Monday 6 July 2020
চোখ খুলুন, প্রশ্ন করুন। ভাবুন।
যুদ্ধ কাঁহাতক চলে? যতক্ষণ অস্ত্রশস্ত্র থাকে, যতক্ষণ জীবন থাকে। তর্ক (কুতর্ক নয়) কতদূর চালানো যায়? যে পর্যন্ত জ্ঞান ও বিশ্বাস থাকে, মর্যাদা ও কল্যাণ থাকে।
অনেক দিন থেকেই লিখি না, কি হবে লিখে ভেবে। তবুও ভাবি, লিখার কথা চিন্তা করি। মানুষ হিসেবে এটুকু আমি করতেই পারি, এটলিষ্ট।
বাংলাদেশে মহিলা স্বাস্থ্য, মহিলার অধিকার, সম্মান দুনিয়ার অন্য কোণ যায়গা থেকে ভালো কিছু নয়। এখানে সমকাম, পাবলিক নুইসেন্স বা পাবলিক পর্দা একটা বড় রকমের বিষয়। তাই আসাদুজ্জামান সিনেমায় মদ খাবার দৃশ্য চিত্রায়নে আন-কমফোর্টেবল হন।
১০ মিনিট স্কুল বা এর প্রতিষ্ঠাতার ব্র্যান্ড মানুষের কতোটা কাজে লাগে তার কোন রেজাল্ট আমার জানা নেই কিন্তু উনার কাজ যে উনাকে বিত্ত-বৈভব এনে দিয়েছে তা তিনি নিজেই স্বীকার করেন। বাংলাদেশের মানুষ নিজে বদমাশি করলেও তাদের শিক্ষক, ইমাম বা নেতাদের সাদা মনের মানুষ হিসেবে দেখতে চায়! ঘুষও খাবে আবার বাসায় ফেরার সময় মাজারে ৫ টাকা দিয়ে খোদার সাথে দুই নম্বরির রফাদফা বা মুখ বন্ধ রাখার ডিল করে আসবে। এই ব্যাধি শুধু সাউথ এশিয়ার মুসলমানদের মাঝে নয়, সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মাঝে বিদ্যমান। অনেক আলোচনায় যাবার আগে ভেবে দেখতে হবে কেন?
আমি মনে করি, শিক্ষা-গবেষণা বিমুখতা, দরিদ্রতা এবং অলস মানসিকতা এর পেছনে দায়ী। গত ৫০০ বছরে আপনি দেখবেন না মুসলিম প্রধান দেশগুলো ওই তিন অভিশাপ থেকে বের হতে কিছু করেছে। এই সময়ে ইসলামিক ব্রাদারহুড বদল হয়ে আমির-মিসকিনের রিলেশনে এসে দাঁড়িয়েছে। পীর-খানকা-অজ্ঞানতা- প্রশ্ন-হীন উজবুক হবার নেশা মুসলমানদের দখল করেছে।
ইসলামিক প্রিচারগণই বলেছেন শুনেছি, মুসা নবীর জমানা ছিলো যাদুবিদ্যার উৎকর্ষতার তাই মুসা নবীর কাছে ম্যাজিক্যাল মোজেজা ছিলো, ঈসা নবীর সময় ছিলো চিকিৎসার উৎকর্ষতার তাই তিনি কিউর করার মোজেজা পেয়েছিলেন কিন্তু এই জমানা যুক্তির- তর্কের- আধুনিক বিজ্ঞানের এই সময়ে মুসলমান মনকে কে সঠিক জবাব দেবে? মুসলমানদের সকল প্রশ্নের উত্তর হতে হবে কোরআন- হাদিসের ভিত্তিতে কিন্তু কাদের হাতের উপর এই দায়িত্ব ন্যস্ত?
মসজিদের যে ইমাম তাদের মাঝে সবাই কি স্কলার? মাদ্রাসার যে শিক্ষক তিনি কি স্কলার? উনারা কি গবেষণা করেন? উনাদের কাছে কি সেই রিসোর্স আছে? রাষ্ট্র কি তাদের ফেসিলিটেট করে? সমাজ কি তাদের স্বাধীন ভাবে কাজ করতে যথেষ্ট অনুদান দেয়? শিক্ষা কাঠামো কি পরমত সহিষ্ণু হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে তাদের তৈরি করে?
