Monday 26 October 2015

অমিমাংসিত আলেয়ার ভ্রম...

পাড়ার মসজিদের মাইকে, ঈদে-চান্দে, শুক্রবারের দুপুরে কিংবা আমার ক্লাসে, সুরেলা কন্ঠের সিজনাল ওয়াজের দরাজ গলায় শুনেছি যেই গল্প আজ তা কথা প্রসঙ্গে সেলিব্রেটি এক ব্লগারের সাথে দোহরালাম... আগেও প্রশ্ন করেছি, মা বলতেন, বাবা আমার পারেনা এসব বলতে, আল্লাহ বেজার হন... আমার আব্বা আফসোস করতেন মানুষ হলাম না এই দুঃখে...ক্লাসের টিচার বলতেন, নাউজুবিল্লাহ। আর বাকি সবাই বলতেন, সব বিষয়ে প্রশ্ন করতে হয়না ! একদিন আল্লাহ মিয়া ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, আমি মানুষ বানাবো। ফেরেশতাগণ বললেন, হে পরোয়ারদেগার আপনি কি এমন প্রাণী বানাবেন যারা আগের সৃষ্টির মতো মারামারি কাটাকাটি করতো ?!

আল্লাহ বলেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। অতঃপর এক সময় মানুষের রুহ তৈরি করা হলো... এরপর আল্লাহ সমস্ত রুহদের উদ্দেশ্যে জানতে চাইলেন,
আলাছতা বি রাব্বিকুম ?

কোন কোন রুহ অস্বীকার করলো, আল্লাহ রাগান্বিত হলেন। তিনি রুহদের চিকিৎসা/শাস্তি দিলেন।
এরপর আবারো জানতে চাইলেন, আলাছতা বি রাব্বিকুম ?
এবারো আরো কিছু রুহ নাফরমানি করলো ! একই চিকিৎসা চলতে থাকলো যে পর্যন্ত তিনি শুনতে পেলেন না,

ক্বালু বালা...

প্রশ্ন...

মানুষের আগে কারা ছিলো? 


কোন গ্রহ বা দুনিয়ায় ছিলো? 


কেনো তাদের ধ্বংষ করে দেয়া হলো? 


তারা কি ছিলো ? 


সদ্য সৃষ্ট রুহ কিভাবে অকৃতজ্ঞ হয়ে আল্লাহকে অস্বীকার করলো? 


রুহ কে কি শাস্তি দেয়া হয়েছিলো? 


আল্লাহ কি জানতেন না তিনি ধোকা খাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও খাবেন? 

এরপর একদিন তিনি আদমের দেহ তৈরি করলেন। আদমের দেহ তৈরীর জন্য জিব্রাঈল পৃথিবী থেকে মাটি সংগ্রহ করতে পৃথিবীতে এসেছিলেন। আদমের দেহে প্রাণ দেয়ার পর তাঁকে সব জ্ঞান শিক্ষা দিলেন।
অতঃপর সমস্ত ফেরেশতাকুলকে নির্দেশ দিলেন আদমকে সেজদা করতে। সবাই সেই আদেশ পালন করলেন একমাত্র ইবলিশ অস্বীকার করলেন। আদম আর ইবলিশের মাঝে জ্ঞানের পরীক্ষা নেয়া হলো। আদম পাশ করে গেলেন।তবুও ইবলিশ আদমকে সেজদা করতে অস্বীকৃতি জানালো। এই নাফরমানি আল্লাহ নিতে পারলেন না। তিনি মনস্ত করলেন তাকে বেহেশত থেকে বের করে দিবেন। সেই সময় ইবলিশ আল্লাহর কাছে কিছু বর প্রার্থনা করলো।কি কি সেই বরদান...

১। কেয়ামত পর্যন্ত আয়ুষ্কাল।

২। মানুষের মনে দেহে কল্পনায় সর্বত্র গমনের ক্ষমতা।

৩। অদৃশ্য হবার ক্ষমতা।

প্রশ্ন...

ইবলিশ কে ? 

জীন সম্প্রদায় যখন আল্লাহর নাফরমানী করলো তখন তিনি ফেরেশতাদের পাঠিয়ে জীনদের জগত ধ্বংষ করান। ফেরেশতারা যখন তান্ডব চালাচ্ছিলেন তখন তারা এক শিশু জীনকে পেলেন, তখন তারা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন, তাঁর প্রাণ রক্ষার আবেদন করলেন। আল্লাহ ফেরেশতাদের অনুরোধ রাখলেন। সেই জীন শিশু ফেরেশতাদের সাথে থেকে থেকে এমন স্তরে পৌছলেন যে তিনি সকল ফেরেশতাদের সর্দার হলেন।

প্রশ্ন...

ফেরেশতাদের উপর নির্দেশ ছিলো জীন সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার, তারা কিভাবে জীন সন্তানকে রক্ষার আবেদন করেছিলেন ? তবে কি তারা আল্লাহর নাফরমানি করেছিলেন ? এই নাফরমানির জন্য কি ফেরেশতাদের শাস্তি হয়েছিলো ? 


ফেরেশতাদের কোন এখতিয়ার নেই তবে তারা কিভাবে কোন শিশুর মায়ায় পড়েন? 


ফেরেশতাদের মাঝে কি আবেগ, রাগ, ক্ষোভ, হিংসা, প্রতিযোগিতা আছে? 


ফেরেশতাদের মাঝে কি প্রমোশন ব্যাবসস্থা আছে ? যদি না থাকে তবে জীন শিশু কিভাবে সর্দার পদ লাভ করলো ? 


আল্লাহ কি জীন এই শিশুর ভবিষ্যত জানতেন না ? 


আল্লাহ কিভাবে নিজেকে পক্ষপাত দোষে দুষ্ট করলেন ? তিনি আদম কে সেই সব জ্ঞান দিলেন যা তিনি ইবলিশকে দেননি বা জানানি !!! 

ইবলিশ হলো শয়তান। নিক্ষেপিত হলো পৃথিবীতে। সমস্ত পৃথিবীতে সে একা।
অপর দিকে আদম বেহেসতে একা, তাঁর একাকিত্ব ভালো লাগেনা। আল্লাহ আদমের সঙ্গী করে হাওয়াকে সৃষ্টি করে বেহেশতে পাঠালেন।
আদম ও হাওয়ার জন্য অবারিত সুখ আর বিলাশের ব্যাবস্থা বেহেশতে শুধুমাত্র একটি নিষেধ, গন্ধম গাছের কাছে যাওয়া যাবেনা, গন্ধম খাওয়া যাবেনা। শয়তান অনেক চেষ্টা করে বেহেশতের ময়ূর ও সাপের সহযোগীতায় হাওয়াকে প্রলুব্ধ করতে সক্ষম হলো। হাওয়া শয়াতেনের ফাঁদে পড়লেন, গন্ধম খেলেন। তিনি আদমকেও খাওয়ালেন। হলো সর্বনাশ, তারা উভয়ে বেহেশত থেকে বিতাড়িত হলেন। উলঙ্গ হয়ে পৃথিবীতে নেমে আসেন।

প্রশ্ন...

বেহেশতে থাকা ময়ূর ও সাপেরও কি জীন বা মানুষের মতো স্বাধীন ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা ছিলো ? 


ময়ূর ও সাপের শাস্তি কি হয়েছিলো ? 


হাওয়া টু কাঊণ্ট অপরাধ করেছেন, যেখানে আদম হাওয়াকে অনুসরণ করেছেন কিন্তু আল্লাহর বেহেশতের সিকিউরিটি সিষ্টেম ব্রিচ করে শয়তান যে একসেস পেয়েছে তাঁর দায় কি আল্লাহর নেই ? 

আমি এসব গল্প শুনতে থাকি আর আমার প্রশ্ন বেড়েই চলে। সব সময় চেষ্টা করেছি অন্তত কৈশর পর্যন্ত প্রশ্নগুলো কে কিল করে সাম হাও জাষ্টিফাই করাতে...লাভ হয়নি। আমি পড়তে থাকি আর দেখতে থাকি চরম অসামঞ্জস্য। আল্লাহ সব জেনেও অতী নীচ ট্রিক তিনি করেন, তিনি পরম ভালোবেসে মানুষ বানান আবার ট্রিকারি করে বিচার পর্যন্ত নিয়ে যান এবং শেষ পরিণতি দোজখ বা বেহেশত ! কি প্রেমময়...

যে ইবলিশ এক ভুল করে জনমের জন্য বিতাড়িত সেখানে আদম-হাওয়া সেকেন্ড চান্স পেয়েছেন ! নিজের পক্ষপাত আর বিলাশ এবং স্বেচ্ছাচাড়িতা তাকে পরম শক্তিশালী খোদা বানালেও প্রেমময় করে তুলেনি।

যে পৌরানিক সাপ, ময়ুর আর শয়তানের গল্প আমরা শুনি সেই সাথে দোযখ-বেহেশতের কথা শুনে আসছি তা কতোটা অথেনটিক তা আমরা খুজে দেখিনা। প্রাচীণ সময় থেকে চলে আসা লোক গল্পগুলোতে একই রকম চরিত্রের যুগে যুগে চলে আসা আমায় সন্দিহান করে তোলে। আমি যখন দেখি ইব্রাহিমিক রিলিজিয়ন গুলোতে এই গ্লপ ঈষৎ পরিবর্তিত হয়ে বারবার আসছে তখন আমি বুঝি চমৎকার গল্পকার কোন মানুষের ব্রেনের চমক এই সব গল্পবাহার।

আমার মনে হয়েছে, শয়তান বা খোদা মানুষের মনের বুদ্ধিবৃত্তিক এক কম্পোজিশন। মানুষ যে কাজ করতে উৎসাহ বোধ করেনা কিংবা চায়না এমন কিছু ঘটুক তখন সে সেই ধরণের ভাবনা বা কাজকে শয়তানের লেবেল সেটে দেয়।

একট উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, যখন ইব্রাহিম তাঁর শিশু সন্তানকে বলি দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁর শিশু সন্তান ইসমাইল কেউই পুরোপুরি চাচ্ছিলেন না এমন বর্বর কাজে অংশ নিতে তাই শিশু থেমে যাচ্ছিলো অপর দিকে বাবা ইব্রাহিমের সুপারষ্টিশন তাকে প্ররোচিত করছিলো কিন্তু তাঁর মানবতা তাঁর বিবেকের অন্ধকারকে জয় করতে না পেরে এগিয়ে যেতে থাকলে যতো স্থানে তাঁর শিশু ছেলেটি থেমেছিলো তা শয়তানের বলে চালিয়ে দিয়েছিলেন। আজ যদি প্রশ্ন করা হয় কে আছেন এমন সুস্থ মানুষ যে তাঁর সন্তানকে আল্লাহর নামে বলি দিবেন ? উত্তর পেলেই বুঝবেন কি পরিমান অসুস্থ আর হাস্যকর বর্বর ভাবনা এটি ছিলো...যদিও পিতৃ হ্রদয় জয়ী হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ইব্রাহিম আর তাঁর বিকৃত ভাবনা কার্যকরী করেননি।

আপনারা কখনো ভেবেছেন কি কেন ইব্রাহিমিক রিলিজিয়ন কিংবা অন্যান্য দুনিয়ায় কেন তাদের সারাউন্ডিং এরিয়া ছাড়া আলোচনা নেই কেন ? কেন কোরআনে আমেরিকার কথা নেই, কেন ইন্ডিয়ার কথা নেই, অস্ট্রেলিয়ার কথা নেই ? কেন ভারতীয় ধর্ম গ্রন্থগুলোতে আরব, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া কিংবা আমেরিকার কথা নেই ? কেন ইউরোপিয়ান বিলিভ গুলোতে অন্যান্য অঞ্চলের কোন জিকির নেই ? এখানেই শেষ নয়, দেখবেন আরব বা আফ্রিকার বাইরে কোন নবী বা দেবতাঁর জন্মের গল্প নেই... অপর দিকে মানুষ তাঁর ভাবনায় যখন লজিক্যাল কমফোর্টের জন্য খোদা ভাবনার জন্ম দিলো তখন তারা তাদের প্রয়োজন মতো ঈশ্বর সৃষ্টি করে নিয়েছে। এরপর আরো কিছু বুদ্ধিমান মানুষ সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সিষ্টেমেটিক রিলিজিয়াস ইন্সটিটিউশন্স আর উপাস্যের ধারণাকে ডেবেলপ করে, সেই থেকে ধর্ম এগিয়ে গেছে। যখনই মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক সীমাবদ্ধতায় হেরেছে সে নতুন কোন ঈশ্বরের জন্ম দিয়েছে...

প্রশ্ন বাড়তেই থাকে আর আমাদের সমাজ আমাদের প্রশ্ন না করার গুঢ় স্বার্থ বুঝাতে ক্লান্ত হতে থাকে।

তবে আমরা জেনে গেছি, বাচতে হলে জানতে হবে আর জানতে হলে প্রশ্ন করতে হবে...

No comments:

Post a Comment