার পথে চলা শুরু করেন।
কলোনীয়াল এরার মাদ্রাসা সিলেবাস দেখলেই আমরা দেখতে পাই সেই সিলেবাসে শুধু ইসলাম আছে, পৃথিবী নেই আর যখন পৃথীবিই নেই তাই বেহেশত আর দোযখ থাকে কি করে ?
অপর দিকে ইংরেজ বেনীয়াগণ দেখলেন মাদ্রাসা শিক্ষা তাদের কোন কাজে আসবে না উপরন্তু মুসলমানগণ তাদের প্রতি নমনীয়, অনুগত বা বন্ধুভাবাপন্ন নয় তখন তারা অনেক দিন পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষায় সহযোগীতা বন্ধ করে রেখেছিলেন যার ফলে মাদ্রাসা শিক্ষা চাইলেও ট্রাডিশনাল শিক্ষার সাথে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার সমন্বয় ঘটাতে পারেননি। বৃটিশ সরকার ভারতের দায়িত্বভার বুঝে নেয়ার আগ পর্যন্ত শিক্ষা পুরোপুরি দান-দক্ষিণা নির্ভর হয়ে ছিলো। সময়ের সাথে সাথে ভারতীয়দের পৃথিবী বদলে যাওয়ায় ভারতীয়গণ ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নতুন ধারার সূচনা করেন। ১৮৯০ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৬০,০০০ জন ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন যার এক তৃতীয়াংশ হন আইনজীবী বাকি সংখ্যার বেশীর ভাগ বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে যোগ দেন। ১৮৮৭ সালের এক হিসেবে দেখা যায়, ২১,০০০ মিড লেভেল সিভিল সার্ভিস নিয়োগের মাত্র ৭% বা ১৪৭০ জন ছিলেন মুসলমান। ভারতীয়দের মাঝ থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, বিজ্ঞানী আস্তে শুরু করলেও ভারতীয় মুসলমানদের অংশ গ্রহণ এতো কম সংখ্যায় ছিলো যে এর পরিনাম ভারত বিভাগের পরও কাটিয়ে উঠা যায়নি।
১৮৮২ সালে ৬০০ জন মোট ছাত্র নিয়ে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৬৭টি কলেজ নিয়ে ছিলো সেই সময়ের শিক্ষা আয়োজন।
১৯০১ সালের হিসাব অনুযায়ী ভারতবর্ষে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪৫টি কলেজ এবং এতে ১৮০০০ ছাত্র ছিলো।
১৯২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ১৪টি, কলেজ ১৬৭টি এবং ছাত্র ছিলো ৪৬০০০জন।
১৯৪৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ২১টি, কলেজ ৪৯৬টি।
এই সময়ে ১৮৭৫ সালে এমএও কলেজ যা পরবর্তীতে ১৯২০ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরীত হয় এবং আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় মুসলমানদের সামাজিক রাজনীতিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বা বাতিঘরে পরিণত হয়। অপর দিকে মাদ্রাসা শিক্ষা গণ-মানুষের চাহিদা পূরণে ব্যার্থ হয়ে ধীরে ধীরে কেন্দ্র থেকে প্রান্তে আর জ্ঞান চর্চার আশ্রম থেকে ইমাম-মুয়াজ্জীন তৈরীর কারখানায় রূপান্তরিত হতে থাকে। কিন্তু ১৮৬৬ সালের দারুল উলুম দেওবন্দ, ১৮৯৪ সালের নাদওয়াতুল ঊলেমা লক্ষনৌ, ১৯৩৮ সালের জামেয়া রাবিয়া ইসলামিয়া নাগপুর মুসলমানদের জন্য গভীর ইসলামিক ভাব ধারার রাজনীতি, সামাজিক এবং ধর্মীয় প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। মোঘল আমলে যেখানে ১২৫০০০ মাদ্রাসা ছিলো, যেগুলোতে দুনিয়া ও আখেরাতের সব কিছুই চর্চার সুযোগ ছিলো তা বদলে আইসোলেটেড দরীদ্র জনগোষ্ঠীর লঙ্গর খানায় রুপ নেয় মাদ্রাসাগুলো।
রাজ ক্ষমতা বা শাষক শ্রেণীর পরিচয় থেকে প্রজাতে রূপান্তরিত হওয়া ভারতীয় মুসলমানগণ যখন নতুন শাষক এবং তাদের ভাষার সাথে নিজেদের আত্মীকরনে ব্যার্থ হন তখন তারা তাদের সেই ব্যার্থতার প্রভাব এবং এর প্রতিক্রিয়ার শিকার ভাবেন তাদের ধর্ম ইসলাম কে আর সেই ভাবনা থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে বিপন্ন ইসলামকে রক্ষার ভাবনায় মুসমানদের শিক্ষা ব্যাবস্থা কোর ইসলামিক ছকে বন্দি হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে, পেশাভিত্তিক, বিজ্ঞান বা ব্যায়সঙ্কুল বিষয়াদি মুসলিম শিক্ষা ব্যাবস্থা থেকে বিদায় নিতে থাকে সেই সাথে ইউরোপিয়ান রেনেসা ভারতীয়দের কাছে নতুন দুনিয়ার দ্বার খুলে দেয়ায় মানুষ নতুন কে ফেলে পুরাতন কে আলিঙ্গন করেনি।
ভারতের মানুষ যখন তাদের স্বাধীকার এবং নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে জাগরুক  হলেন তখনি প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার বিরুদ্ধে সারা ভারত একিভূত হতে থাকে। মুসলমানগণ সেই সংগ্রামে শামিল ছিলেন গৌরবের সাথে, সক্রিয় ভাবে। ইংরেজ বিরোধী এই আন্দোলনে মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসাগুলো খুবই সক্রিয় ভুমিকা পালন করে। মাদ্রাসাগুলো ভারত নন্দিত রাজনীতিক নেতৃবৃন্ধ, তাত্ত্বিক সৃষ্টি করে যাদের অংশীদারী প্রচেষ্টায় মুসলিম আইডেনটিটি আরো একবার ভারতে আলোচিত এবং স্বিকৃত হয়। ভারত থেকে ইংরেজ হটানোর এই সময়ে মুসলমানগণ তাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার উন্নতি কল্পে কোন কাজ করতে ব্যার্থ হন। দারুল উলুম দেওবন্দ এর প্রতিষ্ঠা কিংবা তাদের গৃহীত নীতি এবং তাদের সিলেবাস দেখলে এর প্রমান মেলে। কিন্তু ভারত পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের যারা দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাস ফলো করেন বলে দাবী করেন বাস্তবে দেখা যায় আসলে তারা ফলো করতে যেয়ে দারুল উলুম দেওবন্দেরও পেছনে পড়ে রয়েছেন। দারুল উলুমের সিলেবাস এবং সরকারের সাথে তাদের কমন গ্রাউন্ডে কাজ করার ইচ্ছা ভারতে তাদের রেসপন্সিবল অথ্রিটি হিসেবে দেখা হয়। দারুল উলুম দেওবন্দ তাদের সিলেবাস সম্পর্কে কি বলে তা তাদের ওয়েব সাইট থেকে হুবহু তুলে দেয়া হলো।
THE CURRICULUM OF DARUL ULOOM
In the second half of the thirteenth century Hijri the educational centrality of Delhi and Khairabad had come to an end; however, some light of knowledge was still lingering in Lucknow. Although the centrality of these places had ended, the distinctive peculiarities of all these three centres were extant more or less, in all the Arabic schools of India.
Darul Uloom Deoband has not only preserved the greatness of these sciences but has also played an important role in developing them. The peculiarities of all these three places have been gathered in the syllabus of Darul Uloom and the syllabus thus prepared with their amalgamation has been in force generally for more or less. A century in all the Arabic schools in the country. At some places other modern syllabi are also current. Amongst such seminaries the position of Nadvatul-Ulama Lucknow, is most conspicuous, but this type of syllabus is not very common.
Inspire of the afire-said comprehensiveness of the syllabus of Darul Uloom even as changes and alterations have taken place in the syllabi in every period as per the demands of the age, similar elimination and addition has been done, in accordance with the zeitgeist, from time to time, in the syllabus of Darul Uloom also in which, along with the religious sciences, contemporary sciences and economic necessities too, on the whole, have been paid attention to endeavouring to make it more and more useful.
The present syllabus consists of four stages: Primary, Middle, High, Mastery (Post-graduate stage).
According to the rules of Darul Uloom, the completion of the primary course is necessary for reaching the “Arabic Classes”.
The post-graduate class is not compulsory; if the student wants to acquire mastery in any subject or topic, he can take admission in the post-graduate class and continue his education. The curriculum of Darul Uloom Deoband for Arabic classes and Post-graduate, as detailed below consists of the following arts and sciences and books:—




THE EIGHT-YEAR COURSE OF THE ARABIC CLASSES

FIRST YEAR
Subject
Books
Bio Graph of Prophet (syrat)
Syrat-e-Khatimul Anbiya (By: Mufti Md. Shafi)
Conjugation-Grammar (Sarf)
Arabic Primer; Mizanus-Sarf and Munsha'ib
(complete); Panj Ganj (complete
Syntax (Nahv
Memorizing of Nahv-e-Mir (complete); Sharh-e- Mi'ata A'mil (complete).
Arabic Literature
Miftahul Arabia Part 1,2, & Alqira'atul Waziha (1)
Logic
Taiseer al-Mantiq
Chirography
(Khush-navisi)
Correct writing and Dictation
Cant illation: (Tajvid)
Exercise in cant illation in the first quarter of the Para-e-Amm

SECOND YEAR
Subject
Books
Conjugation-Grammar (Sarf)
Ilmus Segha & Fusool-e-Akbari
Syntax (Nahv
Hidaytun Nahv (complete) & Kafiya (chapter: Fail & Harf)
Arabic Literature
Alqira'atul Waziha (2) & Nafhatul Adab
Jurisprudence: (Fiqh)
Noorul Izah & Qudoori (To Haj chapter)
Logic
A'san Mantiq & Mirqat
Chirography (Khush-navisi)
Correct writing and Dictation
Cant illation: (Tajvid)
Jamalul Qra'an & Exercise in cant illation of the Para-e-Amm











THIRD YEAR
Subject
Books
Quranic Exegesis
Tarjumatul Quran (From Sura-e-Qaf to end)
Jurisprudence: (Fiqh)
Qudoori (From Kitabul Boyoo to end)
Syntax (Nahv)
Sharah Shuzuruz Zahab (complete)
Arabic Literature
Nafhatul Arab & Alqira'tul Waziha (3)
Hadith
Mishkatul A'thar
Logic
Shrah Tahzeeb (complete)
Islami Akhlaque
Talimul Muta'allim
Cant illation: (Tajvid)
Exercise in cant illation of the five Para
External study
Tareekh Millat (Khilafat-e-Rashida)

FOURTH YEAR
Subject
Books
Quranic Exegesis
Tarjumatul Quran (From Sura-e-Yousuf to Qaf)
Jurisprudence: (Fiqh)
Sharah Wiqayah (Part 1 coml. & part 2 up to Itaque)
Principles of Jurisprudence
Tasheelul Usool Arabi & Usoolus Shasi
Rhetorics
Darusul Balaghah (complete)
Hadith
Alfiyatul Hadith
Logic
Qutbi (complete)
History
Khilafat-e-Bani Umayya, Abbasiya, Turkiya (By: zamullah Shahabi)
Cant illation: (Tajvid)
Exercise in cant illation of the five Para
Modern Sciences
Sciences of Madaniyyat, Geography of the Arab Peninsula and other Islamic countries.










FIFTH YEAR
Subject
Books
Quranic Exegesis
Tarjumatul Quran (From beginning up to Sura-e-Hood)
Jurisprudence: (Fiqh)
Hidaya Part 1 (complete)
Principles of Jurisprudence
Noorul Anwar up to Sunnah & Matan Alminar ( form Kitabus Sunnah up to end)
Rhetorics
Mukhtasarul Ma'ani 1st subject & Talkhisul Miftah (2nd & 3rd Subject)
Beliefs (Aqa'id)
Aqidatut Tahavi
Logic
Sullamul Uloom (up to subject of Shartiyat)
Arabic Literature
Muqamat ( up to 15 Muqama)
Cant illation: (Tajvid)
Exercise in cant illation of the five Para
External study
History of Indians Kings (up to 1947 A.D.)

SIXTH YEAR
Subject
Books
Tafsir
Tafsir Jalalayn (complete)
Jurisprudence: (Fiqh)
Hidaya Part 2 (complete with Itaque subject)
Principles of Tafsir & Jurisprudence
Alfauzul Kabeer & Husamy (complete)
Arabic Literature
Deevan-e-Mutanabbi (appointed chapter) & Deewan-e-Himasa (Babul Adab)
Philosophy
Mabadiul Falsafa & Mabazi (Complete)
Cant illation: (Tajvid)
Exercise in cant illation of the five Para
Study of Sirat
Asahhus Siyer
SEVENTH YEAR
Subject
Books
Hadith
Mishkat, Sharah Nukhba & Muqadma Shaikh Abdul-Haque
Jurisprudence: (Fiqh
Hidaya Part ¾
Aqa'ed
Shrah Aqa'ed
Fra'iz
Sirajy
Cant illation: (Tajvid)
Exercise in cant illation of the five Para
External Study
Al-Mazahibul Islamia Urdu (Shaikh Abu Zahra )


EIGHTH YEAR (Daura-e-Hadith)
Subject
Books
Hadith
Bukhari Sharif  (Complete)
Hadith
Muslim Sharif  (Complete)
Hadith
Tirmizi Sharif  (Complete)
Hadith
Abu Da'ud Sharif  (Complete)
Hadith
Nasa'i Sharif  (Complete)
Hadith
Ibn-e-Maja Sharif  (Complete)
Hadith
Tahavi Sharif  (Complete)
Hadith
Shama'il Tirmizi Sharif  (Complete)
Hadith
Mu'atta Imam Malik  (Complete)
Hadith
Mu'atta Imam Mohammad (Complete)
External
Tajvid
Note:      After the successful completion of this 8-year course of the Arabic classes the student becomes eligible for receiving the graduate degree (Sanad-e-Faraghat) of Darul Uloom.
POST-GRADUATE CLASSES
Mastery in Tafsir
Subject
Books
Tafsir
Tafsir Ibn-e-Kathir (Sura Saffat up to sura Najam)
Tafsir
Tafsir Ibn-e-Kathir  (Para 17 up to last Quran)
Tafsir
Baizavi  (Sura A'al-e-Imran up to sura A'araf)
Tafsir
Baizavi  (Sura-e-Baqra)
Usool-e-Tafsir
Manahilul Irfan  (some chapter)
Usool-e-Tafsir
Sabiluri Rishad
Mastery in Theology
Subject
Books
Hikmat-e-Shariyah
Hujjazrullah-il-Baligha
Ilm-e-Kalam
Musamira
Usool-e-Hadith
Muqadma ibne Salah
Fiqh
Al-Ashbah Wannazair
Usool-e-Fiqh
Musallemus Saboot
Usool-e-Fiqh
Sabilur Rishad

Mastery in Fiqh
Subject
Books
Faraiz
Siraji  (with training)
Ifta
Uqood Rasm-il-Mufti
Qawaid
Al-Ashbah Wannazair
Qawaid
Qawaid-ul-Fiqh
Fiqh
Durr-e-Mukhtar (Nikah, Talaq, Waqf etc)
Ifta
Tamreen-e-Fatwa

Mastery in Literature
Subject
Books
Prose
Asalibul Insha
Prose
An-Nathrul Jadid
Poetry
Deevan-e-Hemasa, Sab'a Mu'allaqa
History
Tareekh-ul-Adab-il-Arabi
Balaghat
Albalaghatul Waziha
Insha
Insha-e-Arabi
External Study
Hiyati, Al-iyam, Abarat, Abqriyat



Mastery in Literature (contd.)
Subject
Books
New Prose
Rijal minat Tareekh (P.1 up to 40)
Min Nafahat-il-Hiram (P.1up to 50)
Hayati  (P. 1 up to 60)
Old Prose
Wafayatul Aayan  (Some chapter)
Kitabul Bukhla (Part 1)
Kalila w Dimna
Insha
Al-Insha-ul-Arabi
Tabirat
200 Tabirats clips from Arabic news papers and magazines. `
Maqala
Arabic article in 100 pages.

Mastery in Fiqh (Contd.)
Subject
Books
Usool
Muqadma Durre Mukhtar, Rasmul Mufti
Fatwa writing
Training of Fatwa writing in light of Rasmul
Summary of selected chapters
Summary of selected chapters from Raddul Muhtar, Al-Bahrur Ra’ique, Fathul Qadeer, Al-ashbah wan Naza’ir (3rd subject) & another chapters from Shami.
Introduction of books on Fatawa
Introduction of Fatawa’s books and their specialization.
Tamreen-e-Fatawa
Learning of Fatwa writing.

Another PG Courses
Mastery in Training for Teaching (B-ed), Mastery in Tajweed w Qira’at, Mastery in Calligraphy, Mastery in Journalism, Mastery in Dawah, Mastery in Computer, Mastery in English literature etc.


No comments:

Post a Comment