আপনার সাথের ক্লাসের ছেলে মেয়েদের মাঝের সবাই যেভাবে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-আইনজ্ঞ-দার্শনিক-গবেষক হতে পারেনা, কিংবা সকলের অনুধাবন বা জ্ঞান অর্জনের সক্ষমতা বা আগ্রহ সমান থাকেনা তেমনি মাদ্রাসাতেও একই রকম। তাই ইমাম-মুহাদ্দিস-মুবাল্লিগ মানেই জ্ঞানী নয়। ভুলে যাবেন না, ভালো ছাত্র মানেই ভালো শিক্ষক নয়। তেমনি একজন মুসলিম বা হিন্দু বা অন্যান্য মানেই সে তার বিশ্বাসের বা অবিশ্বাসের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না।
এই সময়ে সমকাম বিশ্বব্যাপী আলোচনায় থাকা একটি বিষয়। আধুনিক বিজ্ঞান নিজেও এই বিষয়ে সকলের মনের সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেনা। মুসলমানগণ সেখানে এই আলোচনাতে না যেয়ে কুল্লু হারাম বলে বসে আছে। আপনি যদি বলেন, না না এইখানে, ঐখানে উনি-তিনি এই, ঐ করেছেন তবে জেনে রাখবেন হয় সেগুলো দিনের আলোয় আসেনি অথবা যথাযথ ভাবে কনভিন্সিং না।
ধরেই নিলাম, কেউ কেউ ফ্যাশন বা কোন প্রয়োজনে সমকামে লিপ্ত কিন্তু যে শিশুটি কোন কিছু বোঝার আগেই, ম্যানুপুলেট হবার সুযোগ পাবার আগেই যখন তার সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন অপজিট জেন্ডারের দিকে ঝুঁকে থাকে তখন তাকে ইসলাম কিভাবে ডিল করবে তার জবাব কই?
ব্যাক্তির স্বাধীনতাকে কিভাবে ইসলাম ডিল করবে? আত্মার স্বাধীনতা থাকায় কেউ ইমানদার, কেউ কাফির তবে কেন কেউ উভকামি-সমকামী বা কোনকামিই হবেনা? যেখানে ফ্যাসাদ না করার কথা বলা হচ্ছে তখন পাবলিক শেমিং, গিলটি করে কিভাবে পরমত সহিষ্ণু সমাজ পাওয়া যাবে? বিদায় হজ্বে কি বাড়াবাড়ির কথা নিষেধ করা হয়নি? কোন ইসলাম সাধারণ মানুষ আজ ফলো করবে? প্রশ্ন-হীন ইসলাম এই জমানায় অবাস্তব।
আজকের ইসলাম ৫০০ বা ১০০০ বছর পর এমনটা থাকবেনা, বদল হয়ে যাবে কোরানের ইন্টারপ্রেটেশন। যেমনটা হয়েছে অন্যান্য ধর্মের সাথে। যা বদল হবে তার কিছু আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বা আবারও নতুন ভাবে পরিবর্তন হবে। আজ আহলে হাদিসরা সকলের ট্র্যাডিশনাল বা শত বছরের ইসলামিক আচার – প্র্যাকটিসকে চ্যালেঞ্জ করে যেভাবে নতুন বা আদি ফর্ম প্রেজেন্ট করছে ঠিক এমনই পরিবর্তনের ঝড় আসবে। এই ঝড় রোখার সাধ্য কারও থাকেনা, হয়না। এই পরিবর্তন কে ডিল করতে হয়। শিক্ষা-গবেষণা-প্রশ্নের-যুক্তির দরজা খোলা রাখতে হয়।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে, এনজিও-মিডিয়া-বিজনেস-আইমান সাদিকদের মতো ব্যাক্তি-আমেরিকা ও যে কোন পাওয়ারকে সন্দেহের চোখে দেখি। আমি মনে করিনা এরা যা বলছে তাই তারা করছে। তাদের প্রত্যেক কাজের পেছনে সাব টেক্সট বা ইন্টেনশন আছে। তাই এদের সম্পর্কে আমি সাবধান থাকতে চাই। কিন্তু তাদের কে ধ্বংস করে দিতে বা খুন করতে চাইনা। আমি চাই আপনি তাকে খুন না করে সে যে গতিতে বা বলে তার কথা বলছে