Monday 21 August 2017

Lipstick Under My Burkha



সুদানের পার্লামেন্টিয় ইতিহাসে সর্বপ্রথম নারী সদস্য ফাতিমা আহমেদ ইব্রাহিম, কিংবা শ্রিমাভো বন্দরনায়েকে অথবা আমাদের খালেদা-হাসিনা এবং মালালা যে নামগুলো আমাদের আশার আলো দেখায় নারীমুক্তির, এর বাস্তবতা কতোটুকু?
কলোনীয়াল ডাকাত এবং নিজ দেশের উর্দিপরা হায়েনা, নিজ স্বামী আততায়ীর হাতে নিহত হবার পর কিংবা নিজের মাথায় বুলেট নিয়ে যে মানুষগুলো নারীমুক্তির কথা বলেছেন তারা কতোটুকু ফেমিনিষ্ট হতে পেরেছিলেন তা আমি জানিনা। তাদের ফেমিনিষ্ট স্বত্ত্বা হয়তো আমাদের প্রত্যাশাকে ছুয়ে যেতে পারেনি কিন্তু তাদের পথচলা বিশেষত ক্ষমতা, লালসা, আর পুরুষের লালায় জড়িয়ে থাকা সমাজে তাদের পদচারণা নিঃসন্দেহে ছাপ ফেলে গিয়েছে শত শত ফাতিমার স্বপ্নে, বিশ্বাসে।
সেই বিশ্বাস বা স্বপ্নের বল কতোটুকু? ঘুনে ধরা সমাজের রুট লেভেলে যে ব্যাধি বাসা বেধেছে ধীরে ধীরে, হাজার বছর ধরে তাঁর চিত্রটা কি তাঁর একনজরের দৃশ্যায়ন “Lipstick Under My Burkha”
কি? দেখেন নি এখনো? জলদি করে সিনেমাটি দেখে ফেলুন, ভালো সিনেমা।
চারটি মেয়ের গল্প, একচুয়ালি একজন মেয়ের গল্প। আপনার ছোট বোনটি, কিংবা আমার আম্মা অথবা আপনার কল্পনায় আসতে না পারা আপনার স্ত্রীর নারী স্বত্বাই সেই মেয়েটি।
যতো সাধারণ হয় একটি নিন্মবিত্ত পরিবার তেমনই একটি পরিবারের মেয়ে রিহানা আবেদী। নাম শুনেই অনুধাবন করা যায় মুসলিম পরিবারের একজন মেয়ে। তাঁর দুচোখ ভরা স্বপ্ন। গায়িকা হবার, সে তাঁর সোসাইটির কিংবা তাঁর আম্মার তামাদি ফ্যাশনকে ছেড়ে জিন্স, টপস, লিপষ্টিক, হাইহিল আর পারফিউমের সুবাস নিতে চায়। কিন্তু তাঁর সেই দুনিয়া আর তাঁর মাঝে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়াল হয়ে আছে এক বোরখা। বড় নিরীহ এই কালো গাউনের এক ছোট খিড়কী দিয়ে সে তড়পাতে থাকে বাহিরের দুনিয়ার একমুঠো মেঘ ছুয়ে দিতে।
বোরখার ঘেরাটোপ থেকে দহলিজ পর্যন্ত আসতে পারা লিলার গল্প নিজের স্বপ্নের এক দুনিয়াকে এক্সপ্লোর করার উদ্দাম উত্তেজনায় ভরপুর। লিলাকে এক ভয়ের মাকড়সার জাল হরপ করে নিতে চায়। দারিদ্র্যতার ভয়, অভাবের ভয়, নিজ গৌরব হারানোর ভয়, একাকিত্বের ভয়। এই ভয় সে মায়ের পেট থেকে পুরুষের আশির্বাদে পেয়েছে, তাঁর উদ্দাম আর সাহস এই জাল ছিন্ন করতে হিমশীম খায় অহর্নিশ। এই ভয় এমনই এক ভয় যা আমরা এডপ্ট করি, এডজাষ্ট করি যেভাবে বিজলি চলে গেলে চোখ নিজেই এডজাষ্ট করে নেয়, সঙ্গম করে নেয় আধারের সাথে...এই সঙ্গম কি অপবিত্র?
পুরুষ নাকি স্বর্ণের আংটি, তাই বাকা হলেই কি আর কালো হলেই কি! তাঁর রয়েছে স্বামী স্বত্ত্বা, তাঁর রয়েছে উলঙ্গ পেশী স্বত্ত্বা, সে বাচ্চাদানীতে ফি বছর বীজ ঢেলে বাচ্চা বানানোর মেশিনের অস্তিত্ত্ব বজায় রাখে। তাইতো আমরা দেখি শিরিন আসলাম একটু ভালোবাসার আশায়, একটু ভালো থাকার আশায় দরজায় দরজায়  ঠুকরে ঠুকরে অথর্ব বেকার স্বামীর হয়ে কাজ করে যায়। নিজেকে নারীর অবয়বে এক টুকরো মাংশের ঢেলা ছাড়া আর অন্য কোন রুপে  দেখার সুযোগ পায়না। নিজেকে স্বাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখা তাঁর অপরাধ, সবজির বাজার থেকে ফেরার পথে কনডম কেনা মুহতারামার অপরাধ! শিরিনের স্বামীর পরকিয়া বোরখার অন্য পাশের গল্প, বিছানায় নিজের ইচ্ছা থাকা বোরখার বাইরের গল্প, স্ত্রী হয়ে কাজ করার ইচ্ছা তাঁর স্বামী হয়ে উঠার প্রচেষ্টার নামান্তর।
নিজের একাকীত্ব আর নিজের যৌনতার অধিকার যখন সমাজ দখল করে নেয় তখন ৫৬’র পুরুষ খোঁজেন তাঁর সঙ্গি যার বয়স হবে ৩৫ বা ৪০ আর তাঁর তদারকি করবে আর কোন নারী এবং এতে করে সমাজের কোন কিছুরই কিছু ক্ষয়ে যায়না কিন্তু উষা বা বুয়াজীর নিজের জন্য এহেন চিন্তা বা ফ্যান্টাসি রাখা মানাবে কেন? মেয়েটিকেই কচি হতে হবে, সে কি আর মানুষ, মেয়েতো সবজির ক্ষেতের একটি শষা মাত্র... বুয়াজীর জীবনকে এক কালো পুরাতন জীর্ণ বোরখায় মুড়িয়ে দিয়েছে তাঁর সমাজ, তিনি এর বাইরে যেতে পারেন না...
বুয়াজী, রিহানা, লিলা কিংবা শারমিনের অপরাধ তারা স্বপ্ন দেখেন, সীমাহীন...স্বপ্নকে লাগাম দিতে হয়। এটি হাজার বছরের অপরিবর্তনীয়, অহঙ্কার আর গৌরবের কালচার, ঐতিহ্য। এঁকে রক্ষা করতেই হবে। তাই নানা রঙের, নানা ঢঙ্গের, নানা ভাজের বোরখা এসেছে বাজারে। তোমার লিপিষ্টিক কেউ দেখতে পাবেনা, তোমার ঘ্রাণ তুমি কাউকে দিতে পারবেনা।
জীবনে বাচ্চা পয়দা করা ছাড়া তুমি আর করবে কি?

মেয়ে সিনেমাটি তোমায় দেখতে হবে। নিজের আম্মা, খুব ভালোবাসার বোনটি এবং যদি পারো তোমার ভাবির দিকে তাকাও... তুমি খুজে পাবেই বুয়াজি, শিরিন, লিলা কিংবা রিহানাকে।
 ভেবেছিলাম হয়তো সিনেমাটি মুসলিম ব্যাশিং করে বানানো, ভেবেছিলাম এওয়ার্ড পাবার জন্য সেনসেশন ক্রিয়েট করে বানানো সিনেমা বাস্তবে এমন কিছুই নয়। যে সোসাইটিতে এই চরিত্রগুলো বসবাস করে সেখানে কোন ধর্ম নেই, সেখানের একমাত্র দানব দারিদ্রতা ও ধর্ম এবং ধর্ম ও জীবনের  কালচারাল সঙ্গম।  অলংকৃতা শ্রীবাস্তবের পরিচালনা, গল্প রচনা এবং স্ক্রীনপ্লেতে জীবন্ত হয়ে উঠা এই সিনেমাটি আমাদের কে আরো একবার স্মরণ করিয়ে দেয় মাস মিডিয়া হিসেবে সিনেমা এখনো আমাদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম।






















No comments:

Post a Comment