আপনিও তা করুন। আপনার কথার সেই পরিবেশ বা শক্তি না থাকলে তা গড়ে তুলুন। যে ন্যারেটিভের বিপক্ষে দাঁড়াবেন তা গণমানূষের কাছে গণ-মানুষের উপযোগ্য করে তুলে ধরুন। মানুষকে ডিসাইড করতে দিন। এরচেয়ে বেশি কিছু করতে আপনার ধর্মে আপনাকে বলেছে কি? খুঁজে দেখুন, আবার খুঁজুন। কাউকে খুন করলেই সেই সমাধান হয়ে যাবেনা। যেভাবে লাখ লাখ মুসলমানকে নির্যাতন করলে ইসলাম নাই হয়ে যাবে না। তেমনি যা আপনার কাছে ইসলামিক নয় তা শত-হাজার খুনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না। দেখুন এই রাষ্ট্র কিভাবে আপনার বিশ্বাস-ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ৫ বছর অন্তর অন্তর মাজার থেকে শুরু হয়, কেউ মাথায় পট্রি দেয়, কেউ হজ্জ করে, কেউ মাদ্রাসায় যায়, কেউ জমি দেয়, টাকা দেয়, ভয় দেখায়, পজিশন দেয়, অনুমোদন দেয়। এরা প্রত্যেকে ব্যবসায়ী আর ব্যবসায়ী কখনো কারও হয়না শুধু তাদের লাভের ছাড়া। তারা আর তাদের লাভের কাছে পরিবার, দেশ, সমাজ, ধর্ম বা প্রতিষ্ঠান সব গৌণ। এরা ফকিরের বেশে আমির।
এই অদ্ভুত সমাজ ঢাকঢোল পিটিয়ে গানবাজনা বাজীয়ে বিয়ে করতে পারে, হানিমুনে যেতে পারে, বাসর ঘর সাজাতে পারে, কিন্তু মহিলার পিরিয়ড নিয়ে কথা বললে তাদের শালীনতার অনুভূতিতে আঘাত লাগে! সরকারকে বাধ্য করতে পারেনা স্যানিটারি প্রোডাক্টকে ট্যাক্স ফ্রি করতে, ইজি টু এক্সেস করতে। তাদের নিজ মা-মেয়ে-বউ যা আলমোষ্ট হাফ অফ দেয়ার লাইফ প্রতিমাসে যা ব্যাবহার করে তার সচেতনতায় তাদের আপত্তি অপর দিকে যারা এসবের বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কাজ করেন তারা সমাজকে ডিসরিগার্ড করে করার দুঃস্বপ্ন দেখেন। কেন তারা আরও কেয়ারিং হতে পারলেন না? কেন তারা চিন্তা বিকাশের বা ব্যাক্ত করার ব্যালন্সিং করতে পারেননি? তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে বা এলিট ক্লাসের এই ভেবে কি তারা লেস কেয়ারিং হয়েছিলেন?
একটা ব্যার্থ রাষ্ট্রে যখন মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেনা, যেখানে ডাকাতি-লুটপাটের নজির বিহীন কান্ড ঘতে চলেছে, যেখানে গণ মানুষের নিরাপত্তা নেই, নিন্ম মানের শিক্ষা ব্যাবস্থা, সেখানে কি করে এমন একটি বিষয় জাতীয় বিতর্ক হয়ে উঠে!?
আপনারা আমরা লড়ে কাকে বিজয়ী করছি? আমরা কাদের জুয়ার তাসে পরিণত হচ্ছি? ভাবুন। লড়াইটি বিশ্বাস-অবিশ্বাসের নয়, আস্তিক-নাস্তিকের নয়, ইসলাম-অন্যানের নয়। এই লড়াই পাওয়ারের, ক্ষমতার। এখানে সবল আর দূর্বল আজ মুখোমুখি। আপনি মাঠ ছেড়েছেন তো নিশ্চিহ্ন হয়েছেন। হাসিনা তার মেয়ে বা ছেলেকে গদিতে বসানোর ধান্ধায়, আপনি তার কাছে নাম্বার ছাড়া কিছুই নয়। আইমান সাদিকরা শুধুই একেকটি মোহরা মাত্র (যদি হয়ে থাকে) । তাই চোখ খুলুন, প্রশ্ন করুন। ভাবুন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment